মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস
চলতি বছরের আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের আগমন গত বছরের তুলনায় ৪৪ শতাংশ কমে গেছে, যা ২০২০ সালের কোভিড-পরবর্তী সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন। মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের অধীনস্থ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ITA)-এর তথ্য অনুযায়ী, এ বছর আগস্টে শিক্ষার্থী ভিসা (F ও M ক্যাটাগরি) নিয়ে ৪১ হাজার ৫৪০ জন ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে—যা মহামারির সময়ের পর থেকে সর্বনিম্ন সংখ্যা।
২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫৬ হাজারের বেশি, ২০২২ সালে ৮০ হাজার ৪৮৬ এবং ২০২৩ সালে ৯৩ হাজার ৮৩৩। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে তা নেমে আসে ৭৪ হাজার ৮২৫-এ, এবং ২০২৫ সালে আরও কমে ৪১ হাজারে দাঁড়ায়।
আগের বছরের তুলনায় ধারাবাহিক পতন
প্রাক-মহামারি সময়ে (২০১৫-২০১৬) যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় শিক্ষার্থীর আগমন আগস্ট মাসে ছিল ৪৫ থেকে ৫০ হাজারের মধ্যে। কিন্তু ২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম বছরে তা কমে দাঁড়ায় প্রায় ৪১ হাজারে এবং পরবর্তী বছরগুলোতে একই মাত্রায় স্থিতিশীল থাকে।
প্রতিবছর আগস্টেই যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধিক শিক্ষার্থী প্রবেশ করে, কারণ এই সময়েই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফল সেমিস্টার শুরু হয়।
তবে এ বছর শুধু আগস্ট নয়, জুন ও জুলাই মাসেও ভারতীয় শিক্ষার্থীদের আগমন ৪০ শতাংশের বেশি কমেছে। জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে মাত্র ১৩,০২৭ জন ভারতীয় শিক্ষার্থী, যেখানে গত বছর একই সময়ে ছিল ২৪,২৯৮ জন। জুনে সংখ্যা ছিল ৮,৫৪৫, যা গত বছরের ১৪,৪১৮ জনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত মোট ভারতীয় শিক্ষার্থী আগমন দাঁড়িয়েছে ৬৩,১১২, যা কোভিড-পরবর্তী সময়ে এই তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
চীনা শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখনো দ্বিগুণ
একই সময়ে চীনা (হংকং বাদে) শিক্ষার্থীর আগমন ছিল ৮৬,৬৪৭ জন—ভারতের দ্বিগুণেরও বেশি। যদিও চীনেও কিছুটা পতন দেখা গেছে (গত বছর ছিল ৯৮,৮৬৭), তবু হ্রাসের হার ভারতের তুলনায় অনেক কম।
জুন থেকে আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মোট ১.১১ লক্ষ চীনা শিক্ষার্থী প্রবেশ করেছে, যেখানে ২০২৪ সালে ছিল ১.৩২ লক্ষ এবং ২০২৩ সালে ১.২৭ লক্ষ। ২০১৯ সালে কোভিডের আগেই এ সংখ্যা পৌঁছেছিল ২.৩০ লক্ষে।
২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষে ভারতীয় শিক্ষার্থীরা সংখ্যার দিক থেকে চীনকে অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আগমনের সামগ্রিক চিত্র
২০২৫ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে মোট আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আগমন ছিল ৩.১৩ লক্ষ, যা গত বছরের ৩.৮৭ লক্ষের তুলনায় ১৯ শতাংশ কম—গত দশকে কোভিড-কাল ছাড়া সর্বনিম্ন।
২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত আগস্ট মাসে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রতি বছর ৪ লক্ষের ওপরে, সর্বোচ্চ ছিল ২০১৫ সালে ৪.৫৫ লক্ষ। ২০২০ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৫২,৮২১-এ; এরপর ধীরে ধীরে বেড়ে ২০২১ সালে হয় ৩.০৮ লক্ষ, ২০২২ সালে ৩.২৮ লক্ষ এবং ২০২৩ সালে ৩.৯৪ লক্ষ।
এই তথ্যগুলো কানাডা ও মেক্সিকো থেকে স্থলপথে আগমনকারী শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করে না।
ভিসা ইস্যু ও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রভাব
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য জারি করা F-1 ভিসার সংখ্যা ছিল মাত্র ৯,৯০৬—যা গত বছরের তুলনায় ২৭ শতাংশ কম। সাধারণত মার্চ থেকে জুলাই মাসই হয় শিক্ষার্থী ভিসা প্রাপ্তির ব্যস্ততম সময়কাল।
তবে এ বছর ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নীতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। প্রশাসন প্রো-প্যালেস্টাইন প্রতিবাদের সঙ্গে যুক্ত কিছু শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে এবং আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত তদন্তে জড়িতদের ক্ষেত্রেও কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। মে ও জুন মাসে শিক্ষার্থী ভিসা সাক্ষাৎকারের সময়সূচি কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়, যাতে আবেদনকারীদের সোশ্যাল মিডিয়া কার্যকলাপ আরও কঠোরভাবে যাচাই করা যায়। পরে মার্কিন দূতাবাসগুলো শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দেয়, তাদের সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ‘পাবলিক’ রাখতে হবে।
তহবিল সংকট ও ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার বৃদ্ধি
একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বহু বিশ্ববিদ্যালয় ফেডারেল তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আর্থিক সংকটে পড়েছে এবং কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই আদালতে মামলা করেছে।
ভিসা প্রত্যাখ্যানের হারও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ৪১ শতাংশ F-1 ভিসা আবেদন বাতিল হয়েছে—যা গত দশকে সর্বোচ্চ।
বিশ্লেষণ: আন্তর্জাতিক শিক্ষার অনিশ্চয়তা
এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দেয় যে, কোভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধার সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার পরিবেশ এখনো অনিশ্চিত। ভিসা নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব এবং তহবিল সংকট মিলিয়ে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য মার্কিন উচ্চশিক্ষার পথ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি কঠিন হয়ে উঠছে।
# ভারতীয়_শিক্ষার্থী, যুক্তরাষ্ট্র_ভিসা, ট্রাম্প_নীতি, আন্তর্জাতিক_শিক্ষা, কোভিড_পরবর্তী_অর্থনীতি, উচ্চশিক্ষা