০১:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
চীনে এনবিএর প্রত্যাবর্তন: ম্যাকাওতে প্রাক-মৌসুমে নেটস–সানস, সম্পর্কের নতুন অধ্যায় আদানি গ্রুপের নতুন উদ্যোগ: নবি মুম্বাই বিমানবন্দরের দ্বিতীয় টার্মিনাল নির্মাণ ইংল্যান্ডের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় ‘ভুলে যাওয়া রাজা অ্যাথেলস্টানকে শ্রদ্ধা জানাতে শত মাইলের নতুন ভ্রমণ পথ ‘ দেশের হারিয়ে যাওয়া লাল ডাকবাক্স: ডিজিটাল যুগে বিলুপ্ত চিঠির স্মৃতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩৩) শরৎ বাধা পেল, বসন্ত কি আসতে পারবে? মোদী-ট্রাম্প বৈঠক: ভারতের জন্য নতুন সম্ভাবনা ইসরাইল ও হামাস কী কী ছাড় দিয়েছে গাজায় বন্দি–যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে? সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের খ্যাতি ছিল একাধারে শিক্ষক, লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সরেজমিন খাগড়াছড়ি: একদিকে ক্ষোভ-আতঙ্ক, আরেকদিকে নজরদারি

ইসরাইল ও হামাস কী কী ছাড় দিয়েছে গাজায় বন্দি–যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে?

বর্তমান ইসরাইল–হামাস চুক্তি যদি স্থায়ী হয় এবং যুদ্ধ সত্যিই শেষ হয়ে যায়, তাহলে যুদ্ধবিরতির মূল চাবিকাঠি ছিল উভয় পক্ষের নতুন ছাড় এবং সামরিক কৌশলগত বিষয়ে সমন্বিত ক্রমবিন্যাস।

যুদ্ধ শেষ করার চূড়ান্ত ধাপটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন—ইসরাইল ও হামাস উভয়ের আগের অবস্থান থেকে, যেমন ২০২৪ সালের গ্রীষ্ম বা ২০২৫ সালের শুরুর দিকের পরিস্থিতিতে যেখানে যুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

কাতার, তুরস্ক এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয় পক্ষের ওপর নতুন মাত্রার চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। সময়সূচি ও ছাড়-বিনিময়ের তালিকা থেকে বোঝা যায়, উভয় পক্ষই এমন ছাড় দিয়েছে যা তারা আগের পর্যায়ে দেয়নি, যদিও সামগ্রিকভাবে ইসরাইলের প্রভাব ও কৌশলগত সুবিধা বেশি ছিল।

ইসরাইলের আগ্নেয়াগাতা বন্ধের ছাড়

যদিও এ নিয়ে বেশি আলোচনা হয়নি, ইসরাইল শনিবার থেকে বোমাবর্ষণ ও গুলি বন্ধ করে দেয়, এবং বিনিময়ে কোনো বাস্তব নিশ্চয়তা পায়নি। প্রকৃতপক্ষে, ইসরাইলের এই আগ্নেয়াগাতা বন্ধ রাখার অবস্থা, যেখানে কোনো প্রতিদান ছিল না, টানা পাঁচ দিন ধরে চলেছিল বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত।

আরও গুরুত্বপূর্ণ, যদি প্রথম বন্দিরা সোমবার ফিরে আসে, তবে ইসরাইল হামাসকে আক্রমণ না করেই নয় দিন সময় দিয়েছে—বন্দি ফেরত আসার আগে পর্যন্ত। অতীতে বন্দি-বিনিময় আলোচনায় ইসরাইলের অবস্থান ছিল, হামাস একটি নির্দিষ্ট সময়সূচির অধীনে বন্দি ফেরতের চুক্তি না করলে তারা যুদ্ধবিরতিতে যাবে না। সাধারণত এই সময়সূচি যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শুরু হতো।

খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত নেতানিয়াহু

প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বারবার বলেছিলেন, হামাস যদি স্পষ্ট ছাড় না দেয়, তিনি আগ্নেয়াগাতা বন্ধ করবেন না—কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের নির্দেশে এই অবস্থান বদলান তিনি।

হামাসের বড় ছাড়: একসঙ্গে সব বন্দি মুক্তি

ইসরাইলের প্রথম ছাড় সত্ত্বেও, হামাসের ছাড় ছিল আরও বড় ও তাৎপর্যপূর্ণ। আগের আলোচনাগুলোতে হামাস নেতারা সাধারণত কিছু বন্দিকে জিম্মা হিসেবে রেখে দিতেন, নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বা ইসরাইলকে গাজা থেকে পুরোপুরি প্রত্যাহারে বাধ্য করতে।

কিন্তু এবার কাতার, তুরস্ক ও মিশর—ট্রাম্পের সহায়তায়—হামাসকে নির্দেশ দিয়েছে যেন তারা সব বন্দি একসঙ্গে মুক্তি দেয়। এর বিনিময়ে ইসরাইল আংশিকভাবে গাজা থেকে সেনা সরিয়ে নেবে, আর ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দেবেন যে যুদ্ধ পুনরায় শুরু হবে না।

সব জীবিত বন্দি একসঙ্গে মুক্তি দেওয়া হামাসের সবচেয়ে বড় “আস কার্ড” হারানোর সমান। এটি সেই সুবিধা, যা তাদের ইরান, হিজবুল্লাহ বা সিরিয়ার চেয়ে কৌশলগতভাবে শক্তিশালী অবস্থানে রেখেছিল।

ইসরাইল হামাসের নেতাদের হত্যা করলেও বেঁচে থাকা নেতাদের বহিষ্কার দাবি করেনি

এই অংশটিকে আংশিকভাবে ড্র বলা যেতে পারে। যুদ্ধজুড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল—অক্টোবর ৭ আক্রমণের পরিকল্পনাকারীদের পরিণতি কী হবে? ইসরাইল কি তাদের গাজায় থাকতে দেবে, নাকি তাড়িয়ে দেবে?

প্রাথমিকভাবে ধারণা ছিল, তাদের নির্বাসিত করা হবে। কিন্তু গাজার নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও মোহাম্মদ ডেইফ, এবং বিকল্প নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ারসহ অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন।

হামাস বলেছে তাদেরকে নির্মূলের ইসরায়েলের লক্ষ্য 'ব্যর্থ হবে' | আন্তর্জাতিক | বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

অবশেষে, তাদের প্রায় সবাইকে হত্যা করা হয়। ডেইফ নিহত হন ২০২৪ সালের জুলাইয়ে, ইয়াহিয়া সিনওয়ার অক্টোবর ২০২৪-এ, মোহাম্মদ সিনওয়ার ২০২৫ সালের মে মাসে। এছাড়া মারওয়ান ইসা, ইসমাইল হানিয়া, চারজন ব্রিগেড কমান্ডার এবং প্রায় সব ২৪ ব্যাটালিয়ন কমান্ডারও নিহত হয়েছে।

গাজায় এখন জীবিত আছেন কেবল গাজা সিটি ব্রিগেড কমান্ডার ইজ্জ আল–দীন হাদাদ (বর্তমানে হামাসের সামরিক প্রধান) এবং সিনিয়র কর্মকর্তা রায়েদ সা‘দ। যদিও পূর্বে হামাসের সব নেতাকে প্রস্থান করানোর প্রতিশ্রুতি ছিল, এখন মনে হচ্ছে বেঁচে থাকা অল্প কয়েকজন গাজাতেই থাকতে পারবে। ইসরাইল হয়তো কেবল কিছু প্রতীকী কর্মকর্তাকে নির্বাসনের নির্দেশ দিতে পারে।

