যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতি সিঙ্গাপুরের ওষুধ শিল্পে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার পর দেশটির ওষুধ কোম্পানিগুলো এখন অপেক্ষা করছে ছাড়পত্র ও বিশেষ সুবিধার আশায়। তবে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে শুল্ক কার্যকর হওয়া সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে, যা সিঙ্গাপুরের জন্য এক নতুন কূটনৈতিক সুযোগ তৈরি করেছে।
মার্কিন শুল্ক নীতি নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্বেগ
সিঙ্গাপুরভিত্তিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রে নতুন কারখানা স্থাপন বা বিদ্যমান অবকাঠামো সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে তারা এখনো নিশ্চিত নয়, এসব পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নতুন শুল্ক থেকে ছাড় দেবে কি না।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, দেশের বাইরে তৈরি যেকোনো ‘ব্র্যান্ডেড বা পেটেন্টকৃত’ ওষুধের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, যদি কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন কারখানা না গড়ে। এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ১ অক্টোবর থেকে।
বাস্তবায়নে বিলম্ব ও আলোচনার সুযোগ
১৪ অক্টোবর সংসদে বাণিজ্য ও শিল্প বিষয়ক রাষ্ট্রমন্ত্রী গান সিও হুয়াং জানান, এই শুল্ক বাস্তবায়ন আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে, যাতে ওষুধ কোম্পানিগুলো ছাড় বা বিশেষ সুবিধার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে।
তিনি বলেন, বর্তমানে নির্মাণাধীন কারখানাগুলোর ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে এই শুল্ক প্রযোজ্য হবে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ রপ্তানির গড় পরিমাণ ছিল বছরে প্রায় ৩.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর বেশির ভাগই ‘অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট’ বা কাঁচামাল, যা ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলের মতো চূড়ান্ত পণ্য নয়।
দুই দেশের মধ্যে আলোচনার অগ্রগতি
নতুন শুল্ক নীতি নিয়ে সাতজন সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী গান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সিঙ্গাপুর এখনো পছন্দনীয় শুল্ক সুবিধা (preferential tariff arrangement) নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
উপ-প্রধানমন্ত্রী গান কিম ইয়ং সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠক করেন, যেখানে দুই দেশের মধ্যে একটি প্রাথমিক কাঠামো তৈরির বিষয় আলোচনা হয়।
শ্রমিক পার্টির সাংসদ লুই চুয়া জানতে চান, সিঙ্গাপুর কি যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ রপ্তানিতে শূন্য শুল্ক সুবিধা পেতে পারে? এর জবাবে মন্ত্রী জানান, এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা চলছে এবং অন্যান্য দেশ—যেমন জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া—আগেই দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে তাদের ওষুধ রপ্তানিতে বিশেষ শুল্ক সুবিধা অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, “আমরা সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি ও কোম্পানিগুলোর স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ফাইজারের উদাহরণ ও ছাড় চুক্তি
মার্কিন ওষুধ কোম্পানি ফাইজার, যার সিঙ্গাপুরে উৎপাদন ও গবেষণা কার্যক্রম রয়েছে, তারা ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন বছরের শুল্ক ছাড় পেয়েছে। এই ছাড়ের শর্ত হিসেবে কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কিছু ওষুধের দাম সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে এবং সরাসরি মার্কিন জনগণের কাছে বিক্রি করতে সম্মত হয়েছে।
মন্ত্রী গান বলেন, সিঙ্গাপুরের অর্থনীতিতে ওষুধশিল্পের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের শীর্ষ ১০ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির মধ্যে আটটি সিঙ্গাপুরে উৎপাদন ও গবেষণা কেন্দ্র পরিচালনা করে।
এর মধ্যে ফাইজার ছাড়াও অ্যামজেন, মার্ক অ্যান্ড কো., নোভার্টিস ও অ্যাবভির মতো বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বিনিয়োগ আকর্ষণে নতুন পদক্ষেপ
সংসদ সদস্য অং ওয়েই নেং জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক চাপে সিঙ্গাপুর কি বিদেশি ওষুধ কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেবে?
মন্ত্রী জানান, “আমাদের অর্থনৈতিক সংস্থাগুলো বিশ্বব্যাপী নতুন উৎপাদন ও গবেষণা বিনিয়োগ আকর্ষণ, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা এবং সিঙ্গাপুরবাসীর জন্য ভালো চাকরির সুযোগ তৈরির কাজ অব্যাহত রেখেছে।”
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি ও বৈশ্বিক পরিবর্তনগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, পৃথিবী এখন অনিশ্চয়তার নতুন যুগে প্রবেশ করেছে।
নতুন অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা টাস্কফোর্স
এই অনিশ্চয়তা মোকাবিলায় সিঙ্গাপুর সরকার ‘সিঙ্গাপুর ইকোনমিক রেজিলিয়েন্স টাস্কফোর্স’ গঠন করেছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন উপ-প্রধানমন্ত্রী গান কিম ইয়ং।
এই টাস্কফোর্সের অধীনে পাঁচটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা দেশটির প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো এবং স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম উন্নত করার বিষয়ে সুপারিশ তৈরি করবে।
কমিটিগুলোর চূড়ান্ত প্রতিবেদন ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশ করা হবে, যেখানে দেশটির অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
সিঙ্গাপুর_ওষুধশিল্প, যুক্তরাষ্ট্র_শুল্ক, ট্রাম্প_নীতি, ফাইজার, সিঙ্গাপুর_অর্থনীতি, রপ্তানি_বাণিজ্য, ইকোনমিক_রেজিলিয়েন্স_টাস্কফোর্