০৯:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩৮) অশান্তির জন্য নোবেল থাকলে বাংলাদেশ পেত”— জিএম কাদের একদিনে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৫৮ জন বেতন ও ভাতার দাবিতে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভ, শিক্ষক-কর্মচারীদের শাহবাগ অবরোধ অ্যানথ্রাক্স নিয়ন্ত্রণে গরুর জরুরী কোয়ারেন্টাইনের সিদ্ধান্ত এক দিনে ৮০ পয়েন্ট পতন, ধস নামলো ঢাকার শেয়ারবাজারে রংপুরে অ্যানথ্রাক্স: গঙ্গাচরায় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া গরু জবাই নিষিদ্ধ দীপিকা পাড়ুকোনের গ্লোবাল প্লেবুক: হিন্দি ছবির সুপারস্টার কীভাবে বানালেন সীমাহীন ক্যারিয়ার শিক্ষক আন্দোলনে অস্থিরতা শিক্ষায়, সমাধানে কী করছে সরকার? ১২ ম্যাচে ১১ হার, যেভাবে এক যুগে ‘সর্বনিম্ন’ অবস্থায় বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট

শিশুদের মধ্যে ই-সিগারেট আসক্তি নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ

বিশ্বজুড়ে ই-সিগারেট ব্যবহারে উদ্বেগজনক বৃদ্ধি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করেছে যে ই-সিগারেট এখন বিশ্বব্যাপী শিশুদের মধ্যে নিকোটিন আসক্তির এক নতুন ও উদ্বেগজনক ঢেউ তৈরি করছে। সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, যেসব দেশে তথ্য পাওয়া গেছে, সেখানে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা গড়ে নয় গুণ বেশি হারে ই-সিগারেট ব্যবহার করছে।

ডব্লিউএইচও’র মতে, তামাক কোম্পানিগুলো ই-সিগারেটকে ধূমপানের বিকল্প ও তুলনামূলক ‘কম ক্ষতিকর’ পণ্য হিসেবে প্রচার করছে, কিন্তু বাস্তবে তারা আগ্রাসীভাবে তরুণ প্রজন্মকে লক্ষ্য করছে এবং শিশুদের নিকোটিনের প্রতি আসক্ত করে তুলছে।


বিশ্বজুড়ে ১০ কোটির বেশি মানুষ ভ্যাপিং করছে

ডব্লিউএইচও’র প্রথম বৈশ্বিক হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে অন্তত ১০ কোটি মানুষ ই-সিগারেট ব্যবহার করছে। এর মধ্যে ৮ কোটি ৬০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক—মূলত উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে—এবং প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ শিশু (বয়স ১৩ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে)।

ডব্লিউএইচও’র স্বাস্থ্য প্রচার ও প্রতিরোধ বিভাগের পরিচালক এটিয়েন ক্রুগ বলেন, “ই-সিগারেট নিকোটিন আসক্তির নতুন এক ঢেউ তৈরি করছে। এগুলো ‘ক্ষতি কমানোর’ উপায় হিসেবে বাজারজাত করা হলেও আসলে শিশুদের নিকোটিনে আরও আগে থেকেই আসক্ত করছে, যা বিগত কয়েক দশকের জনস্বাস্থ্য অগ্রগতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।”


ধূমপান কমলেও নিকোটিনের বিকল্প আসক্তি বাড়ছে

২০০০ সালে বিশ্বের তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১৩৮ কোটি; ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২০ কোটিতে। তবুও বৈশ্বিকভাবে প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্কের একজন এখনো তামাকের ওপর নির্ভরশীল।

ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেয়াসুস বলেন, “তামাক নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টার কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ ধূমপান ত্যাগ করছে বা শুরুই করছে না। কিন্তু তামাক শিল্প এখন নতুন নিকোটিন পণ্য বাজারে এনে তরুণদের দিকে মনোযোগ দিয়েছে।”


