০২:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
টোকিওর পাশে সিইটেক ২০২৫: এআই-রোবটিক্সে ‘গ্রীন আইসিটি’ ফিলাডেলফিয়ায় ‘নেটফ্লিক্স হাউস’: ওয়েটলিস্ট টিকিট বিক্রি শুরু ইন্ডিজেনাস পিপলস ডে: উৎসবের সাথে বাস্তব দাবি আমেরিকার এলএনজি রপ্তানি বাড়ানোর চাপ: দামের সমীকরণ কী বলছে ভারতে গুগলের ১৫ বিলিয়ন ডলারের এআই ডেটা সেন্টার মার্কিন–চীন নতুন বন্দর ফি: সরবরাহ শৃঙ্খলে চাপ ভাতা–ভাড়াভাতা সমতায় দাবিতে এমপিও শিক্ষকদের ‘সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা শেষে ফিরতে হতে পারে বেশির ভাগ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীকে সারাদেশে ২৭০ রেস্টুরেন্টে বিকাশে পেমেন্টে পিৎজায় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা ছাড় এবারে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করে দিল্লিতে তালেবান মন্ত্রীর নতুন সাংবাদিক সম্মেলন

প্রধান উপদেষ্টার রোম সফর নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন?

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের অনুষ্ঠানে এ বছর অংশ নিয়েছেন।

ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ইতালির রোম সফর ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে বেশ আলোচনা চলছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, উদ্বোধনী এই অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

এবারের অনুষ্ঠানটি ১০ থেকে ১৭ই অক্টোবর পর্যন্ত ইতালির রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

গত সেপ্টেম্বরেই জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিয়ে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা। আবার অক্টোবর মাসে রোম সফরে গিয়েছেন।

মাত্র ১৪ মাসে কমপক্ষে ১৪ বার প্রধান উপদেষ্টার সদলবলে বিদেশ সফর নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইতালি ও বাংলাদেশ এই দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক কোনো সফর নয় এটি। ইতালির সরকার প্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানের সাথেও বাংলাদেশের সরকার প্রধানের কোনো বৈঠকের তথ্য নেই।

ফলে সরকারি অর্থ ব্যয় করে এ ধরনের একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের যোগ দেওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা।

রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কার্যালয়ে ড.ইউনূস

রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কার্যালয়ে ড.ইউনূস

ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

এই ফোরামের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, যুবশক্তি, বিজ্ঞান ও উদ্ভাবন এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে কৃষিখাদ্য ব্যবস্থাকে রূপান্তরিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম।

২০২১ সাল থেকে এই ফোরামের এই অনুষ্ঠান আয়োজন শুরু হয়।

এর আগের চারটি অনুষ্ঠানের তথ্যে দেখা যায়, ইভেন্টের বিভিন্ন সেশনে কয়েকটি দেশের কৃষি মন্ত্রী বা কৃষি সংক্রান্ত দফতরের কর্মকর্তারা যোগ দিয়েছেন।

এই ফোরামের ২০২৪ সালের অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র একটি দেশের সর্বোচ্চ নেতা অংশ নিয়েছিলেন।

লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ মিয়ুমা বোকাই ওই অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিয়েছেন।

এছাড়া ডোমেনিকান রিপাবলিকের প্রেসিডেন্ট লুইস রোদোলফো আবিনাদার কোরোনা, পেরুর প্রেসিডেন্ট দিনা এরসিলিয়া বোলুয়ার্তে সেগার্রা এবং কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-ক্যানেল ভিডিও বার্তা দেন।

ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রোমে প্রধান উপদেষ্টা ড.ইউনূস

ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রোমে প্রধান উপদেষ্টা ড.ইউনূস

এ বছর কোন কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান অংশ নিচ্ছেন?

আগামী ১৫ই অক্টোবর এই ফোরাম আয়োজিত ইভেন্টের একটি সেশনের মিনিস্টেরিয়াল সেগমেন্টে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম অংশ নেবেন।

বাংলাদেশ ছাড়াও ওই একই সেগমেন্টে আলবেনিয়া, আলজেরিয়া এবং মেক্সিকোর কৃষি মন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন বলে এই অনুষ্ঠানের সূচিতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও এ বছর এতে অংশ নিচ্ছেন। অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য দেয়ার পর, তার গ্লোবাল অ্যালায়েন্সের কার্যালয় পরিদর্শনের কথাও রয়েছে।

এছাড়াও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাও এই বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ওই ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া ছাড়াও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট, জিবুতির প্রধানমন্ত্রী এবং রোমের মেয়রের সাথে সাক্ষাৎ করার কথাও রয়েছে।

এছাড়া আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (আইএফএডি) প্রেসিডেন্ট আলভারো লারিও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এর বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা।

রোম সফর নিয়ে বিতর্ক কেন?

