০৭:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
শিক্ষকদের সম্মান শুধু কথায় নয়, বাস্তব পদক্ষেপে দিতে হবে—জি. এম. কাদের অস্থিরতায় ঘেরা শেয়ারবাজার—স্থিতির খোঁজে বিনিয়োগকারীরা ডিএসই ও সিএসই দিনের শুরুতে ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও শেষে পতনে বন্ধ যন্ত্রণার প্রতিধ্বনি — যেখানে প্রাণীদের কান্না প্রতিফলিত হয় মানুষের নীরবতায় -চতুর্থ পর্ব ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ৮৪১ জন মিরপুরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড—গার্মেন্টস কারখানা ও কেমিক্যাল গুদামে ৯ জনের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের শুল্কের আসল বোঝা: ভোক্তা ও কোম্পানিই এখন মূল দাম দিচ্ছে এলএনজি বাড়ানোর পরিকল্পনা—দাম কমবে, নাকি পাইপলাইনই বাধা? ব্রিটিশ রাজনীতিকদের প্রতি গুপ্তচরবৃত্তির হুমকি—রাশিয়া ও চীনের কার্যক্রমে সতর্ক করল এমআই৫ সুন্দরবনের মাডস্কিপার: হারিয়ে যাওয়া ইন্ডিকেটর প্রজাতি ও ডাঙায় ওঠার বিবর্তন-গল্প

ভারতের বিহার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন: আসন বণ্টনে এনডিএ ঐকমত্য—বিজেপি ও জেডিইউ ১০১ করে, চিরাগের দখলে ২৯

আসন বণ্টনের চূড়ান্ত রূপরেখা

আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিহার বিধানসভা নির্বাচনের জন্য রবিবার এনডিএ জোটে চূড়ান্ত আসন বণ্টন চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। বিজেপি ও জনতা দল (ইউনাইটেড) উভয়েই ১০১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। চিরাগ পাসওয়ানের নেতৃত্বাধীন লোক জনশক্তি পার্টি (রাম বিকাশ) পাবে ২৯টি আসন, আর জিতন রাম মাঞ্জির হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা (সেক্যুলার) ও উপেন্দ্র কুশওয়াহার নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চা (আরএলএম) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ৬টি করে আসনে।

এই প্রথমবারের মতো ১৯৯৬ সালের পর থেকে বিজেপি ও জেডিইউ সমান সংখ্যক আসনে লড়তে যাচ্ছে। ২০২০ সালে জেডিইউ ১২২ ও বিজেপি ১২১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল।

দীর্ঘ আলোচনার পর সমঝোতা

বহু সপ্তাহের আলোচনা ও টানাপোড়েন শেষে এই সমঝোতায় পৌঁছেছে এনডিএ। এলজেপি (আরভি) শুরুতে ৪০টি আসন দাবি করেছিল, পরে তা ৩৫ এ নামায়। অন্যদিকে, মাঞ্জি চেয়েছিলেন ১৫টি আসন। শেষ পর্যন্ত বিজেপি এলজেপিকে ২০-২৫ আসনে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইলেও, দলটির ভোট প্রভাব বিবেচনায় তা বাড়িয়ে ২৯ করা হয়।

২৭ বছর পর দিল্লিতে বিজেপির ক্ষমতা দখল

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠকে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং দিল্লি ও বিহার রাজ্যের শীর্ষ বিজেপি নেতারা।

চিরাগ পাসওয়ানের ‘কঠিন দর-কষাকষি’

এলজেপির (আরভি) দাবি ছিল আলোচনার সবচেয়ে বড় বাধা। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দলটি ৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবকটিতেই জয় পায় এবং ৬% ভোট পায়—যা তাদের দর-কষাকষির অবস্থানকে মজবুত করে। তবে বিজেপি সূত্র জানায়, এই সাফল্যের মূল কারণ ছিল মোদির নেতৃত্ব, এলজেপির নিজস্ব শক্তি নয়।

২০২০ সালের নির্বাচনে এলজেপি ২৪৩ আসনের মধ্যে ১৩৫টিতে লড়েছিল, যার ফলে এনডিএর ক্ষতি হয়। অনেক ক্ষেত্রে এলজেপির ভোটসংখ্যা বিজয়ী প্রার্থীর ব্যবধানের চেয়েও বেশি ছিল, যা ২৭টি আসনে জেডিইউ-কে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে।

একজন জ্যেষ্ঠ বিজেপি নেতা বলেন, “এলজেপি (আরভি) আসলে তার প্রাপ্যের চেয়েও বেশি আসন পেয়েছে। শুরুতে আমরা ২০টির বেশি দিতে রাজি ছিলাম না, পরে তা ২৩, তারপর ২৬, আর শেষ পর্যন্ত চিরাগের জোরাজুরিতে ২৯টি দিতে হয়।”