১২টি দেশে তামাক ব্যবহারে উল্টো বৃদ্ধি

ডব্লিউএইচও’র বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১২টি দেশে তামাক ব্যবহার আবারও বাড়ছে। সংস্থার সহকারী মহাপরিচালক জেরেমি ফ্যারার সতর্ক করে বলেন, “এই উল্টো ধারা মানে হলো আরও লক্ষ লক্ষ মানুষ রোগ, অক্ষমতা ও অকাল মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ছে।”

তিনি আরও জানান, তামাক ব্যবহার প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ৭০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটাচ্ছে, আর পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মারা যাচ্ছে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ।


শিশুদের ওপর ভয়াবহ প্রভাব

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী প্রায় ৪ কোটি শিশু তামাক ব্যবহার করছে, অর্থাৎ প্রতি ১০ জনে ১ জন শিশু এই অভ্যাসে জড়িত। প্রতিবেদনের প্রধান লেখক অ্যালিসন কোমার জানান, কিছু দেশে শিশুরা ১০ বছরের আগেই ধূমপান শুরু করছে।

তিনি বলেন, “শিশুরা অনলাইন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তামাক প্রচারের ব্যাপক প্রভাবের মধ্যে পড়ছে। এটি খুব সূক্ষ্মভাবে করা হয় এবং নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন।”


সামাজিক মাধ্যমে ছড়াচ্ছে ভ্যাপিং প্রভাব

কোমার জানান, অনেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রভাবক সরাসরি বিজ্ঞাপন না দিয়ে অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় হাতে ই-সিগারেট ধরে থাকেন, যা শিশুদের কাছে তা আকর্ষণীয় করে তোলে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, “ই-সিগারেট আসলে তরুণদের জন্য এক প্রবেশদ্বার, যা তাদের পরবর্তীতে তামাক ব্যবহার বা দীর্ঘমেয়াদি নিকোটিন আসক্তির দিকে ঠেলে দেয়।”


জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আহ্বান

ডব্লিউএইচও কর্মকর্তারা বলেছেন, ঘরের ভেতর ধূমপান বা ভ্যাপিং শিশুদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ফ্যারার বলেন, “ধূমপান শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শিশুদের সামনে এটি করা সম্পূর্ণ দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অগ্রহণযোগ্য আচরণ।”


#ইসিগারেট #ডব্লিউএইচও #নিকোটিনআসক্তি #তামাকনিয়ন্ত্রণ #শিশুরস্বাস্থ্য #বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা #ধূমপাননিষেধ #স্বাস্থ্যসচেতনতা #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩৮)

শিশুদের মধ্যে ই-সিগারেট আসক্তি নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ

১২:৩২:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

বিশ্বজুড়ে ই-সিগারেট ব্যবহারে উদ্বেগজনক বৃদ্ধি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করেছে যে ই-সিগারেট এখন বিশ্বব্যাপী শিশুদের মধ্যে নিকোটিন আসক্তির এক নতুন ও উদ্বেগজনক ঢেউ তৈরি করছে। সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, যেসব দেশে তথ্য পাওয়া গেছে, সেখানে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা গড়ে নয় গুণ বেশি হারে ই-সিগারেট ব্যবহার করছে।

ডব্লিউএইচও’র মতে, তামাক কোম্পানিগুলো ই-সিগারেটকে ধূমপানের বিকল্প ও তুলনামূলক ‘কম ক্ষতিকর’ পণ্য হিসেবে প্রচার করছে, কিন্তু বাস্তবে তারা আগ্রাসীভাবে তরুণ প্রজন্মকে লক্ষ্য করছে এবং শিশুদের নিকোটিনের প্রতি আসক্ত করে তুলছে।


বিশ্বজুড়ে ১০ কোটির বেশি মানুষ ভ্যাপিং করছে

ডব্লিউএইচও’র প্রথম বৈশ্বিক হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে অন্তত ১০ কোটি মানুষ ই-সিগারেট ব্যবহার করছে। এর মধ্যে ৮ কোটি ৬০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক—মূলত উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে—এবং প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ শিশু (বয়স ১৩ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে)।