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থায় এই সফর নিয়ে প্রকাশিত একটি খবরে এর আগে বলা হয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টা রোম সফরের সময় ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলানির সাথে সাক্ষাৎ করবেন।

তবে এই সংবাদ পুরোপুরি ঠিক নয় জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।

তিনি লিখেছেন, ” রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসস বা কোনও সংবাদপত্র এই সফর সম্পর্কে আমার সাথে কথা বলেনি। “

“বুধবার আমি একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে এবং পরে দুটি টিভি স্টেশনকে বলেছিলাম যে প্রধান উপদেষ্টা বিশ্ব খাদ্য ফোরামের সভায় যোগদানের জন্য রোম ভ্রমণ করছেন। আমি বলেছিলাম যে সফরের সময় তিনি বেশ কয়েকটি হাই প্রোফাইল সভাও করবেন ” লিখেছেন মি. আলম।

তিনি ওই স্ট্যাটাসে দাবি করেন, এই সংবাদ সম্মেলনের সময় প্রধান উপদেষ্টা ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করবেন এমন কথা তিনি বলেননি।

” আসলে এমন কোনও বৈঠকের সময়সূচি ছিল না। আমি আশা করি সংবাদমাধ্যমগুলি তাদের প্রতিবেদন সংশোধন করবে” উল্লেখ করেন তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টারা নিয়মিত বিদেশ সফর করছেন।

কখনো কখনো দুই রাষ্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নয় এমন অনেক অনুষ্ঠানেও যোগ দিতে দেখা গেছে তাদের।

গত ১৪ মাসে অন্তত ১৫ বার বিশাল বহর নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিদেশ সফরের অভিযোগও উঠেছে।

এর আগে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশাল বহর নিয়ে বিদেশ সফর কিংবা উপদেষ্টা ও আমলাদের বিদেশ সফর নিয়ে নানা সমালোচনা হয়েছিল।

এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারই গত ডিসেম্বরে উপদেষ্টা কিংবা সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত ১৩ দফা বিশেষ নির্দেশনাও জারি করেছিল।

ওই নির্দেশনায় বিদেশ সফরে নিরুৎসাহিত করাসহ একই অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ও সচিবের বিদেশ ভ্রমণ পরিহার করতেও বলা হয়েছিল।

কিন্তু এসব সফরের ক্ষেত্রে সেগুলো কিছুই মানা হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন বিশ্লেষকেরা।

বাংলাদেশের সরকার প্রধান ইতালিতে গেলেও এটি কোনো রাষ্ট্রীয় দ্বিপাক্ষিক সফর নয়

বাংলাদেশের সরকার প্রধান ইতালিতে গেলেও এটি কোনো রাষ্ট্রীয় দ্বিপাক্ষিক সফর নয়

গত মাসের শেষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি জনগণের করের টাকায় বিদেশ সফরে এত বড় প্রতিনিধি দল পাঠানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিবৃতি দেয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ” তারা রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে বিবেচনায় নিয়ে পুরো রাষ্ট্রের স্বার্থ প্রমোট করার জন্য যাচ্ছে? তাদের সুনির্দিষ্ট কার কী ভূমিকা, কীভাবে ভূমিকা পালন করছে? “

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ প্রশ্ন তুলেছেন, একটি দেশের শীর্ষ নেতার ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়াটা খুব জরুরি কিনা?

বিবিসি বাংলাকে বলেন, “উনি একটা মাল্টিলেটারাল বা বহুপাক্ষিক অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। এটা ইতালি ও বাংলাদেশের মধ্যে একটা দ্বিপাক্ষিক সফর নয়। এটা নিয়ে মানুষ চিন্তিত।”

সাবেক এই রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক অনুষ্ঠান সত্যিকার অর্থে খুব কম হচ্ছে।

“ফলে এগুলোতে যাওয়া কি ওনার জন্য খুব জরুরি? প্রধান উপদেষ্টার এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে,” মন্তব্য করেন মি. আহমেদ।

আবার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এই মুহূর্তে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা ছাড়া অন্য কোনো জরুরি কাজ আছে কিনা?

সাবেক এই কূটনীতিক মনে করেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি প্রধান উপদেষ্টা এখন জাতীয় নেতা। বক্তৃতা দেওয়ার চেয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব দেওয়াটা ওনার জন্য বেশি জরুরি। তার সেই কাজটায় বারবার ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।”

মি. আহমেদ মনে করেন, এ ধরনের অগুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং যে প্রশ্নগুলো উঠছে সেগুলোকে সিরিয়াসভাবে নিচ্ছেন না তিনি।

” ওনার সিরিয়াসনেসের অভাবটা নেগেটিভ একটা ইম্প্যাক্ট পড়ছে ওনার নিজের ওপরেও আর

সরকারের সক্ষমতার ওপরেও ” বলেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত।