Sanjay Kumar Jha: The New Face Steering JD(U)'S National Strategy | Nation

অন্য এক নেতা বলেন, “চিরাগ ছিলেন কড়া দরদাতা। তিনি কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র, তাই তার দাবিগুলো মেনে নিতে হয়েছে। মাঞ্জি ৬টি আসনে রাজি হন প্রধানমন্ত্রীর ফোন পাওয়ার পর। তিনি ভবিষ্যতে একটি বিধান পরিষদ সদস্য (এমএলসি) পদ চান।”

এনডিএর ঐক্যের বার্তা

জেডিইউ-এর জাতীয় কার্যকরী সভাপতি সঞ্জয় ঝা বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এনডিএ ইতোমধ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে আসন বণ্টন চূড়ান্ত করেছে, যেখানে মহাগঠবন্ধন এখনো আসন নিয়ে বিবাদে জড়িত। এটা প্রমাণ করে, আমরা ঐক্যবদ্ধ শক্তি।”

কুশওয়াহা ও অন্যান্য মিত্রদের অবস্থান

আরএলএম ৬টি আসনে লড়বে—মহুয়া, উজিয়ারপুর, সাসারাম, দিনারা, মধুবনী ও বজপাত্তি। দলকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে উপেন্দ্র কুশওয়াহা আগামী এপ্রিল মেয়াদ শেষের পরও রাজ্যসভার সদস্য থাকতে পারবেন। বিজেপির এক নেতা বলেন, “গত নির্বাচনে কুশওয়াহার প্রভাব শাহাবাদ ও মগধ অঞ্চলে এনডিএর ক্ষতি করেছিল। তাই এবার তাকে মিত্র হিসেবে রাখা জরুরি ছিল।”

Bihar Elections 2020: JDU, BJP may contest on 50-50 seat sharing formula |  বিহার নির্বাচনে ৫০-৫০ ফর্মুলার পক্ষে বিজেপি, বেশি আসন চায় জেডিইউ

জেডিইউ-বিজেপির সমতা ও নতুন বাস্তবতা

এইবারের আলোচনায় বিজেপি মূল নেতৃত্ব দিয়েছে, যেখানে জেডিইউ ছোট মিত্রদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা থেকে বিরত থাকে। নীতীশ কুমারের দল এক আসন বেশি চেয়ে নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল, যুক্তি দিয়েছিল যে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে তাদের ‘স্ট্রাইক রেট’ বিজেপির চেয়ে সামান্য ভালো ছিল। তবে বিজেপি পাল্টা যুক্তি দেয় যে, ২০২০ সালে জেডিইউ-এর আসন সংখ্যা ৭৪ থেকে নেমে ৪৩-এ এসেছিল। শেষ পর্যন্ত জেডিইউ সমান আসনে লড়তে রাজি হয়।

নতুন দলের সুযোগ নেই

এই আসন বণ্টনে নতুন কোনো দলের জায়গা থাকছে না। ফলে মুখেশ সাহানির বিকাশশীল ইনসান পার্টির (ভিআইপি) এনডিএতে ফেরার সম্ভাবনা কার্যত শেষ হয়ে গেল।

 

#বিহারনির্বাচন #এনডিএচুক্তি #বিজেপিজেডিইউ #চিরাগপাসওয়ান #নীতীশকুমার #লোকজনশক্তিপার্টি #বিহাররাজনীতি

জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষকদের সম্মান শুধু কথায় নয়, বাস্তব পদক্ষেপে দিতে হবে—জি. এম. কাদের

ভারতের বিহার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন: আসন বণ্টনে এনডিএ ঐকমত্য—বিজেপি ও জেডিইউ ১০১ করে, চিরাগের দখলে ২৯

০৩:৫২:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

আসন বণ্টনের চূড়ান্ত রূপরেখা

আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিহার বিধানসভা নির্বাচনের জন্য রবিবার এনডিএ জোটে চূড়ান্ত আসন বণ্টন চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। বিজেপি ও জনতা দল (ইউনাইটেড) উভয়েই ১০১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। চিরাগ পাসওয়ানের নেতৃত্বাধীন লোক জনশক্তি পার্টি (রাম বিকাশ) পাবে ২৯টি আসন, আর জিতন রাম মাঞ্জির হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা (সেক্যুলার) ও উপেন্দ্র কুশওয়াহার নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চা (আরএলএম) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ৬টি করে আসনে।

এই প্রথমবারের মতো ১৯৯৬ সালের পর থেকে বিজেপি ও জেডিইউ সমান সংখ্যক আসনে লড়তে যাচ্ছে। ২০২০ সালে জেডিইউ ১২২ ও বিজেপি ১২১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল।

দীর্ঘ আলোচনার পর সমঝোতা

বহু সপ্তাহের আলোচনা ও টানাপোড়েন শেষে এই সমঝোতায় পৌঁছেছে এনডিএ। এলজেপি (আরভি) শুরুতে ৪০টি আসন দাবি করেছিল, পরে তা ৩৫ এ নামায়। অন্যদিকে, মাঞ্জি চেয়েছিলেন ১৫টি আসন। শেষ পর্যন্ত বিজেপি এলজেপিকে ২০-২৫ আসনে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইলেও, দলটির ভোট প্রভাব বিবেচনায় তা বাড়িয়ে ২৯ করা হয়।

