০২:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
রাউজানে একের পর এক হিন্দু বাড়িতে পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগ, তথ্য দিলে পুরস্কার ঘোষণা পুলিশের অ্যাশেজে ধাক্কা আর চাপের মুখে বেন স্টোকস, সতীর্থদের জন্য সহমর্মিতা চাইলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের বিক্ষোভ, বাংলাদেশমুখী পণ্যবাহী ট্রাক আটকে উত্তেজনা ঢাকায় পা রেখেই ইউনূসকে তারেকের ফোন, জানালেন কৃতজ্ঞতা যশোরের চৌগাছায় পৃথক ঘটনায় তিনজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু যথাযথ মর্যাদায় দেশে বড়দিন উদযাপন শুর বিপিএল শুরুর আগের দিনই চট্টগ্রাম রয়্যালসের মালিকানা ছাড়লেন মালিক পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ায় পুলিশে হামলার নিন্দা সৌদি আরবের বড়দিনের আগের রাতে শিশুদের ঘুম নিশ্চিত করবেন যেভাবে, আনন্দও থাকবে অটুট দুর্ঘটনায় দরজা নিয়ে প্রশ্নে টেসলা মডেল থ্রি তদন্তে যুক্তরাষ্ট্র

জার্মানিতে ভারতীয়দের অভিবাসন—সাফল্যের গল্পে ভাষা ও সংস্কৃতি বাধা  হয়ে দাঁড়ায়

নতুন সুযোগের দেশ জার্মানি

জার্মানিতে ভারতীয়দের অভিবাসন এখন এক “সাফল্যের গল্প” হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশটি এখন ভারতীয় দক্ষ কর্মী ও শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সুযোগের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। তবে ভাষাগত বাধা, সংস্কৃতিগত ভিন্নতা এবং কিছু ক্ষেত্রে অভিবাসীবিরোধী মনোভাব অনেক ভারতীয়ের জন্য সেখানে টিকে থাকা কঠিন করে তুলছে।

জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্স সম্প্রতি এক গবেষণায় বলেছে, “শ্রম ও শিক্ষাগত অভিবাসনের ক্ষেত্রে ভারতই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস দেশ।” ২০১৫ সালের পর থেকে জার্মানিতে ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে এখন ২ লাখ ৮০ হাজারে পৌঁছেছে, আর ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে।

বার্ধক্যজনিত কর্মী সংকটে ভারতীয়দের দিকে জার্মানির নজর

২০২২ সালে স্বাক্ষরিত ভারত-জার্মানি মাইগ্রেশন অ্যান্ড মোবিলিটি পার্টনারশিপ চুক্তির পর থেকেই দেশটি দক্ষ ভারতীয় কর্মীদের প্রতি বিশেষভাবে উন্মুক্ত হয়েছে। জার্মানির প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মী ঘাটতি পূরণে এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ কর্মীর ভিসা কড়াকড়ি আরও অনেক ভারতীয়কে জার্মানির দিকে ঠেলে দিয়েছে।

20250903 viet migrants

ভাষা ও সমাজে মানিয়ে নেওয়ার লড়াই

অন্যদিকে, অনেক ভারতীয় অভিবাসীর অভিজ্ঞতা বলছে—জার্মান সমাজে একাত্ম হওয়াটা সহজ নয়।

আক্রিতি ধাওয়ান, ৩০ বছর বয়সী এক ভারতীয় সাংবাদিক, ২০১৯ সালে জার্মানিতে পড়াশোনার জন্য যান। বর্তমানে তিনি দুই দেশেই কাজ করেন, যদিও জার্মানিতে থাকার জন্য ওয়ার্ক পারমিট আছে। তিনি বলেন, “জার্মানি কঠিন একটি দেশ। সেখানে বাঁচতে হলে আপনাকে পুরোপুরি মানিয়ে নিতে হয়।” ভাষাজ্ঞান না থাকায় এবং সাংস্কৃতিক ফারাকের কারণে তিনি প্রায়ই ভারতে ফিরে আসেন।

ধাওয়ান জানান, একবার কর্মস্থলে এক সহকর্মীর সঙ্গে বিরোধের সময় তাঁকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁর ম্যানেজার পাশে না দাঁড়িয়ে বলেন, “এটা ভারত নয়, এটা ডয়চল্যান্ড।”

ইউরোপজুড়ে অভিবাসনবিরোধী মনোভাবের উত্থান

ইউরোপে অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও মুদ্রাস্ফীতি বাড়ায় বিদেশিদের প্রতি বিরাগও বাড়ছে। ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের পর থেকে জার্মানিতে ঘৃণাজনিত অপরাধ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ২০২৩ সালে পৌঁছেছে ১৭,০০৭ ঘটনায়।