এই অবস্থাকে আংশিক ড্র বলা যায়। তবে অধিকাংশ নেতাকে হত্যা করার মাধ্যমে ইসরাইল নিঃসন্দেহে কৌশলগত সুবিধা অর্জন করেছে।

সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ ছাড়াই যুদ্ধের সমাপ্তি

এটি ইসরাইলের দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে বড় ছাড়। যুদ্ধের শুরুতে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, হামাস “সম্পূর্ণ ধ্বংস” না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে। পরে তিনি লক্ষ্য পরিবর্তন করে বলেন, “হামাসকে পুরোপুরি অস্ত্রহীন করা হবে।” এখন কেউই বিশ্বাস করে না যে হামাস সম্পূর্ণভাবে অস্ত্রহীন হয়েছে।

ধারণা করা হয়, হামাসের কঠোর যোদ্ধা প্রায় ২,০০০–২,৫০০ জন, আর কম প্রশিক্ষিত সম্ভাব্য যোদ্ধা প্রায় ২০,০০০ জন। এছাড়া প্রায় সাত লাখ গাজার বাসিন্দা কোনো না কোনোভাবে হামাসের সঙ্গে মতাদর্শ বা গোষ্ঠীগতভাবে যুক্ত।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র না হওয়া পর্যন্ত নিরস্ত্রীকরণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হামাসের - BBC News বাংলা

তবে ২০২৪ সালের আগস্টের মধ্যেই হামাসের সব ২৪টি ব্যাটালিয়ন সামরিকভাবে পরাজিত হয়েছিল। বর্তমানে কোনো সংগঠিত হামাস বাহিনী নেই, শুধু ছোট ছোট গেরিলা সেল কার্যক্রম চালাচ্ছে।

গত দুই মাসে এই সেলগুলো সীমিত কিছু ইসরাইলি পোস্টে হামলা চালিয়ে ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে, কিন্তু তাদের ক্ষমতা গাজা সীমান্ত অতিক্রমের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। গাজা সীমান্তবর্তী এলাকায় তারা মাঝে মাঝে ছোট রকেট নিক্ষেপ করছে, যা সাধারণত প্রাণহানির কারণ হচ্ছে না।

অতএব, হামাসের অবশিষ্ট শক্তি আগামী কয়েক বছরে বড় আকারের আক্রমণ চালাতে পারবে না—যদিও গাজায় কিছু বিপজ্জনক ব্যক্তি রয়ে গেছে, যারা ভবিষ্যতে আবার সংগঠিত হতে পারে।

হামাসের আংশিক ইসরাইলি প্রত্যাহার মেনে নেওয়া

এটি হামাসের দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে বড় ছাড়। তারা বন্দি ফেরত দেওয়ার আগে পূর্ণ ইসরাইলি প্রত্যাহারের দাবি থেকে সরে এসেছে। বরং এখন তারা মেনে নিয়েছে যে, যুদ্ধ শেষ হলেও ইসরাইল কিছু নিরাপত্তা অঞ্চল ধরে রাখবে।

বন্দি ফেরত দেওয়া ইসরাইলকে কূটনৈতিকভাবে প্রভাবশালী করেছে। ট্রাম্প আশ্বাস দিয়েছেন, বন্দি ফেরত আসার পর জেরুসালেম যুদ্ধ পুনরায় শুরু করবে না। তবে কোনো পর্যায়েই পূর্ণ প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। যুদ্ধ শেষে ইসরাইল কতটুকু এলাকা ছাড়বে এবং গাজার প্রশাসন কেমন হবে—তা এখনও অস্পষ্ট।

বিভিন্ন প্রস্তাব অনুযায়ী, ইসরাইল গাজার ৩ থেকে ৩.৫ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত একটি নিরাপত্তা বলয় বজায় রাখতে পারে—যা গাজার প্রায় অর্ধেক এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ দেবে, যদিও জনবসতিপূর্ণ এলাকা তার বাইরে থাকবে।

