ইথানল মিশ্রণ কর্মসূচির সূচনা
ভারতে পেট্রলে ইথানল মিশ্রণের কর্মসূচি শুরু হয়েছিল মূলত আখচাষিদের সহায়তার উদ্দেশ্যে। চিনিকলগুলো যাতে আখ প্রক্রিয়াজাত করে অতিরিক্ত আয়ের উৎস পায় এবং কৃষকদের দ্রুত মূল্য পরিশোধ করতে পারে, সে জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
২০১৭–১৮ সাল পর্যন্ত চিনিকলগুলো ইথানল উৎপাদন করত শুধু “সি-হেভি মোলাসেস” বা আখ প্রক্রিয়াকরণের শেষ ধাপের উপজাত থেকে, যেখানে খুব সামান্য সুগার থাকে। ২০১৮–১৯ সাল থেকে মিলগুলো “বি-হেভি মোলাসেস” এবং সরাসরি আখের রস বা সিরাপ থেকেও ইথানল তৈরি শুরু করে। সরকার তাদের বাড়তি মূল্য নির্ধারণ করে দেয়, কারণ এই পদ্ধতিতে মিলগুলো চিনি বিক্রির একটি অংশ হারায়।
ফলে, ২০১৩–১৪ থেকে ২০১৮–১৯ সালের মধ্যে তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর (ওএমসি) কাছে সরবরাহ করা ইথানলের পরিমাণ বেড়ে যায় ৩৮ কোটি লিটার থেকে প্রায় ১৮৯ কোটি লিটারে। একই সময়ে পেট্রলে ইথানল মিশ্রণের জাতীয় গড়ও ১.৬% থেকে বেড়ে হয় ৪.৯%।
আখ থেকে শস্যের দিকে পরিবর্তন
তবে শুধু আখ নয়, ২০১৮–১৯ সাল থেকে সরকার চাল, ভুট্টা ও নষ্ট খাদ্যশস্য থেকেও ইথানল উৎপাদনের জন্য আলাদা মূল্য নির্ধারণ করে। চিনিকলগুলোকে মৌসুমের বাইরেও সচল রাখতে এই বহুমুখী ফিডস্টক ডিস্টিলারি স্থাপন করা হয় — আখের মৌসুমে মোলাসেস ব্যবহার করে এবং অফ-সিজনে শস্য ব্যবহার করে।
ইথানল তৈরির প্রক্রিয়ায় শর্করা ফারমেন্টেশনের মাধ্যমে অ্যালকোহলে রূপান্তরিত হয়। আখে এটি সহজে পাওয়া যায়, কিন্তু শস্যে স্টার্চ আকারে থাকে — যা আগে ভেঙে নিতে হয়। এই প্রক্রিয়া সত্ত্বেও ভুট্টা ও চালভিত্তিক ডিস্টিলারি দ্রুত বিস্তৃত হয়। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে অসংখ্য নতুন কারখানা গড়ে ওঠে।
শস্য এখন প্রধান উৎস
২০২৩–২৪ সরবরাহ বছরে ওএমসি মোট ৬৭২.৪৯ কোটি লিটার ইথানল সংগ্রহ করে, যেখানে জাতীয় গড় মিশ্রণের হার হয় ১৪.৬%। এর মধ্যে আখভিত্তিক ফিডস্টক থেকে আসে মাত্র ২৭০.২৭ কোটি লিটার বা ৪০.২%। বাকিটা ৪০২.২২ কোটি লিটার ছিল শস্য থেকে — ভুট্টা ২৮৬.৪৭ কোটি, নষ্ট খাদ্যশস্য ১১৫.৬২ কোটি এবং এফসিআই-এর চাল মাত্র ০.১৩ কোটি লিটার।
বর্তমান বছরেও একই প্রবণতা বজায় রয়েছে — ৯২০ কোটি লিটার মোট সরবরাহের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই শস্য থেকে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ভুট্টা একাই প্রায় ৪২০ কোটি লিটার ইথানল দেবে।
শস্যের সাফল্যের পেছনের কারণ
