আসন বণ্টনের চূড়ান্ত রূপরেখা
আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিহার বিধানসভা নির্বাচনের জন্য রবিবার এনডিএ জোটে চূড়ান্ত আসন বণ্টন চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। বিজেপি ও জনতা দল (ইউনাইটেড) উভয়েই ১০১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। চিরাগ পাসওয়ানের নেতৃত্বাধীন লোক জনশক্তি পার্টি (রাম বিকাশ) পাবে ২৯টি আসন, আর জিতন রাম মাঞ্জির হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা (সেক্যুলার) ও উপেন্দ্র কুশওয়াহার নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চা (আরএলএম) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ৬টি করে আসনে।
এই প্রথমবারের মতো ১৯৯৬ সালের পর থেকে বিজেপি ও জেডিইউ সমান সংখ্যক আসনে লড়তে যাচ্ছে। ২০২০ সালে জেডিইউ ১২২ ও বিজেপি ১২১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল।
দীর্ঘ আলোচনার পর সমঝোতা
বহু সপ্তাহের আলোচনা ও টানাপোড়েন শেষে এই সমঝোতায় পৌঁছেছে এনডিএ। এলজেপি (আরভি) শুরুতে ৪০টি আসন দাবি করেছিল, পরে তা ৩৫ এ নামায়। অন্যদিকে, মাঞ্জি চেয়েছিলেন ১৫টি আসন। শেষ পর্যন্ত বিজেপি এলজেপিকে ২০-২৫ আসনে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইলেও, দলটির ভোট প্রভাব বিবেচনায় তা বাড়িয়ে ২৯ করা হয়।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠকে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং দিল্লি ও বিহার রাজ্যের শীর্ষ বিজেপি নেতারা।
চিরাগ পাসওয়ানের ‘কঠিন দর-কষাকষি’
এলজেপির (আরভি) দাবি ছিল আলোচনার সবচেয়ে বড় বাধা। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দলটি ৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবকটিতেই জয় পায় এবং ৬% ভোট পায়—যা তাদের দর-কষাকষির অবস্থানকে মজবুত করে। তবে বিজেপি সূত্র জানায়, এই সাফল্যের মূল কারণ ছিল মোদির নেতৃত্ব, এলজেপির নিজস্ব শক্তি নয়।
২০২০ সালের নির্বাচনে এলজেপি ২৪৩ আসনের মধ্যে ১৩৫টিতে লড়েছিল, যার ফলে এনডিএর ক্ষতি হয়। অনেক ক্ষেত্রে এলজেপির ভোটসংখ্যা বিজয়ী প্রার্থীর ব্যবধানের চেয়েও বেশি ছিল, যা ২৭টি আসনে জেডিইউ-কে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে।
একজন জ্যেষ্ঠ বিজেপি নেতা বলেন, “এলজেপি (আরভি) আসলে তার প্রাপ্যের চেয়েও বেশি আসন পেয়েছে। শুরুতে আমরা ২০টির বেশি দিতে রাজি ছিলাম না, পরে তা ২৩, তারপর ২৬, আর শেষ পর্যন্ত চিরাগের জোরাজুরিতে ২৯টি দিতে হয়।”
অন্য এক নেতা বলেন, “চিরাগ ছিলেন কড়া দরদাতা। তিনি কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র, তাই তার দাবিগুলো মেনে নিতে হয়েছে। মাঞ্জি ৬টি আসনে রাজি হন প্রধানমন্ত্রীর ফোন পাওয়ার পর। তিনি ভবিষ্যতে একটি বিধান পরিষদ সদস্য (এমএলসি) পদ চান।”
এনডিএর ঐক্যের বার্তা
জেডিইউ-এর জাতীয় কার্যকরী সভাপতি সঞ্জয় ঝা বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এনডিএ ইতোমধ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে আসন বণ্টন চূড়ান্ত করেছে, যেখানে মহাগঠবন্ধন এখনো আসন নিয়ে বিবাদে জড়িত। এটা প্রমাণ করে, আমরা ঐক্যবদ্ধ শক্তি।”
কুশওয়াহা ও অন্যান্য মিত্রদের অবস্থান
আরএলএম ৬টি আসনে লড়বে—মহুয়া, উজিয়ারপুর, সাসারাম, দিনারা, মধুবনী ও বজপাত্তি। দলকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে উপেন্দ্র কুশওয়াহা আগামী এপ্রিল মেয়াদ শেষের পরও রাজ্যসভার সদস্য থাকতে পারবেন। বিজেপির এক নেতা বলেন, “গত নির্বাচনে কুশওয়াহার প্রভাব শাহাবাদ ও মগধ অঞ্চলে এনডিএর ক্ষতি করেছিল। তাই এবার তাকে মিত্র হিসেবে রাখা জরুরি ছিল।”
জেডিইউ-বিজেপির সমতা ও নতুন বাস্তবতা
এইবারের আলোচনায় বিজেপি মূল নেতৃত্ব দিয়েছে, যেখানে জেডিইউ ছোট মিত্রদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা থেকে বিরত থাকে। নীতীশ কুমারের দল এক আসন বেশি চেয়ে নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিল, যুক্তি দিয়েছিল যে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে তাদের ‘স্ট্রাইক রেট’ বিজেপির চেয়ে সামান্য ভালো ছিল। তবে বিজেপি পাল্টা যুক্তি দেয় যে, ২০২০ সালে জেডিইউ-এর আসন সংখ্যা ৭৪ থেকে নেমে ৪৩-এ এসেছিল। শেষ পর্যন্ত জেডিইউ সমান আসনে লড়তে রাজি হয়।
নতুন দলের সুযোগ নেই
এই আসন বণ্টনে নতুন কোনো দলের জায়গা থাকছে না। ফলে মুখেশ সাহানির বিকাশশীল ইনসান পার্টির (ভিআইপি) এনডিএতে ফেরার সম্ভাবনা কার্যত শেষ হয়ে গেল।
#বিহারনির্বাচন #এনডিএচুক্তি #বিজেপিজেডিইউ #চিরাগপাসওয়ান #নীতীশকুমার #লোকজনশক্তিপার্টি #বিহাররাজনীতি