একেকটি সফরের সদস্য সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

“আমরা ভেবেছিলাম গত বছরের চেয়ে এবার প্রতিনিধি দলের সংখ্যা আরো কমবে। কিন্তু সেটা আরো বেড়েছে ” বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে এমন উদাহরণ ছিল উল্লেখ করেন তিনি।

মি. ইফতেখারুজ্জামান প্রশ্ন তোলেন, “আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যা হয়েছে, এখনো কেন সেই ধারাবাহিকতা দেখা যাবে?।”

বিবিসি নিউজ বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

টোকিওর পাশে সিইটেক ২০২৫: এআই-রোবটিক্সে ‘গ্রীন আইসিটি’

প্রধান উপদেষ্টার রোম সফর নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন?

১১:১১:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ইতালির রোম সফর ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে বেশ আলোচনা চলছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, উদ্বোধনী এই অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

এবারের অনুষ্ঠানটি ১০ থেকে ১৭ই অক্টোবর পর্যন্ত ইতালির রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

গত সেপ্টেম্বরেই জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিয়ে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা। আবার অক্টোবর মাসে রোম সফরে গিয়েছেন।

মাত্র ১৪ মাসে কমপক্ষে ১৪ বার প্রধান উপদেষ্টার সদলবলে বিদেশ সফর নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইতালি ও বাংলাদেশ এই দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক কোনো সফর নয় এটি। ইতালির সরকার প্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানের সাথেও বাংলাদেশের সরকার প্রধানের কোনো বৈঠকের তথ্য নেই।

ফলে সরকারি অর্থ ব্যয় করে এ ধরনের একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের যোগ দেওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা।

রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কার্যালয়ে ড.ইউনূস

রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কার্যালয়ে ড.ইউনূস

ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

এই ফোরামের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা যায়, যুবশক্তি, বিজ্ঞান ও উদ্ভাবন এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে কৃষিখাদ্য ব্যবস্থাকে রূপান্তরিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম।

২০২১ সাল থেকে এই ফোরামের এই অনুষ্ঠান আয়োজন শুরু হয়।

এর আগের চারটি অনুষ্ঠানের তথ্যে দেখা যায়, ইভেন্টের বিভিন্ন সেশনে কয়েকটি দেশের কৃষি মন্ত্রী বা কৃষি সংক্রান্ত দফতরের কর্মকর্তারা যোগ দিয়েছেন।

এই ফোরামের ২০২৪ সালের অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র একটি দেশের সর্বোচ্চ নেতা অংশ নিয়েছিলেন।

লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ মিয়ুমা বোকাই ওই অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিয়েছেন।

এছাড়া ডোমেনিকান রিপাবলিকের প্রেসিডেন্ট লুইস রোদোলফো আবিনাদার কোরোনা, পেরুর প্রেসিডেন্ট দিনা এরসিলিয়া বোলুয়ার্তে সেগার্রা এবং কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-ক্যানেল ভিডিও বার্তা দেন।

ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রোমে প্রধান উপদেষ্টা ড.ইউনূস

ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রোমে প্রধান উপদেষ্টা ড.ইউনূস

এ বছর কোন কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান অংশ নিচ্ছেন?

আগামী ১৫ই অক্টোবর এই ফোরাম আয়োজিত ইভেন্টের একটি সেশনের মিনিস্টেরিয়াল সেগমেন্টে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম অংশ নেবেন।

বাংলাদেশ ছাড়াও ওই একই সেগমেন্টে আলবেনিয়া, আলজেরিয়া এবং মেক্সিকোর কৃষি মন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন বলে এই অনুষ্ঠানের সূচিতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাও এ বছর এতে অংশ নিচ্ছেন। অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য দেয়ার পর, তার গ্লোবাল অ্যালায়েন্সের কার্যালয় পরিদর্শনের কথাও রয়েছে।

এছাড়াও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাও এই বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ওই ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া ছাড়াও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট, জিবুতির প্রধানমন্ত্রী এবং রোমের মেয়রের সাথে সাক্ষাৎ করার কথাও রয়েছে।

এছাড়া আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (আইএফএডি) প্রেসিডেন্ট আলভারো লারিও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এর বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা।

রোম সফর নিয়ে বিতর্ক কেন?

