এ বছরের নোবেল অর্থনীতি পুরস্কার পাওয়া ফরাসি অর্থনীতিবিদ ফিলিপ আগিয়োঁ সতর্ক করে বলেছেন, ইউরোপ বহুদিন ধরে ‘ধাপে ধাপে’ উন্নয়নের গণ্ডিতে ঘুরপাক খাচ্ছে—ফলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় মহাদেশটি প্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়ছে। তবে সঠিক নীতি, মৌলিক গবেষণায় বিনিয়োগ ও প্রতিভা বিকাশে জোর দিলে ইউরোপ এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
প্রেক্ষাপট—পুরস্কারের পরই কড়া বার্তা
নোবেল পুরস্কার ঘোষণার অল্প সময় পরই ফ্রান্সের সরকারি টিভি চ্যানেল ফ্রান্স ২–এর সন্ধ্যার সংবাদে আগিয়োঁ বলেন, ইউরোপ দ্রুত প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছে। তাঁর ভাষ্য, ১৯৯০–এর দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং পরে চীন বড় ধরনের উদ্ভাবন ও হাই–টেক অগ্রগতি দেখিয়েছে, অথচ ইউরোপ সেগুলোর সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি।
কেন ইউরোপ পিছিয়ে—‘ধাপে ধাপে’ উন্নয়নের সীমাবদ্ধতা
আগিয়োঁর মতে, ইউরোপ মূলত ইনক্রিমেন্টাল বা ধীরগতির, মাঝারি প্রযুক্তিনির্ভর (মিড–টেক) উদ্ভাবনে আটকে আছে। বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যুগান্তকারী প্রযুক্তি, গবেষণা ও উদ্ভাবনে বড় বিনিয়োগ করে একের পর এক ‘ব্রেকথ্রু’ সৃষ্টি করেছে। এ প্রবণতা চলতে থাকলে ইউরোপ প্রান্তিক হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকবে।
উদ্ভাবনই প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন—নোবেলজয়ের তাৎপর্য
যে তত্ত্বের ওপর কাজ করে আগিয়োঁ নোবেল স্মারক অর্থনীতি পুরস্কার পেয়েছেন—তার কেন্দ্রবিন্দু হলো, উদ্ভাবনই দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি। এই গবেষণা তিনি আমেরিকান–ইসরায়েলি অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ জোয়েল মোকির ও কানাডীয় অর্থনীতিবিদ পিটার হাউইটের সঙ্গে যৌথভাবে উন্নত করেছেন। ফলে ইউরোপের উদ্ভাবন–ঘাটতি নিয়ে তাঁর বর্তমান মূল্যায়ন আরও তাৎপর্য পায়।
করণীয়—‘সত্যিকারের উদ্ভাবনী’ হতে হবে
আগিয়োঁ জোর দিয়ে বলেন, ইউরোপকে এখন ‘সত্যিকারের উদ্ভাবনী’ হতে হবে—মৌলিক গবেষণা, গভীর প্রযুক্তি (ডিপ–টেক) এবং উচ্চ–প্রযুক্তি শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। নয়তো প্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়া থেকে অর্থনীতিতে চাপ এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় প্রান্তিক হওয়ার ঝুঁকি আরও বাড়বে।
আশাবাদ—ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ এখনও আছে
তাঁর মতে, পরিস্থিতি অপরিবর্তনীয় নয়। সঠিক নীতিগত উদ্যোগ, গবেষণা–উদ্ভাবনে বড় বিনিয়োগ, প্রতিভা বিকাশ এবং শিল্প–বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগিতা জোরদার করা গেলে ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে ব্যবধান কমাতে এবং প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় আবারও শক্ত অবস্থানে ফিরতে সক্ষম হবে।