IDF operates in Gaza, September 29, 2025. (credit: IDF SPOKESPERSON UNIT)

আরও সংক্ষিপ্ত প্রস্তাব অনুযায়ী, জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির মতো ৭০০–১,১০০ মিটার প্রত্যাহার লাইনও বিবেচনায় রয়েছে। সীমান্তবর্তী ফিলাডেলফিয়া করিডর নিয়ে এখনও প্রশ্ন আছে, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—ইসরাইল কি যুদ্ধ-পরবর্তী সময়েও নিরাপত্তা বলয় রাখবে এবং সেটি কতটা কার্যকর হবে।

এই বলয় ভবিষ্যতে হামাসের পুনরুত্থান বা গাজা দখলের প্রচেষ্টা প্রতিরোধে ইসরাইলকে কৌশলগত সুবিধা দেবে।

যুদ্ধ-পরবর্তী অভিযানে IDF-এর ভূমিকা

যুদ্ধ শেষের পর ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) গাজায় ছোট পরিসরের অভিযান বা নির্দিষ্ট ড্রোন হামলা চালাতে পারবে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়। যদি ট্রাম্প ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট শক্তি এতে সম্মতি দেন, তাহলে প্রশ্ন থাকে—কতদূর পর্যন্ত হামাসের কার্যকলাপ চলতে দিলে IDF ব্যবস্থা নিতে পারবে?

নতুন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী (ISF) বা অন্যান্য শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভূমিকা কী হবে, তারও স্পষ্টতা নেই। তারা হামাসের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়াবে কি না, সেটিও অজানা। ফাতাহ–সংযুক্ত ফিলিস্তিনিদের এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও ২০০৭ সালে গাজা থেকে তাদের উৎখাত করা হয়েছিল।

আরেকটি প্রশ্ন হলো—যদি ISF হামাসের হামলার মুখে পড়ে, তখন কি IDF হস্তক্ষেপ করতে পারবে? ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র জেরুসালেমকে এমন হস্তক্ষেপ থেকে বিরত রেখেছিল। ফলে এই বিষয়টিও আংশিকভাবে ড্র বলা যেতে পারে, যদিও ইসরাইল এখনো যুদ্ধ-পরবর্তী সীমিত অভিযান চালানোর সম্ভাবনা খোলা রেখেছে।

Trump Achieves Breakthrough Gaza Ceasefire, but a Tough Road Lies Ahead | Council on Foreign Relations

যুদ্ধবিরতির পর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ

এখনও স্পষ্ট নয়, যুদ্ধবিরতির পর গাজা রাজনৈতিকভাবে কে পরিচালনা করবে। কথিত “গাজা আন্তর্জাতিক অস্থায়ী কর্তৃপক্ষ” (GITA) বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা দেশসমূহ, আরব মিত্র ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ মিলে প্রায় সাত লাখ হামাস–সংলগ্ন গাজার মানুষকে রাজনৈতিকভাবে হামাস থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে কি না, সেটি বড় প্রশ্ন।

গাজা এখন সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া গাজার জনগণের ধৈর্য পরীক্ষা নেবে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে—ইসরাইল কি এই যুদ্ধের সমাপ্তির বিনিময়ে সৌদি আরবের সঙ্গে কূটনৈতিক স্বাভাবিকীকরণ অর্জন করতে পারবে? ২০২৪ সালে যে প্রস্তাবটি ছিল, এখন তা অনিশ্চিত।

ইতিহাসের প্রশ্ন: চুক্তিটি কি আগেই সম্ভব ছিল?