২৭ বছর পর দিল্লিতে বিজেপির ক্ষমতা দখল

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠকে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং দিল্লি ও বিহার রাজ্যের শীর্ষ বিজেপি নেতারা।

চিরাগ পাসওয়ানের ‘কঠিন দর-কষাকষি’

এলজেপির (আরভি) দাবি ছিল আলোচনার সবচেয়ে বড় বাধা। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দলটি ৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবকটিতেই জয় পায় এবং ৬% ভোট পায়—যা তাদের দর-কষাকষির অবস্থানকে মজবুত করে। তবে বিজেপি সূত্র জানায়, এই সাফল্যের মূল কারণ ছিল মোদির নেতৃত্ব, এলজেপির নিজস্ব শক্তি নয়।

২০২০ সালের নির্বাচনে এলজেপি ২৪৩ আসনের মধ্যে ১৩৫টিতে লড়েছিল, যার ফলে এনডিএর ক্ষতি হয়। অনেক ক্ষেত্রে এলজেপির ভোটসংখ্যা বিজয়ী প্রার্থীর ব্যবধানের চেয়েও বেশি ছিল, যা ২৭টি আসনে জেডিইউ-কে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে।

একজন জ্যেষ্ঠ বিজেপি নেতা বলেন, “এলজেপি (আরভি) আসলে তার প্রাপ্যের চেয়েও বেশি আসন পেয়েছে। শুরুতে আমরা ২০টির বেশি দিতে রাজি ছিলাম না, পরে তা ২৩, তারপর ২৬, আর শেষ পর্যন্ত চিরাগের জোরাজুরিতে ২৯টি দিতে হয়।”

Sanjay Kumar Jha: The New Face Steering JD(U)'S National Strategy | Nation

অন্য এক নেতা বলেন, “চিরাগ ছিলেন কড়া দরদাতা। তিনি কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র, তাই তার দাবিগুলো মেনে নিতে হয়েছে। মাঞ্জি ৬টি আসনে রাজি হন প্রধানমন্ত্রীর ফোন পাওয়ার পর। তিনি ভবিষ্যতে একটি বিধান পরিষদ সদস্য (এমএলসি) পদ চান।”

এনডিএর ঐক্যের বার্তা

জেডিইউ-এর জাতীয় কার্যকরী সভাপতি সঞ্জয় ঝা বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এনডিএ ইতোমধ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে আসন বণ্টন চূড়ান্ত করেছে, যেখানে মহাগঠবন্ধন এখনো আসন নিয়ে বিবাদে জড়িত। এটা প্রমাণ করে, আমরা ঐক্যবদ্ধ শক্তি।”

কুশওয়াহা ও অন্যান্য মিত্রদের অবস্থান

আরএলএম ৬টি আসনে লড়বে—মহুয়া, উজিয়ারপুর, সাসারাম, দিনারা, মধুবনী ও বজপাত্তি। দলকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে উপেন্দ্র কুশওয়াহা আগামী এপ্রিল মেয়াদ শেষের পরও রাজ্যসভার সদস্য থাকতে পারবেন। বিজেপির এক নেতা বলেন, “গত নির্বাচনে কুশওয়াহার প্রভাব শাহাবাদ ও মগধ অঞ্চলে এনডিএর ক্ষতি করেছিল। তাই এবার তাকে মিত্র হিসেবে রাখা জরুরি ছিল।”

Bihar Elections 2020: JDU, BJP may contest on 50-50 seat sharing formula |  বিহার নির্বাচনে ৫০-৫০ ফর্মুলার পক্ষে বিজেপি, বেশি আসন চায় জেডিইউ

জেডিইউ-বিজেপির সমতা ও নতুন বাস্তবতা

এইবারের আলোচনায় বিজেপি মূল নেতৃত্ব দিয়েছে, যেখানে জেডিইউ ছোট মিত্রদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা থেকে বিরত থাকে। নীতীশ কুমারের দল এক আসন বেশি চেয়ে নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল, যুক্তি দিয়েছিল যে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে তাদের ‘স্ট্রাইক রেট’ বিজেপির চেয়ে সামান্য ভালো ছিল। তবে বিজেপি পাল্টা যুক্তি দেয় যে, ২০২০ সালে জেডিইউ-এর আসন সংখ্যা ৭৪ থেকে নেমে ৪৩-এ এসেছিল। শেষ পর্যন্ত জেডিইউ সমান আসনে লড়তে রাজি হয়।

নতুন দলের সুযোগ নেই

এই আসন বণ্টনে নতুন কোনো দলের জায়গা থাকছে না। ফলে মুখেশ সাহানির বিকাশশীল ইনসান পার্টির (ভিআইপি) এনডিএতে ফেরার সম্ভাবনা কার্যত শেষ হয়ে গেল।

 

#বিহারনির্বাচন #এনডিএচুক্তি #বিজেপিজেডিইউ #চিরাগপাসওয়ান #নীতীশকুমার #লোকজনশক্তিপার্টি #বিহাররাজনীতি