বার্টেলসমান স্টিফটুং থিংক ট্যাংকের গণতন্ত্র ও সামাজিক সংহতি বিশেষজ্ঞ সুসানে শুলৎস বলেন, “২০২৩ সালের জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ জার্মান এখন অভিবাসনকে সমাজের জন্য ক্ষতিকর মনে করেন।” প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন, অভিবাসন সমাজে সংঘাত বাড়াচ্ছে ও সামাজিক রাষ্ট্রকে দুর্বল করছে।

Germany opens doors to Indians, but some trip over language barrier -  Nikkei Asia

ডানপন্থীদের উত্থান ও রাজনৈতিক প্রভাব

অভিবাসনবিরোধী ‘আলটারনেটিভ ফর জার্মানি’ (AfD) দল জনগণের অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। আগে দলটিকে জার্মান রাজনীতিতে প্রান্তিক বলা হলেও, এখন এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি। শুলৎস বলেন, “অভিবাসন এখন যেন সব সমস্যার ‘জননী’ হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছে।”

তবুও, জার্মান অর্থনৈতিক ইনস্টিটিউটের গবেষণা দেখাচ্ছে যে, দেশটিতে ২০২৮ সালের মধ্যে ৭ লাখ ৬৮ হাজার দক্ষ কর্মীর ঘাটতি দেখা দেবে—যা ২০২৪ সালের ৪ লাখ ৮৭ হাজার থেকে অনেক বেশি।

দ্বিমুখী বাস্তবতা: প্রয়োজন আছে, কিন্তু মানিয়ে নেওয়া কঠিন

ভারত বিশ্বের অন্যতম তরুণ কর্মশক্তির দেশ হিসেবে এই চাহিদার কিছুটা পূরণ করছে। তবু ইনস্টিটিউট ফর এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চ জানায়, ২০১৪ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ৬ থেকে ১১ শতাংশ বিদেশি নাগরিক জার্মানি ছেড়ে চলে গেছেন।

ধাওয়ান বলেন, “জার্মানি আন্তর্জাতিক অর্থনীতি চায় অভিবাসী, কিন্তু তাদের আইনি ও পেশাগত কাঠামো কেবল জার্মান ভাষায় চলে।”

ইমিগ্রেশন আইনজীবী ও জার্মান রাজনীতিক ফাতিহ জিংগাল বলেন, “প্রতিদিনের বৈষম্য, সামাজিক বর্জন এবং গ্রহণযোগ্যতার অভাবের মুখে অনেকের চলে যাওয়া আশ্চর্যের নয়।” তিনি আরও বলেন, উভয় পক্ষেরই দায়িত্ব আছে—স্থানীয় সহায়তা, পরামর্শ ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে।

অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় যৌথ উদ্যোগের আহ্বান

Germany opened its doors to refugees a year ago, but some residents have  had enough - Los Angeles Times

ভারতের থিংক ট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র গবেষক অর্পণ তুলস্যান বলেন, “ভারতীয় সরকারকেও উচিত জার্মান সমাজের বাস্তবতা সম্পর্কে আগেই অভিবাসীদের প্রস্তুত করা।”

তাঁর মতে, দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে অভিবাসীদের অধিকার রক্ষার দিকেও মনোযোগ দেওয়া জরুরি, যাতে তাদের জন্য আরও শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়। “এটি কেবল অর্থনীতির বিষয় নয়, সমাজের বিষয়ও,” তিনি বলেন।

পরিবারের টানই শেষ সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করে

সবশেষে, অনেকেই কর্মজীবনে স্থিতিশীল হলেও পরিবারের টানে দেশে ফিরে আসছেন।

বৃন্দা আরালাপ্পা, যিনি আট বছর জার্মানিতে কাজ করেছেন, সন্তান হওয়ার পর এবার বেঙ্গালুরুতে ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, “জার্মানিতে জীবনমান খুব ভালো, কিন্তু পরিবারের উষ্ণ বন্ধন সেখানে পাওয়া যায় না।”

আরালাপ্পা জানান, জার্মান নীতিমালা এতটাই কড়াকড়ি যে তাঁদের বাবা-মা স্থায়ীভাবে থাকতে পারেননি। তাই সন্তান জন্মের পর তাঁরা দেশে ফিরে আসেন। “গর্ভাবস্থায় বুঝতে পারলাম, পরিবারের কাছাকাছি থাকাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