শেষ প্রশ্নটি হচ্ছে—এই চুক্তি কি আরও আগেই করা যেত? ইতিহাসবিদরা হয়তো বছরের পর বছর ধরে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবেন। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালের গ্রীষ্ম বা ২০২৫ সালের শুরুতেও হামাস একই শর্তে রাজি হতে পারত।

নেতানিয়াহুর সমালোচকরা বলছেন, তিনি যুদ্ধ টেনে রেখেছিলেন কেবল তার সরকার টিকে রাখার জন্য। তবে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা দাবি করেন, সে সময় ইসরাইল নিরাপত্তা বলয় রাখতে পারত না এবং হামাস তখনও কিছু বন্দিকে ধরে রাখত—যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও।
এখন যেহেতু সেই সিদ্ধান্তগ্রহণকারীরা আর জীবিত নেই, সত্যিকারের উত্তর হয়তো কখনোই জানা যাবে না।

জনপ্রিয় সংবাদ

চীনে এনবিএর প্রত্যাবর্তন: ম্যাকাওতে প্রাক-মৌসুমে নেটস–সানস, সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

ইসরাইল ও হামাস কী কী ছাড় দিয়েছে গাজায় বন্দি–যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে?

০৭:৩০:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

বর্তমান ইসরাইল–হামাস চুক্তি যদি স্থায়ী হয় এবং যুদ্ধ সত্যিই শেষ হয়ে যায়, তাহলে যুদ্ধবিরতির মূল চাবিকাঠি ছিল উভয় পক্ষের নতুন ছাড় এবং সামরিক কৌশলগত বিষয়ে সমন্বিত ক্রমবিন্যাস।

যুদ্ধ শেষ করার চূড়ান্ত ধাপটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন—ইসরাইল ও হামাস উভয়ের আগের অবস্থান থেকে, যেমন ২০২৪ সালের গ্রীষ্ম বা ২০২৫ সালের শুরুর দিকের পরিস্থিতিতে যেখানে যুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

কাতার, তুরস্ক এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয় পক্ষের ওপর নতুন মাত্রার চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। সময়সূচি ও ছাড়-বিনিময়ের তালিকা থেকে বোঝা যায়, উভয় পক্ষই এমন ছাড় দিয়েছে যা তারা আগের পর্যায়ে দেয়নি, যদিও সামগ্রিকভাবে ইসরাইলের প্রভাব ও কৌশলগত সুবিধা বেশি ছিল।

ইসরাইলের আগ্নেয়াগাতা বন্ধের ছাড়

যদিও এ নিয়ে বেশি আলোচনা হয়নি, ইসরাইল শনিবার থেকে বোমাবর্ষণ ও গুলি বন্ধ করে দেয়, এবং বিনিময়ে কোনো বাস্তব নিশ্চয়তা পায়নি। প্রকৃতপক্ষে, ইসরাইলের এই আগ্নেয়াগাতা বন্ধ রাখার অবস্থা, যেখানে কোনো প্রতিদান ছিল না, টানা পাঁচ দিন ধরে চলেছিল বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত।

আরও গুরুত্বপূর্ণ, যদি প্রথম বন্দিরা সোমবার ফিরে আসে, তবে ইসরাইল হামাসকে আক্রমণ না করেই নয় দিন সময় দিয়েছে—বন্দি ফেরত আসার আগে পর্যন্ত। অতীতে বন্দি-বিনিময় আলোচনায় ইসরাইলের অবস্থান ছিল, হামাস একটি নির্দিষ্ট সময়সূচির অধীনে বন্দি ফেরতের চুক্তি না করলে তারা যুদ্ধবিরতিতে যাবে না। সাধারণত এই সময়সূচি যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শুরু হতো।

খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত নেতানিয়াহু

প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বারবার বলেছিলেন, হামাস যদি স্পষ্ট ছাড় না দেয়, তিনি আগ্নেয়াগাতা বন্ধ করবেন না—কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের নির্দেশে এই অবস্থান বদলান তিনি।

হামাসের বড় ছাড়: একসঙ্গে সব বন্দি মুক্তি

ইসরাইলের প্রথম ছাড় সত্ত্বেও, হামাসের ছাড় ছিল আরও বড় ও তাৎপর্যপূর্ণ। আগের আলোচনাগুলোতে হামাস নেতারা সাধারণত কিছু বন্দিকে জিম্মা হিসেবে রেখে দিতেন, নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বা ইসরাইলকে গাজা থেকে পুরোপুরি প্রত্যাহারে বাধ্য করতে।

