ঢাকার তাঁতিরা বা বসাকরা বিখ্যাত জন্মাষ্টমীর মিছিল প্রবর্তন করেন। এই মিছিল এতই বিখ্যাত ছিল যে, ঢাকার বাইরে থেকেও অনেকে আসতেন মিছিল দেখতে।
তাঁতি
বাংলার বস্ত্রশিল্পের সুনাম বহুদিনের। ঢাকার মসলিনের খ্যাতি তো ছিল বিশ্বজোড়া। ঢাকায় ১৯ শতকে যারা তাঁত বা বস্তু নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারা মনে করতেন মুঘল আমলের শুরুতে মালদহ থেকে তাদের ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। দিল্লির বাদশাহ বা তাদের হেরেম, নবাবেরা ছিলেন মসলিনের পৃষ্ঠপোষক।
তাঁতি: জামদানী শাড়ি তৈরি করছেন
মসলিনের পতনের কারণ সর্বজনবিদিত। উনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে বস্ত্রশিল্প যথেষ্ট সংকুচিত হয়ে আসছিল। তাঁতি পরিবারের সংখ্যাও কমে এসেছিল। তবে, যখন চাহিদা ছিল তখন ঢাকায় তাঁতিদের আলাদা আবাসস্থলই গড়ে উঠেছিল যা আমাদের কাছে এখনও পরিচিত তাঁতি বাজার নামে। ১৮৭২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ঢাকায় তাঁতির সংখ্যা ছিল ৮,৯০৬ জন। আর পূর্ববঙ্গে ৩১,৪০৭ জন।
হিন্দু তাঁতিরা বসাক পদবি গ্রহণ করতেন। ঢাকায় তখনও অনেক বসাক পরিবার ছিলেন ধনী। তারা নিজেরা তাঁতের কাজ হয়তো করতেন না, তবে হয়তো কারিগর/তাঁতি রেখে কাজ করাতেন। এদের বেশিরভাগ ছিলেন বৈষ্ণব এবং খড়দহের বৈষ্ণবদের ভক্ত।
ঢাকার তাঁতি ১৮৬০
পূর্ববঙ্গের হিন্দু সম্প্রদায়ের মতো তাঁতিরাও বিভক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন ওয়াইজ। মূল ভাগ ছিল বড় ভাগিয়া ও ছোট ভাগিয়া। বড় ভাগিয়াদের গোত্র ছিল ১১টি। বিহারের তাঁতি বলেও একটি শাখা ছিল যারা নিজেদের বিশুদ্ধ শূদ্র বলে দাবি করতেন। ওয়াইজ লিখেছেন, “ঢাকার মগবাজারে বাস করে এক অদ্ভুত ধরনের তাঁতি সম্প্রদায়। মগকুমারেরা যে কারণে জাতিচ্যুত সেই একই কারণে এরাও জাতিচ্যুত।”
উনিশ শতকে তো বটে, বিশ শতকের গোড়ার দিকেও ঢাকার তাঁতিরা ছিলেন প্রভাবশালী। ঢাকার তাঁতিরা বা বসাকরা বিখ্যাত জন্মাষ্টমীর মিছিল প্রবর্তন করেন। এই মিছিল এতই বিখ্যাত ছিল যে, ঢাকার বাইরে থেকেও অনেকে আসতেন মিছিল দেখতে।
ঢাকার তাঁতি ১৮৬০
ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ে বাস করেন তাঁতিদের আরেকটি শাখা। ওয়াইজের মতে, এরা হলেন বঙ্গ তাঁতি। তারা মনে করেন, পূর্ববঙ্গের আদি তাঁতি তারা। ঢাকার তাঁতিবাজার এখনও তাঁতিদের স্মৃতি বহন করছে।
(চলবে)