বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় একযোগে পালিত হতে যাচ্ছে বাউল সম্রাট ও দার্শনিক ফকির লালন শাহের ১৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে লালন উৎসব ও মেলা। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে, কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আয়োজিত এই উৎসব তিন দিনব্যাপী চলবে—১৭ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত।
লালনের দর্শনকে ঘিরে সারাদেশে আয়োজন
লালনের মানবতাবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ দর্শনকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে এবার প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী লালন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবটি কুষ্টিয়ায় ১৭ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে, আর রাজধানী ঢাকায় আয়োজন হবে ১৮ অক্টোবর। পাশাপাশি ১৭ অক্টোবর দেশের সব জেলা একযোগে লালন মেলা ও উৎসবের অংশীদার হবে।
কুষ্টিয়ায় মূল অনুষ্ঠান ও উদ্বোধন
কুষ্টিয়ার চৌরিয়া, কুমারখালী উপজেলার লালন আখড়াবাড়িতে মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে ১৭ অক্টোবর বিকেল ৪টায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সারয়ার ফারুকী। স্বাগত বক্তব্য দেবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফিদুর রহমান।
লালন দর্শনবিষয়ক বিশেষ বক্তৃতা পর্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও গবেষক অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। এছাড়া অংশ নেবেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক এ. এ. মামুন। পুরো অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরিফিন।
বাউল সুরে মুখর হবে লালন আখড়াবাড়ি
উদ্বোধনের পর লালন আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ জেগে উঠবে বাউল সুরে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বাউল ও ফকিররা পরিবেশন করবেন লালন গীতি ও আধ্যাত্মিক সঙ্গীত। অংশ নেবেন তুনতুন বাউল, সুনীল কর্মকার, রওশন ফকির, লতিফ শাহসহ বিশিষ্ট বাউল শিল্পীরা। পরবর্তী দুই দিন—১৮ ও ১৯ অক্টোবর—উৎসবস্থল ভরে উঠবে বাউল-ফকিরদের গান ও দর্শনে।
ঢাকায় সুফিবাদ ও সংগীতে ভরপুর আয়োজন
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও ১৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে লালন উৎসব ও মেলা। এখানে পরিবেশনা করবেন ইমন চৌধুরী ও বেঙ্গল সিম্ফনি, আলেয়া বেগম, লালন ব্যান্ড, নিরব অ্যান্ড বাউলস, মুজিব পারদেশি, পথিক নবী, সুচনা শেলী, বাউলা ব্যান্ড, আরূপ রাহী ও সমাজগীতসহ আরও অনেকে।
সারাদেশে একযোগে লালন উৎসবের আয়োজন
১৭ অক্টোবরের এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে। এটি শুধু একটি উৎসব নয়—লালনের মানবতাবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ ও মুক্তচিন্তার দর্শনকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার এক ঐতিহাসিক প্রয়াস। সারাদেশের বাউল, গবেষক, সংস্কৃতিকর্মী, শিল্পী ও অসংখ্য লালনভক্ত এই উৎসবে অংশ নেবেন, যা লালনের চেতনার ধারাবাহিকতায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।
#লালনশাহ, #বাউলসংস্কৃতি, #লালনউৎসব, #কুষ্টিয়া, #সংস্কৃতিমন্ত্রণালয়, #বাংলাদেশশিল্পকলাএকাডেমি, #বাউলগান, #ফকির, #লালনমেলা, #ঢাকাউৎসব