কিন্তু এবার কাতার, তুরস্ক ও মিশর—ট্রাম্পের সহায়তায়—হামাসকে নির্দেশ দিয়েছে যেন তারা সব বন্দি একসঙ্গে মুক্তি দেয়। এর বিনিময়ে ইসরাইল আংশিকভাবে গাজা থেকে সেনা সরিয়ে নেবে, আর ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দেবেন যে যুদ্ধ পুনরায় শুরু হবে না।

সব জীবিত বন্দি একসঙ্গে মুক্তি দেওয়া হামাসের সবচেয়ে বড় “আস কার্ড” হারানোর সমান। এটি সেই সুবিধা, যা তাদের ইরান, হিজবুল্লাহ বা সিরিয়ার চেয়ে কৌশলগতভাবে শক্তিশালী অবস্থানে রেখেছিল।

ইসরাইল হামাসের নেতাদের হত্যা করলেও বেঁচে থাকা নেতাদের বহিষ্কার দাবি করেনি

এই অংশটিকে আংশিকভাবে ড্র বলা যেতে পারে। যুদ্ধজুড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল—অক্টোবর ৭ আক্রমণের পরিকল্পনাকারীদের পরিণতি কী হবে? ইসরাইল কি তাদের গাজায় থাকতে দেবে, নাকি তাড়িয়ে দেবে?

প্রাথমিকভাবে ধারণা ছিল, তাদের নির্বাসিত করা হবে। কিন্তু গাজার নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও মোহাম্মদ ডেইফ, এবং বিকল্প নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ারসহ অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন।

হামাস বলেছে তাদেরকে নির্মূলের ইসরায়েলের লক্ষ্য 'ব্যর্থ হবে' | আন্তর্জাতিক | বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

অবশেষে, তাদের প্রায় সবাইকে হত্যা করা হয়। ডেইফ নিহত হন ২০২৪ সালের জুলাইয়ে, ইয়াহিয়া সিনওয়ার অক্টোবর ২০২৪-এ, মোহাম্মদ সিনওয়ার ২০২৫ সালের মে মাসে। এছাড়া মারওয়ান ইসা, ইসমাইল হানিয়া, চারজন ব্রিগেড কমান্ডার এবং প্রায় সব ২৪ ব্যাটালিয়ন কমান্ডারও নিহত হয়েছে।

গাজায় এখন জীবিত আছেন কেবল গাজা সিটি ব্রিগেড কমান্ডার ইজ্জ আল–দীন হাদাদ (বর্তমানে হামাসের সামরিক প্রধান) এবং সিনিয়র কর্মকর্তা রায়েদ সা‘দ। যদিও পূর্বে হামাসের সব নেতাকে প্রস্থান করানোর প্রতিশ্রুতি ছিল, এখন মনে হচ্ছে বেঁচে থাকা অল্প কয়েকজন গাজাতেই থাকতে পারবে। ইসরাইল হয়তো কেবল কিছু প্রতীকী কর্মকর্তাকে নির্বাসনের নির্দেশ দিতে পারে।

এই অবস্থাকে আংশিক ড্র বলা যায়। তবে অধিকাংশ নেতাকে হত্যা করার মাধ্যমে ইসরাইল নিঃসন্দেহে কৌশলগত সুবিধা অর্জন করেছে।

সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ ছাড়াই যুদ্ধের সমাপ্তি

এটি ইসরাইলের দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে বড় ছাড়। যুদ্ধের শুরুতে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, হামাস “সম্পূর্ণ ধ্বংস” না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে। পরে তিনি লক্ষ্য পরিবর্তন করে বলেন, “হামাসকে পুরোপুরি অস্ত্রহীন করা হবে।” এখন কেউই বিশ্বাস করে না যে হামাস সম্পূর্ণভাবে অস্ত্রহীন হয়েছে।