জার্মানি যেমন তার শ্রমবাজারে ভারতীয়দের জন্য দরজা খুলছে, তেমনি সামাজিক ও ভাষাগত প্রতিবন্ধকতাগুলো এখনো অনেকের জন্য অতিক্রম করা কঠিন। অর্থনৈতিক সুযোগ থাকলেও মানবিক সংযোগ, সংস্কৃতি ও পরিবারের উপস্থিতি—এই তিনটি বিষয়ই শেষ পর্যন্ত অনেকের সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করছে।

# #জার্মানি #অভিবাসন #ভারতীয়কর্মী #ভাষাবাধা #ইউরোপীয়রাজনীতি #AfD #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

রাউজানে একের পর এক হিন্দু বাড়িতে পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগ, তথ্য দিলে পুরস্কার ঘোষণা পুলিশের

জার্মানিতে ভারতীয়দের অভিবাসন—সাফল্যের গল্পে ভাষা ও সংস্কৃতি বাধা  হয়ে দাঁড়ায়

০২:৫৮:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

নতুন সুযোগের দেশ জার্মানি

জার্মানিতে ভারতীয়দের অভিবাসন এখন এক “সাফল্যের গল্প” হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশটি এখন ভারতীয় দক্ষ কর্মী ও শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সুযোগের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। তবে ভাষাগত বাধা, সংস্কৃতিগত ভিন্নতা এবং কিছু ক্ষেত্রে অভিবাসীবিরোধী মনোভাব অনেক ভারতীয়ের জন্য সেখানে টিকে থাকা কঠিন করে তুলছে।

জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্স সম্প্রতি এক গবেষণায় বলেছে, “শ্রম ও শিক্ষাগত অভিবাসনের ক্ষেত্রে ভারতই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস দেশ।” ২০১৫ সালের পর থেকে জার্মানিতে ভারতীয় নাগরিকের সংখ্যা তিনগুণ বেড়ে এখন ২ লাখ ৮০ হাজারে পৌঁছেছে, আর ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে।

বার্ধক্যজনিত কর্মী সংকটে ভারতীয়দের দিকে জার্মানির নজর

২০২২ সালে স্বাক্ষরিত ভারত-জার্মানি মাইগ্রেশন অ্যান্ড মোবিলিটি পার্টনারশিপ চুক্তির পর থেকেই দেশটি দক্ষ ভারতীয় কর্মীদের প্রতি বিশেষভাবে উন্মুক্ত হয়েছে। জার্মানির প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মী ঘাটতি পূরণে এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ কর্মীর ভিসা কড়াকড়ি আরও অনেক ভারতীয়কে জার্মানির দিকে ঠেলে দিয়েছে।

20250903 viet migrants

ভাষা ও সমাজে মানিয়ে নেওয়ার লড়াই

অন্যদিকে, অনেক ভারতীয় অভিবাসীর অভিজ্ঞতা বলছে—জার্মান সমাজে একাত্ম হওয়াটা সহজ নয়।

আক্রিতি ধাওয়ান, ৩০ বছর বয়সী এক ভারতীয় সাংবাদিক, ২০১৯ সালে জার্মানিতে পড়াশোনার জন্য যান। বর্তমানে তিনি দুই দেশেই কাজ করেন, যদিও জার্মানিতে থাকার জন্য ওয়ার্ক পারমিট আছে। তিনি বলেন, “জার্মানি কঠিন একটি দেশ। সেখানে বাঁচতে হলে আপনাকে পুরোপুরি মানিয়ে নিতে হয়।” ভাষাজ্ঞান না থাকায় এবং সাংস্কৃতিক ফারাকের কারণে তিনি প্রায়ই ভারতে ফিরে আসেন।

ধাওয়ান জানান, একবার কর্মস্থলে এক সহকর্মীর সঙ্গে বিরোধের সময় তাঁকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁর ম্যানেজার পাশে না দাঁড়িয়ে বলেন, “এটা ভারত নয়, এটা ডয়চল্যান্ড।”

ইউরোপজুড়ে অভিবাসনবিরোধী মনোভাবের উত্থান

ইউরোপে অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও মুদ্রাস্ফীতি বাড়ায় বিদেশিদের প্রতি বিরাগও বাড়ছে। ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের পর থেকে জার্মানিতে ঘৃণাজনিত অপরাধ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ২০২৩ সালে পৌঁছেছে ১৭,০০৭ ঘটনায়।

বার্টেলসমান স্টিফটুং থিংক ট্যাংকের গণতন্ত্র ও সামাজিক সংহতি বিশেষজ্ঞ সুসানে শুলৎস বলেন, “২০২৩ সালের জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ জার্মান এখন অভিবাসনকে সমাজের জন্য ক্ষতিকর মনে করেন।” প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন, অভিবাসন সমাজে সংঘাত বাড়াচ্ছে ও সামাজিক রাষ্ট্রকে দুর্বল করছে।