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থায় এই সফর নিয়ে প্রকাশিত একটি খবরে এর আগে বলা হয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টা রোম সফরের সময় ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলানির সাথে সাক্ষাৎ করবেন।

তবে এই সংবাদ পুরোপুরি ঠিক নয় জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।

তিনি লিখেছেন, ” রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসস বা কোনও সংবাদপত্র এই সফর সম্পর্কে আমার সাথে কথা বলেনি। “

“বুধবার আমি একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে এবং পরে দুটি টিভি স্টেশনকে বলেছিলাম যে প্রধান উপদেষ্টা বিশ্ব খাদ্য ফোরামের সভায় যোগদানের জন্য রোম ভ্রমণ করছেন। আমি বলেছিলাম যে সফরের সময় তিনি বেশ কয়েকটি হাই প্রোফাইল সভাও করবেন ” লিখেছেন মি. আলম।

তিনি ওই স্ট্যাটাসে দাবি করেন, এই সংবাদ সম্মেলনের সময় প্রধান উপদেষ্টা ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করবেন এমন কথা তিনি বলেননি।

” আসলে এমন কোনও বৈঠকের সময়সূচি ছিল না। আমি আশা করি সংবাদমাধ্যমগুলি তাদের প্রতিবেদন সংশোধন করবে” উল্লেখ করেন তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টারা নিয়মিত বিদেশ সফর করছেন।

কখনো কখনো দুই রাষ্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নয় এমন অনেক অনুষ্ঠানেও যোগ দিতে দেখা গেছে তাদের।

গত ১৪ মাসে অন্তত ১৫ বার বিশাল বহর নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিদেশ সফরের অভিযোগও উঠেছে।

এর আগে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশাল বহর নিয়ে বিদেশ সফর কিংবা উপদেষ্টা ও আমলাদের বিদেশ সফর নিয়ে নানা সমালোচনা হয়েছিল।

এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারই গত ডিসেম্বরে উপদেষ্টা কিংবা সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত ১৩ দফা বিশেষ নির্দেশনাও জারি করেছিল।

ওই নির্দেশনায় বিদেশ সফরে নিরুৎসাহিত করাসহ একই অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ও সচিবের বিদেশ ভ্রমণ পরিহার করতেও বলা হয়েছিল।

কিন্তু এসব সফরের ক্ষেত্রে সেগুলো কিছুই মানা হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন বিশ্লেষকেরা।

বাংলাদেশের সরকার প্রধান ইতালিতে গেলেও এটি কোনো রাষ্ট্রীয় দ্বিপাক্ষিক সফর নয়

বাংলাদেশের সরকার প্রধান ইতালিতে গেলেও এটি কোনো রাষ্ট্রীয় দ্বিপাক্ষিক সফর নয়

গত মাসের শেষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি জনগণের করের টাকায় বিদেশ সফরে এত বড় প্রতিনিধি দল পাঠানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিবৃতি দেয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ” তারা রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে বিবেচনায় নিয়ে পুরো রাষ্ট্রের স্বার্থ প্রমোট করার জন্য যাচ্ছে? তাদের সুনির্দিষ্ট কার কী ভূমিকা, কীভাবে ভূমিকা পালন করছে? “

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ প্রশ্ন তুলেছেন, একটি দেশের শীর্ষ নেতার ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়াটা খুব জরুরি কিনা?

বিবিসি বাংলাকে বলেন, “উনি একটা মাল্টিলেটারাল বা বহুপাক্ষিক অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। এটা ইতালি ও বাংলাদেশের মধ্যে একটা দ্বিপাক্ষিক সফর নয়। এটা নিয়ে মানুষ চিন্তিত।”

সাবেক এই রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক অনুষ্ঠান সত্যিকার অর্থে খুব কম হচ্ছে।

“ফলে এগুলোতে যাওয়া কি ওনার জন্য খুব জরুরি? প্রধান উপদেষ্টার এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে,” মন্তব্য করেন মি. আহমেদ।

আবার কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এই মুহূর্তে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করা ছাড়া অন্য কোনো জরুরি কাজ আছে কিনা?

সাবেক এই কূটনীতিক মনে করেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি প্রধান উপদেষ্টা এখন জাতীয় নেতা। বক্তৃতা দেওয়ার চেয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব দেওয়াটা ওনার জন্য বেশি জরুরি। তার সেই কাজটায় বারবার ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।”

মি. আহমেদ মনে করেন, এ ধরনের অগুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে এবং যে প্রশ্নগুলো উঠছে সেগুলোকে সিরিয়াসভাবে নিচ্ছেন না তিনি।

” ওনার সিরিয়াসনেসের অভাবটা নেগেটিভ একটা ইম্প্যাক্ট পড়ছে ওনার নিজের ওপরেও আর

সরকারের সক্ষমতার ওপরেও ” বলেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত।

একেকটি সফরের সদস্য সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

“আমরা ভেবেছিলাম গত বছরের চেয়ে এবার প্রতিনিধি দলের সংখ্যা আরো কমবে। কিন্তু সেটা আরো বেড়েছে ” বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে এমন উদাহরণ ছিল উল্লেখ করেন তিনি।

মি. ইফতেখারুজ্জামান প্রশ্ন তোলেন, “আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যা হয়েছে, এখনো কেন সেই ধারাবাহিকতা দেখা যাবে?।”

বিবিসি নিউজ বাংলা