পরিস্থিতি সংক্ষিপ্ত বিবরণ
মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা জানিয়েছেন, নিজের জীবনের নিরাপত্তার জন্য তিনি একটি “নিরাপদ স্থান” খুঁজে নিয়েছেন। যদিও তিনি তাঁর অবস্থান প্রকাশ করেননি, রাষ্ট্রপ্রধান দাবি করেছেন যে একদল সেনা সদস্য ও রাজনীতিবিদ তাঁর হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। এই ঘোষণাটি এসেছে এমন সময়ে, যখন কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ চলছে—যার মূল দাবি তাঁর পদত্যাগ।
প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয় ফেসবুকে; নাগরিকদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও কূপচেষ্টা হয়েছে।
অন্যদিকে কিছু অননুমোদিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে তিনি একটি ফরাসি সামরিক বিমানে চড়ে দেশ ত্যাগ করেছেন। তবে এই তথ্য সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।
দেশে উত্তাল প্রতিবাদ ও রাজনৈতিক উত্তেজনা
প্রতিবাদের কারণ ও সময়রেখা
- দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু হয় ২৫ সেপ্টেম্বর, বিশেষ করে রাজধানী আন্তানানারিভোতে। শুরুতে বিদ্যুৎ ও পানির বিভাজন সংক্রান্ত ক্ষোভ থেকেই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়।
- এই প্রাথমিক দাবি দ্রুতই রাজনৈতিক প্রতিরোধে রূপ নেয়—দুর্নীতি, বেকারত্ব ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির বিরুদ্ধেও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
- সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ২২ জন নিহত এবং ১০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন, যদিও সরকার এই সংখ্যা অস্বীকার করেছে।
- প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা যায়, নিরাপত্তা বাহিনী অনেক সময় গুলি চালিয়েছে এবং এক শিশুর মৃত্যু ঘটেছে গ্যাস ও ধোঁয়ার প্রভাবে।
রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারের প্রতিক্রিয়া
- প্রথমে রাজোয়েলিনা তাঁর পুরো সরকার বরখাস্ত করেন এবং কিছু রক্ষণমূলক ছাড় দেন, কিন্তু তাতেও আন্দোলন থামেনি।
- প্রতিবাদের তীব্রতা বাড়তে থাকলে প্রভাবশালী সামরিক ইউনিট CAPSAT রাজোয়েলিনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং দাবি করে যে তারা সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেবে।
- CAPSAT-এর পক্ষ থেকে জেনারেল ডেমোস্তেন পিকুলাসকে নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
- সোমবার অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে CAPSAT নেতৃত্ব ঘোষণা করে যে তারা দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবে।
প্রেসিডেন্টের বক্তব্য ও আশ্বাস
রাজোয়েলিনা ভিডিওবার্তার শুরুতেই বলেন:
“২৫ সেপ্টেম্বর থেকে আমার ওপর হত্যাচেষ্টা ও কূপচেষ্টা হয়েছে। কিছু সেনা ও রাজনীতিক আমাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল। নিজের জীবন রক্ষার্থে আমাকে একটি নিরাপদ স্থান খুঁজে নিতে বাধ্য করা হয়েছে।”
তিনি আরও যোগ করেন:
“এই সমস্যাগুলির সমাধানের একমাত্র পথ হলো দেশের সংবিধানকে সম্মান করা।”
তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে, তিনি পদত্যাগ করছেন না এবং “সমাধানের পথে” আছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভূ-রাজনীতি
- ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, রাজারেলিনা ফরাসি বিমানে দেশ ত্যাগ করেছেন কিনা তা নিশ্চিত নয়, তবে মাদাগাস্কারে “সংবিধানগত শৃঙ্খলা” বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
- আফ্রিকান ইউনিয়ন ঘোষণা করেছে যে তারা কোনো “অবৈধ সরকার পরিবর্তন” মেনে নেবে না।
- প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী মরিশাসে পালিয়ে গেছেন, যাদের মধ্যে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান এনসেই এবং ব্যবসায়ী মামিনিয়ানা রাভাতোমাঙ্গা রয়েছেন।
রাজনৈতিক ইতিহাস ও অর্থনৈতিক সংকট
- প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও মাদাগাস্কার বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি—জনসংখ্যার প্রায় ৭৫ শতাংশই দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) জানিয়েছে, মাত্র এক-তৃতীয়াংশ জনগণ বিদ্যুৎ সুবিধা পায়।
- স্বাধীনতার পর দেশটি বহু রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখোমুখি হয়েছে। ২০০৯ সালের এক আন্দোলনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মার্ক রাভালোমানানা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং রাজোয়েলিনা তখন ক্ষমতায় আসেন।
- রাজনীতিতে প্রবেশের আগে রাজোয়েলিনা একজন উদ্যোক্তা ও ডি.জে. ছিলেন। শুরুতে ‘যুবকেন্দ্রিক’ নেতা হিসেবে জনপ্রিয়তা পেলেও পরবর্তী সময়ে দুর্নীতি ও অদক্ষ প্রশাসনের অভিযোগে তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- ২০২৩ সালের নির্বাচনে তিনি পুনর্নির্বাচিত হন, কিন্তু ভোটে অনিয়ম ও দ্বৈত নাগরিকত্ব ইস্যু নতুন করে বিতর্ক তৈরি করে।
ভবিষ্যতের প্রশ্ন ও সম্ভাবনা
- বিরোধী দল TIM প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে “পদত্যাগে অবহেলা”র অভিযোগ আনার পরিকল্পনা করছে।
- CAPSAT বিদ্রোহ রাজোয়েলিনার ক্ষমতার ভিতকে নড়বড়ে করেছে, এবং সেনাবাহিনীর আনুগত্য নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
- এখন প্রধান প্রশ্ন—মাদাগাস্কার কত দ্রুত স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে পারবে, এবং গণআন্দোলন ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলা শেষ পর্যন্ত কোন পথে যাবে।
রাজোয়েলিনার ‘নিরাপদ আশ্রয়’-এর ঘোষণার পর মাদাগাস্কার নতুন এক অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়িয়ে। রাজনৈতিক সংকট এখন শুধু নেতৃত্বের নয়, বরং পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থার স্থিতিশীলতার পরীক্ষায় রূপ নিয়েছে।
# মাদাগাস্কার_সংকট, #আন্দ্রি_রাজোয়েলিনা,# সেনা_বিদ্রোহ, #কূপচেষ্টা, #আন্তর্জাতিক_রাজনীতি,# আফ্রিকান_ইউনিয়ন, #মাদাগাস্কার_প্রতিবাদ, #ফ্রান্স,# IMF, #আফ্রিকা