নোবেল পুরস্কারের পরেই কূটনৈতিক টানাপোড়েন
ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো হঠাৎ করে নরওয়ের রাজধানী অসলোতে অবস্থিত ভেনেজুয়েলার দূতাবাস বন্ধের নির্দেশ দেন। এই পদক্ষেপকে বিশ্লেষকরা নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তে মাদুরো সরকারের তীব্র অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন।
মারিয়া কোরিনা মাচাদো বর্তমানে গোপনে অবস্থান করছেন, কারণ তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে প্রাণনাশের হুমকি ও গ্রেপ্তারের আশঙ্কা রয়েছে।
নরওয়ে দূতাবাস বন্ধের সরকারি ব্যাখ্যা
ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইনস্টাগ্রামে এক বিবৃতিতে জানায়, কূটনৈতিক মিশনের “অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে” নরওয়ের দূতাবাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিষয়টি আসলে রাজনৈতিক প্রতিবাদ। কারণ নরওয়ে ২০১৯ সাল থেকে ভেনেজুয়েলার সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপের মধ্যস্থতা করে আসছিল। এই সংলাপ থেকেই জন্ম নেয় ব্যর্থ বার্বাডোজ চুক্তি, যা শেষ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি।
সোমবার সন্ধ্যায় অসলোতে ভেনেজুয়েলার দূতাবাসের ফোন লাইনও বন্ধ পাওয়া যায়।
নরওয়ের প্রতিক্রিয়া
নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলা তাদের দূতাবাস বন্ধের কোনো আনুষ্ঠানিক কারণ জানায়নি। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেসিলি রোয়াং এক বিবৃতিতে বলেন, “এটি দুঃখজনক। যদিও আমাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে, নরওয়ে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যেতে আগ্রহী।”
তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, “নোবেল শান্তি পুরস্কার নরওয়ের সরকারের সিদ্ধান্ত নয়—এটি সম্পূর্ণ স্বাধীন একটি কমিটির সিদ্ধান্ত।”
অস্ট্রেলিয়ায় দূতাবাস বন্ধ ও আফ্রিকায় নতুন মৈত্রী
ভেনেজুয়েলা শুধু নরওয়ে নয়, অস্ট্রেলিয়াতেও তাদের দূতাবাস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। সরকার জানিয়েছে, এটি দেশের “ভূরাজনৈতিক নীতি”—বিশ্ব দক্ষিণের (Global South) দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার অংশ হিসেবে তারা নতুন প্রতিনিধিত্ব খুলছে জিম্বাবুয়ে ও বুরকিনা ফাসোতে।
মাচাদো বনাম মাদুরো
মারিয়া কোরিনা মাচাদো ভেনেজুয়েলার বিরোধীদল ‘ভেন্তে ভেনেজুয়েলা’-এর নেতা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামী কর্মী। ১০ অক্টোবর তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পান “ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য তাঁর নিরলস সংগ্রাম এবং স্বৈরাচার থেকে গণতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের প্রচেষ্টার” স্বীকৃতি হিসেবে।
নিকোলাস মাদুরো সরকার এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুরস্কার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
মাচাদো মাদুরো শাসনকে বহুবার প্রকাশ্যে “স্বৈরতন্ত্র” বলে উল্লেখ করেছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাঁর দল অভিযোগ তোলে যে, মাদুরো পরাজিত হয়েও ফলাফল জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষমতায় থেকে গেছেন, যখন প্রকৃত বিজয়ী ছিলেন তাঁর দলের সহকর্মী এদমুন্ডো গনজালেস।
গোপনে থাকা নোবেলজয়ীর বার্তা
২০২৪ সালের আগস্টে মাচাদো ঘোষণা দেন যে তিনি আত্মগোপনে যাচ্ছেন, কারণ “মাদুরো সরকারের অধীনে নিজের ও সহকর্মীদের জীবন ও স্বাধীনতা ঝুঁকিতে রয়েছে।”
সম্প্রতি মাচাদো এক গোপন সাক্ষাৎকারে এএফপিকে বলেন, “মাদুরোর সময় শেষ। তিনি চাইলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছাড়ার সুযোগ এখনো রয়েছে।”
তিনি আরও ইঙ্গিত দেন, “আমরা আলোচনার টেবিলে বসলে তাঁকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারি। তবে যদি তিনি প্রতিরোধ চালিয়ে যান, তার ফলাফল তাঁকেই বহন করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমেই হোক বা ছাড়াই—তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন।”
নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা
মাচাদো অভিযোগ করেন, “মাদুরোই ভেনেজুয়েলাবাসীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।” তিনি জানান, ২০২৪ সালের নির্বাচনের প্রকৃত বিজয়ী গনজালেস তাঁকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
“আমি যেখানে দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি কাজে আসতে পারব, সেখানেই থাকব,”—বলেছেন মাচাদো।
# ভেনেজুয়েলা, #মারিয়া কোরিনা মাচাদো,# নিকোলাস মাদুরো,# নোবেল শান্তি পুরস্কার, #নরওয়ে দূতাবাস, #আন্তর্জাতিক কূটনীতি, #দক্ষিণ আমেরিকা, #সারাক্ষণ রিপোর্ট