দুটি কারণ এই পরিবর্তনের জন্য দায়ী।
প্রথমত, ২০২৩–২৪ ও ২০২৪–২৫ সালে খরার কারণে আখ উৎপাদন কমে যায়। সরকার বি-হেভি মোলাসেস ও আখের রস থেকে ইথানল উৎপাদনে সীমা আরোপ করে। ফলে, এই পথে উৎপাদিত চিনির পরিমাণ ২০২২–২৩ সালের ৪৫ লাখ টন থেকে নেমে আসে যথাক্রমে ২৪ ও ৩৫ লাখ টনে। দেশটির মোট চিনি উৎপাদনও ২০২১–২২ সালের ৩৫৯.২৫ লাখ টন থেকে ২০২৪–২৫ সালে ২৬১.১ লাখ টনে নেমে আসে।
দ্বিতীয়ত, দাম নির্ধারণের ব্যবধান। ২০২৪–২৫ সালের জন্য ভুট্টাভিত্তিক ইথানলের মূল্য নির্ধারিত হয়েছে প্রতি লিটার ৭১.৮৬ রুপি, যেখানে আখভিত্তিক মোলাসেস বা রস থেকে উৎপাদিত ইথানলের দাম ছিল ৫৭.৯৭–৬৫.৬১ রুপি। ফলে ভুট্টা থেকে ইথানল উৎপাদন ব্যবসায়িকভাবে আরও লাভজনক হয়ে ওঠে।
নীতিগত প্রভাব ও ভবিষ্যৎ
২০২৫–২৬ সালের জন্য ওএমসি মোট ১,০৫০ কোটি লিটার ইথানল সরবরাহের দরপত্র আহ্বান করেছে, ২০% মিশ্রণের লক্ষ্য নিয়ে। তবে, দরপত্রে প্রস্তাব এসেছে ১,৭৭৬.৪৯ কোটি লিটার — এর মধ্যে ১,৩০৪.৮৬ কোটি লিটার শস্য থেকে এবং ৪৭১.৬৩ কোটি লিটার আখভিত্তিক উৎস থেকে। সবচেয়ে বড় অংশ ছিল ভুট্টা (৮৩১.৮৯ কোটি লিটার) ও এফসিআই চাল (৩৯৬.৬০ কোটি লিটার)।
যদিও বাস্তবে ওএমসি-রা প্রয়োজনীয় ১,০৫০ কোটি লিটারই কিনবে, যার মধ্যে প্রায় ৬৫০ কোটি লিটার শস্য থেকে আসবে।
চ্যালেঞ্জ: অতিরিক্ত সক্ষমতা ও খাদ্য-বনাম-জ্বালানি দ্বন্দ্ব
ভারতে এখন প্রায় ৪৯৯টি ডিস্টিলারি রয়েছে, যারা প্রায় ৪০,০০০ কোটি রুপি বিনিয়োগ করে বছরে ১,৮২২ কোটি লিটার উৎপাদন ক্ষমতা তৈরি করেছে। কিন্তু পেট্রলে ইথানল মিশ্রণের প্রযুক্তিগত সীমা রয়েছে — অতিরিক্ত উৎপাদনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আরেকটি সমস্যা হলো ‘খাদ্য বনাম জ্বালানি’ বিতর্ক। ইথানল কর্মসূচি ভুট্টাচাষিদের জন্য নতুন বাজার সৃষ্টি করেছে বটে, কিন্তু এতে খাদ্য ও পশুখাদ্যের ওপর চাপ বাড়ছে। এক টন ভুট্টা থেকে গড়ে ৩৮০ লিটার ইথানল উৎপন্ন হয় — অর্থাৎ ২০২৪–২৫ সালে ৪২০ কোটি লিটার ইথানল উৎপাদনে প্রায় ১.১ কোটি টন ভুট্টা ব্যবহৃত হয়েছে।
দেশে ভুট্টার উৎপাদন বছরে প্রায় ৪২ মিলিয়ন টন, যার বড় অংশই পশুখাদ্য ও ডেইরি খাতে ব্যবহৃত হয়। ফলে জ্বালানি হিসেবে ভুট্টার টেকসই ব্যবহার এখন বড় প্রশ্ন।
একইভাবে, এফসিআই-এর উদ্বৃত্ত চাল থেকে উৎপাদিত ইথানলের ওপরও নির্ভরতা বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে সংকট সৃষ্টি করতে পারে যদি মজুত কমে যায়। তুলনামূলকভাবে আখভিত্তিক জ্বালানির ক্ষেত্রে এই দ্বন্দ্ব কম, কারণ দেশে চিনির চাহিদা বাড়ছে না।