ধারণা করা হয়, হামাসের কঠোর যোদ্ধা প্রায় ২,০০০–২,৫০০ জন, আর কম প্রশিক্ষিত সম্ভাব্য যোদ্ধা প্রায় ২০,০০০ জন। এছাড়া প্রায় সাত লাখ গাজার বাসিন্দা কোনো না কোনোভাবে হামাসের সঙ্গে মতাদর্শ বা গোষ্ঠীগতভাবে যুক্ত।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র না হওয়া পর্যন্ত নিরস্ত্রীকরণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হামাসের - BBC News বাংলা

তবে ২০২৪ সালের আগস্টের মধ্যেই হামাসের সব ২৪টি ব্যাটালিয়ন সামরিকভাবে পরাজিত হয়েছিল। বর্তমানে কোনো সংগঠিত হামাস বাহিনী নেই, শুধু ছোট ছোট গেরিলা সেল কার্যক্রম চালাচ্ছে।

গত দুই মাসে এই সেলগুলো সীমিত কিছু ইসরাইলি পোস্টে হামলা চালিয়ে ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে, কিন্তু তাদের ক্ষমতা গাজা সীমান্ত অতিক্রমের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। গাজা সীমান্তবর্তী এলাকায় তারা মাঝে মাঝে ছোট রকেট নিক্ষেপ করছে, যা সাধারণত প্রাণহানির কারণ হচ্ছে না।

অতএব, হামাসের অবশিষ্ট শক্তি আগামী কয়েক বছরে বড় আকারের আক্রমণ চালাতে পারবে না—যদিও গাজায় কিছু বিপজ্জনক ব্যক্তি রয়ে গেছে, যারা ভবিষ্যতে আবার সংগঠিত হতে পারে।

হামাসের আংশিক ইসরাইলি প্রত্যাহার মেনে নেওয়া

এটি হামাসের দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে বড় ছাড়। তারা বন্দি ফেরত দেওয়ার আগে পূর্ণ ইসরাইলি প্রত্যাহারের দাবি থেকে সরে এসেছে। বরং এখন তারা মেনে নিয়েছে যে, যুদ্ধ শেষ হলেও ইসরাইল কিছু নিরাপত্তা অঞ্চল ধরে রাখবে।

বন্দি ফেরত দেওয়া ইসরাইলকে কূটনৈতিকভাবে প্রভাবশালী করেছে। ট্রাম্প আশ্বাস দিয়েছেন, বন্দি ফেরত আসার পর জেরুসালেম যুদ্ধ পুনরায় শুরু করবে না। তবে কোনো পর্যায়েই পূর্ণ প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। যুদ্ধ শেষে ইসরাইল কতটুকু এলাকা ছাড়বে এবং গাজার প্রশাসন কেমন হবে—তা এখনও অস্পষ্ট।

বিভিন্ন প্রস্তাব অনুযায়ী, ইসরাইল গাজার ৩ থেকে ৩.৫ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত একটি নিরাপত্তা বলয় বজায় রাখতে পারে—যা গাজার প্রায় অর্ধেক এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ দেবে, যদিও জনবসতিপূর্ণ এলাকা তার বাইরে থাকবে।

IDF operates in Gaza, September 29, 2025. (credit: IDF SPOKESPERSON UNIT)

আরও সংক্ষিপ্ত প্রস্তাব অনুযায়ী, জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির মতো ৭০০–১,১০০ মিটার প্রত্যাহার লাইনও বিবেচনায় রয়েছে। সীমান্তবর্তী ফিলাডেলফিয়া করিডর নিয়ে এখনও প্রশ্ন আছে, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—ইসরাইল কি যুদ্ধ-পরবর্তী সময়েও নিরাপত্তা বলয় রাখবে এবং সেটি কতটা কার্যকর হবে।

