ভারতের বেসরকারি খাতের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রুপ নবি মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দ্বিতীয় টার্মিনাল নির্মাণে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বিশাল তহবিল সংগ্রহ পরিকল্পনা করেছে। এর মাধ্যমে দেশের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের এক নতুন অধ্যায় সূচিত হতে চলেছে।
ভূমিকা: চার বছরের মধ্যে দ্বিতীয় টার্মিনাল চালুর লক্ষ্য
আদানি গ্রুপ নবি মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (NMIA) দ্বিতীয় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। এই বিশাল অর্থায়নের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (SBI), এইচডিএফসি ব্যাংক, সিঙ্গাপুরের টেমাসেক হোল্ডিংস, এবং জাপানের মিতসুবিশি ইউএফজে ফিনান্সিয়াল গ্রুপ (MUFG) ও মিজুহো ফিনান্সিয়াল গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বুধবার বিমানবন্দরের প্রথম টার্মিনাল উদ্বোধন করেন। দ্বিতীয় টার্মিনালটি ২০২৯ সালের মধ্যে চালু হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
তহবিল সংগ্রহের কাঠামো: ঋণ ও প্রমোটর ইকুইটির মিশ্রণ
আদানি এয়ারপোর্ট হোল্ডিংস লিমিটেড (AAHL), যা আদানি এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেডের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান, মূলত ঋণের মাধ্যমে এই তহবিল সংগ্রহ করবে। প্রমোটরদের পক্ষ থেকেও কিছু ইকুইটি বিনিয়োগ আসবে।
প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা (প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার) আগামী ছয় মাসের মধ্যে এবং বাকি অর্থ পরবর্তী ১২–১৮ মাসে সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে।
একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “তহবিলের বড় অংশই ভারতীয় ও জাপানি ব্যাংকের ঋণ হবে। আয় উৎস এবং বিমানবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হলে এর ওপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
নবি মুম্বাই বিমানবন্দরের পরিসর ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
প্রথম টার্মিনালটি নির্মিত হয়েছে প্রায় ১৯,৪৬৪ কোটি টাকায়, যা মূলত ঋণ নির্ভর। এই টার্মিনাল বছরে প্রায় ২ কোটি যাত্রী বহন করতে সক্ষম। দ্বিতীয় টার্মিনালের আনুমানিক ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং এটি বছরে ৩ কোটি যাত্রী সামলাতে পারবে।
নতুন টার্মিনালটি প্রায় ৪ লাখ বর্গমিটার জায়গাজুড়ে নির্মিত হবে, যেখানে প্রথম টার্মিনালের আয়তন ২.৩৪ লাখ বর্গমিটার। বিমানবন্দরের পূর্ণাঙ্গ প্রকল্পে চারটি টার্মিনাল ও দুটি সমান্তরাল রানওয়ে থাকবে, যা সম্পন্ন হলে বছরে ৯ কোটি যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা তৈরি হবে।
নতুন বিমানবন্দর বেসরকারীকরণে সরকারের উদ্যোগ
ভারত সরকার আগামী এক বছরের মধ্যে আরও ১১টি রাষ্ট্রায়ত্ত বিমানবন্দর বেসরকারীকরণের পরিকল্পনা নিয়েছে। এই প্রকল্পগুলো সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (PPP) ভিত্তিতে পরিচালিত হবে।
SBI আগেও AAHL-এর প্রথম ধাপের ঋণদাতা কনসোর্টিয়ামের অংশ ছিল। এবারও আদানি গ্রুপ একই ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এছাড়া HDFC ব্যাংকের সঙ্গেও নতুন করে আলোচনা চলছে।
জাপানি ব্যাংকের আগ্রহ ও আগের ঋণ চুক্তি
২০২৫ সালের জুলাইয়ে AAHL, MUFG ব্যাংকের সঙ্গে ১৫০ মিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক ঋণ চুক্তির বিষয়ে অগ্রসর পর্যায়ের আলোচনায় ছিল। MUFG পূর্বেও আদানির অন্যান্য প্রকল্পে ঋণ দিয়েছে, যেমন বন্দর ও বিমানবন্দর খাতে। মিজুহো ফিনান্সিয়াল গ্রুপও একইভাবে আদানি ইউনিটগুলোতে অর্থায়ন করেছে।
২০২২ সালের মার্চে প্রথম টার্মিনালের আর্থিক সমাপ্তি ঘোষণার সময় আদানি এন্টারপ্রাইজেস জানিয়েছিল, তারা ১২,৭৭০ কোটি টাকার ঋণ সম্পন্ন করেছে, যা সম্পূর্ণভাবে এসবিআইয়ের তত্ত্বাবধানে ছিল।
দেশীয় ব্যাংকের ওপর আদানির নির্ভরতা বেড়েছে
গত দুই বছরে আন্তর্জাতিক ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের পরিবর্তে আদানি গ্রুপ ক্রমে দেশীয় ব্যাংকের ওপর বেশি নির্ভর করছে।
২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত আদানি গ্রুপের দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর মূলধনী ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ১.৩৬ লাখ কোটি টাকা, যার অর্ধেকেরও বেশি দেশীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া। দুই বছর আগে এই হার ছিল মাত্র ২৮ শতাংশ।
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি ও নতুন অধিগ্রহণ
আদানি গ্রুপ আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে AAHL-কে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করার পরিকল্পনা করছে। বর্তমানে সংস্থাটি ভারতের আটটি বিমানবন্দর পরিচালনা করে, যার মধ্যে নবি মুম্বাই অন্যতম।
গ্রুপটি ভারত সরকারের পরবর্তী বেসরকারীকরণ পর্যায়ে আরও তিন থেকে চারটি বিমানবন্দর অধিগ্রহণের আশাবাদী।
অবকাঠামো বিনিয়োগে নতুন অধ্যায়
আদানি গ্রুপের এই বিশাল তহবিল সংগ্রহ প্রচেষ্টা ভারতের অবকাঠামো খাতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। নবি মুম্বাই বিমানবন্দর শুধু একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার আকাশপথে ভারতের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করার এক কৌশলগত পদক্ষেপ।
#NMIA #AdaniGroup #NaviMumbaiAirport #InfrastructureInvestment #AviationIndia #SBI #Temasek #MitsubishiUFJ #Mizuho #HDFCBank #AdaniAirports #সারাক্ষণরিপোর্ট