দ্বন্দ্বের মধ্যেও সমঝোতার চেষ্টা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একদিকে প্রকাশ্যে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করছেন, অন্যদিকে আড়ালে বেইজিংয়ের ওপর চাপ বজায় রাখছেন—এই সূক্ষ্ম ভারসাম্য বর্তমানে ওয়াল স্ট্রিটের নিবিড় নজরে।
সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন ১ নভেম্বর থেকে চীনা আমদানির ওপর নতুন করে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেয়। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই ট্রাম্প অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সংকেত দেন যে যুক্তরাষ্ট্র এখন সংঘাত নয়, বরং শিথিলতা চায়।
চীনের বিরল মাটির খনিজ রপ্তানিতে নতুন সীমাবদ্ধতা আরোপের জবাবেই যুক্তরাষ্ট্র এই কঠোর শুল্কের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ এই বাণিজ্য উত্তেজনা বাজারে বড় ধরনের ধাক্কা দেয়, এবং ডাও জোন্স সূচকসহ প্রধান সূচকগুলোতে ব্যাপক বিক্রির চাপ পড়ে।
বাজারে পুনরুদ্ধার ও ইতিবাচক বার্তা
সোমবার মার্কিন বাজারে বড় উত্থান দেখা যায়—এসঅ্যান্ডপি সূচক ১.৬ শতাংশ ও নাসডাক ২.২ শতাংশ বেড়ে মে মাসের পর সর্বোচ্চ দৈনিক বৃদ্ধির রেকর্ড করে। ডাও জোন্স বাড়ে ৫৮৮ পয়েন্ট বা ১.৩ শতাংশ।
ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা চলছিল, প্রয়োজনে চীনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে—যেমন চীনা কোম্পানির বিনিয়োগ সীমিত করা, অবকাঠামো রক্ষা জোরদার করা, এমনকি নিষেধাজ্ঞা বা রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা।
তবে শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, অর্থমন্ত্রী বেসেন্ট ও অন্যান্য উপদেষ্টারা সিদ্ধান্ত নেন—বাজার স্থিতিশীল রাখাই এখন অগ্রাধিকার। তাই চীনের সঙ্গে নতুন উত্তেজনা না বাড়িয়ে সমঝোতার দিকে ঝোঁকা হবে।
ট্রাম্প এরপর নিজের সামাজিক মাধ্যম “ট্রুথ সোশ্যাল”-এ লেখেন, “চীন নিয়ে উদ্বিগ্ন হবেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা চাই চীনও এগিয়ে আসুক।”
চীনের প্রতিক্রিয়া ও সতর্ক অবস্থান
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রবিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা নতুন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা “সতর্ক ও সংযতভাবে” কার্যকর করবে—যা মূলত সামরিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সাধারণ বেসামরিক খাতে নয়।
এই বিবৃতিতে কোনো সরাসরি প্রতিশোধের হুমকি ছিল না—যা ইঙ্গিত দেয় বেইজিং সংঘাত প্রশমনে আগ্রহী। চীনা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমও ট্রাম্পের ১০০ শতাংশ শুল্ক হুমকির খবরকে গুরুত্ব না দিয়ে নীরব ভূমিকা নিচ্ছে, যাতে আলোচনার পথ খোলা থাকে।
তবুও চীন এখনো তাদের বিরল মাটির খনিজ রপ্তানি নীতিতে পূর্ণ প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দেয়নি। এর ফলে আসন্ন বাণিজ্য আলোচনায় নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সতর্ক অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে চীন কেবল নরম অবস্থান নয়, বরং পুরোপুরি প্রত্যাহার করুক সেই রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আইনটি।
অর্থমন্ত্রী বেসেন্ট এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমার ধারণা, আমি শিগগিরই আমার চীনা সমকক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করব, এরপর দুই নেতার বৈঠকও হতে পারে। সম্পর্ক এখনো ভালো আছে।”
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান সোমবার বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র নিজের পথে অটল থাকে, চীনও তার বৈধ স্বার্থ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।” মঙ্গলবার সকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও এক বিবৃতিতে জানায়, “যদি যুক্তরাষ্ট্র সংঘাত চায়, চীনও শেষ পর্যন্ত লড়বে।”
অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও কূটনৈতিক ভারসাম্য
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন এখন দ্বৈত লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে—একদিকে শেয়ারবাজারে আস্থা ফেরানো, অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি চুক্তি নিয়ে অর্জিত সাফল্যকে অন্যদিকে সরিয়ে না দেওয়া।
চীনও চায় এই মাসের শেষে ট্রাম্প–সি শীর্ষ বৈঠকটি সফল হোক, যাতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার নতুন পর্ব শুরু হয়।
যদিও আপাতত উভয় পক্ষই উত্তেজনা কমাতে চাইছে, তবে বাণিজ্য যুদ্ধের এই চক্র আবারও পুনরাবৃত্ত হতে পারে—যখনই এক পক্ষ চাপ বাড়াবে, অন্য পক্ষ পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাবে।
বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে এই “শীতল উত্তাপের” পরিস্থিতি বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আপাতদৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়েই এখন সংঘাত নয়, বরং স্থিতিশীলতার পথে হাঁটতে চায়। তবে বাস্তবতা হলো—দুই পক্ষের সম্পর্ক এখনো অবিশ্বাস ও প্রতিযোগিতার সূক্ষ্ম সীমারেখায় টিকে আছে।
#যুক্তরাষ্ট্র_চীন_#বাণিজ্য, #ট্রাম্প_#শুল্ক_নীতি, #চীন_রপ্তানি_#নিয়ন্ত্রণ, #বিশ্ব_বাজার, #অর্থনীতি, #কূটনীতি, #সারাক্ষণ_রিপোর্ট