এই বলয় ভবিষ্যতে হামাসের পুনরুত্থান বা গাজা দখলের প্রচেষ্টা প্রতিরোধে ইসরাইলকে কৌশলগত সুবিধা দেবে।

যুদ্ধ-পরবর্তী অভিযানে IDF-এর ভূমিকা

যুদ্ধ শেষের পর ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) গাজায় ছোট পরিসরের অভিযান বা নির্দিষ্ট ড্রোন হামলা চালাতে পারবে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়। যদি ট্রাম্প ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট শক্তি এতে সম্মতি দেন, তাহলে প্রশ্ন থাকে—কতদূর পর্যন্ত হামাসের কার্যকলাপ চলতে দিলে IDF ব্যবস্থা নিতে পারবে?

নতুন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনী (ISF) বা অন্যান্য শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভূমিকা কী হবে, তারও স্পষ্টতা নেই। তারা হামাসের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়াবে কি না, সেটিও অজানা। ফাতাহ–সংযুক্ত ফিলিস্তিনিদের এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও ২০০৭ সালে গাজা থেকে তাদের উৎখাত করা হয়েছিল।

আরেকটি প্রশ্ন হলো—যদি ISF হামাসের হামলার মুখে পড়ে, তখন কি IDF হস্তক্ষেপ করতে পারবে? ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র জেরুসালেমকে এমন হস্তক্ষেপ থেকে বিরত রেখেছিল। ফলে এই বিষয়টিও আংশিকভাবে ড্র বলা যেতে পারে, যদিও ইসরাইল এখনো যুদ্ধ-পরবর্তী সীমিত অভিযান চালানোর সম্ভাবনা খোলা রেখেছে।

Trump Achieves Breakthrough Gaza Ceasefire, but a Tough Road Lies Ahead | Council on Foreign Relations

যুদ্ধবিরতির পর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ

এখনও স্পষ্ট নয়, যুদ্ধবিরতির পর গাজা রাজনৈতিকভাবে কে পরিচালনা করবে। কথিত “গাজা আন্তর্জাতিক অস্থায়ী কর্তৃপক্ষ” (GITA) বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা দেশসমূহ, আরব মিত্র ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ মিলে প্রায় সাত লাখ হামাস–সংলগ্ন গাজার মানুষকে রাজনৈতিকভাবে হামাস থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে কি না, সেটি বড় প্রশ্ন।

গাজা এখন সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া গাজার জনগণের ধৈর্য পরীক্ষা নেবে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে—ইসরাইল কি এই যুদ্ধের সমাপ্তির বিনিময়ে সৌদি আরবের সঙ্গে কূটনৈতিক স্বাভাবিকীকরণ অর্জন করতে পারবে? ২০২৪ সালে যে প্রস্তাবটি ছিল, এখন তা অনিশ্চিত।

ইতিহাসের প্রশ্ন: চুক্তিটি কি আগেই সম্ভব ছিল?

শেষ প্রশ্নটি হচ্ছে—এই চুক্তি কি আরও আগেই করা যেত? ইতিহাসবিদরা হয়তো বছরের পর বছর ধরে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবেন। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালের গ্রীষ্ম বা ২০২৫ সালের শুরুতেও হামাস একই শর্তে রাজি হতে পারত।

নেতানিয়াহুর সমালোচকরা বলছেন, তিনি যুদ্ধ টেনে রেখেছিলেন কেবল তার সরকার টিকে রাখার জন্য। তবে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা দাবি করেন, সে সময় ইসরাইল নিরাপত্তা বলয় রাখতে পারত না এবং হামাস তখনও কিছু বন্দিকে ধরে রাখত—যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও।
এখন যেহেতু সেই সিদ্ধান্তগ্রহণকারীরা আর জীবিত নেই, সত্যিকারের উত্তর হয়তো কখনোই জানা যাবে না।