Germany opens doors to Indians, but some trip over language barrier -  Nikkei Asia

ডানপন্থীদের উত্থান ও রাজনৈতিক প্রভাব

অভিবাসনবিরোধী ‘আলটারনেটিভ ফর জার্মানি’ (AfD) দল জনগণের অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। আগে দলটিকে জার্মান রাজনীতিতে প্রান্তিক বলা হলেও, এখন এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি। শুলৎস বলেন, “অভিবাসন এখন যেন সব সমস্যার ‘জননী’ হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছে।”

তবুও, জার্মান অর্থনৈতিক ইনস্টিটিউটের গবেষণা দেখাচ্ছে যে, দেশটিতে ২০২৮ সালের মধ্যে ৭ লাখ ৬৮ হাজার দক্ষ কর্মীর ঘাটতি দেখা দেবে—যা ২০২৪ সালের ৪ লাখ ৮৭ হাজার থেকে অনেক বেশি।

দ্বিমুখী বাস্তবতা: প্রয়োজন আছে, কিন্তু মানিয়ে নেওয়া কঠিন

ভারত বিশ্বের অন্যতম তরুণ কর্মশক্তির দেশ হিসেবে এই চাহিদার কিছুটা পূরণ করছে। তবু ইনস্টিটিউট ফর এমপ্লয়মেন্ট রিসার্চ জানায়, ২০১৪ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ৬ থেকে ১১ শতাংশ বিদেশি নাগরিক জার্মানি ছেড়ে চলে গেছেন।

ধাওয়ান বলেন, “জার্মানি আন্তর্জাতিক অর্থনীতি চায় অভিবাসী, কিন্তু তাদের আইনি ও পেশাগত কাঠামো কেবল জার্মান ভাষায় চলে।”

ইমিগ্রেশন আইনজীবী ও জার্মান রাজনীতিক ফাতিহ জিংগাল বলেন, “প্রতিদিনের বৈষম্য, সামাজিক বর্জন এবং গ্রহণযোগ্যতার অভাবের মুখে অনেকের চলে যাওয়া আশ্চর্যের নয়।” তিনি আরও বলেন, উভয় পক্ষেরই দায়িত্ব আছে—স্থানীয় সহায়তা, পরামর্শ ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে।

অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় যৌথ উদ্যোগের আহ্বান

Germany opened its doors to refugees a year ago, but some residents have  had enough - Los Angeles Times

ভারতের থিংক ট্যাংক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র গবেষক অর্পণ তুলস্যান বলেন, “ভারতীয় সরকারকেও উচিত জার্মান সমাজের বাস্তবতা সম্পর্কে আগেই অভিবাসীদের প্রস্তুত করা।”

তাঁর মতে, দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে অভিবাসীদের অধিকার রক্ষার দিকেও মনোযোগ দেওয়া জরুরি, যাতে তাদের জন্য আরও শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়। “এটি কেবল অর্থনীতির বিষয় নয়, সমাজের বিষয়ও,” তিনি বলেন।

পরিবারের টানই শেষ সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করে

সবশেষে, অনেকেই কর্মজীবনে স্থিতিশীল হলেও পরিবারের টানে দেশে ফিরে আসছেন।

বৃন্দা আরালাপ্পা, যিনি আট বছর জার্মানিতে কাজ করেছেন, সন্তান হওয়ার পর এবার বেঙ্গালুরুতে ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, “জার্মানিতে জীবনমান খুব ভালো, কিন্তু পরিবারের উষ্ণ বন্ধন সেখানে পাওয়া যায় না।”

আরালাপ্পা জানান, জার্মান নীতিমালা এতটাই কড়াকড়ি যে তাঁদের বাবা-মা স্থায়ীভাবে থাকতে পারেননি। তাই সন্তান জন্মের পর তাঁরা দেশে ফিরে আসেন। “গর্ভাবস্থায় বুঝতে পারলাম, পরিবারের কাছাকাছি থাকাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

জার্মানি যেমন তার শ্রমবাজারে ভারতীয়দের জন্য দরজা খুলছে, তেমনি সামাজিক ও ভাষাগত প্রতিবন্ধকতাগুলো এখনো অনেকের জন্য অতিক্রম করা কঠিন। অর্থনৈতিক সুযোগ থাকলেও মানবিক সংযোগ, সংস্কৃতি ও পরিবারের উপস্থিতি—এই তিনটি বিষয়ই শেষ পর্যন্ত অনেকের সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করছে।

# #জার্মানি #অভিবাসন #ভারতীয়কর্মী #ভাষাবাধা #ইউরোপীয়রাজনীতি #AfD #সারাক্ষণরিপোর্ট