ডব্লিউএইচও’র স্বাস্থ্য প্রচার ও প্রতিরোধ বিভাগের পরিচালক এটিয়েন ক্রুগ বলেন, “ই-সিগারেট নিকোটিন আসক্তির নতুন এক ঢেউ তৈরি করছে। এগুলো ‘ক্ষতি কমানোর’ উপায় হিসেবে বাজারজাত করা হলেও আসলে শিশুদের নিকোটিনে আরও আগে থেকেই আসক্ত করছে, যা বিগত কয়েক দশকের জনস্বাস্থ্য অগ্রগতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।”


ধূমপান কমলেও নিকোটিনের বিকল্প আসক্তি বাড়ছে

২০০০ সালে বিশ্বের তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১৩৮ কোটি; ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২০ কোটিতে। তবুও বৈশ্বিকভাবে প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্কের একজন এখনো তামাকের ওপর নির্ভরশীল।

ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেয়াসুস বলেন, “তামাক নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টার কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ ধূমপান ত্যাগ করছে বা শুরুই করছে না। কিন্তু তামাক শিল্প এখন নতুন নিকোটিন পণ্য বাজারে এনে তরুণদের দিকে মনোযোগ দিয়েছে।”


১২টি দেশে তামাক ব্যবহারে উল্টো বৃদ্ধি

ডব্লিউএইচও’র বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১২টি দেশে তামাক ব্যবহার আবারও বাড়ছে। সংস্থার সহকারী মহাপরিচালক জেরেমি ফ্যারার সতর্ক করে বলেন, “এই উল্টো ধারা মানে হলো আরও লক্ষ লক্ষ মানুষ রোগ, অক্ষমতা ও অকাল মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়ছে।”

তিনি আরও জানান, তামাক ব্যবহার প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ৭০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটাচ্ছে, আর পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মারা যাচ্ছে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ।


শিশুদের ওপর ভয়াবহ প্রভাব

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী প্রায় ৪ কোটি শিশু তামাক ব্যবহার করছে, অর্থাৎ প্রতি ১০ জনে ১ জন শিশু এই অভ্যাসে জড়িত। প্রতিবেদনের প্রধান লেখক অ্যালিসন কোমার জানান, কিছু দেশে শিশুরা ১০ বছরের আগেই ধূমপান শুরু করছে।

তিনি বলেন, “শিশুরা অনলাইন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তামাক প্রচারের ব্যাপক প্রভাবের মধ্যে পড়ছে। এটি খুব সূক্ষ্মভাবে করা হয় এবং নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন।”


সামাজিক মাধ্যমে ছড়াচ্ছে ভ্যাপিং প্রভাব

কোমার জানান, অনেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রভাবক সরাসরি বিজ্ঞাপন না দিয়ে অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় হাতে ই-সিগারেট ধরে থাকেন, যা শিশুদের কাছে তা আকর্ষণীয় করে তোলে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, “ই-সিগারেট আসলে তরুণদের জন্য এক প্রবেশদ্বার, যা তাদের পরবর্তীতে তামাক ব্যবহার বা দীর্ঘমেয়াদি নিকোটিন আসক্তির দিকে ঠেলে দেয়।”


জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আহ্বান

ডব্লিউএইচও কর্মকর্তারা বলেছেন, ঘরের ভেতর ধূমপান বা ভ্যাপিং শিশুদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ফ্যারার বলেন, “ধূমপান শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শিশুদের সামনে এটি করা সম্পূর্ণ দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অগ্রহণযোগ্য আচরণ।”


#ইসিগারেট #ডব্লিউএইচও #নিকোটিনআসক্তি #তামাকনিয়ন্ত্রণ #শিশুরস্বাস্থ্য #বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা #ধূমপাননিষেধ #স্বাস্থ্যসচেতনতা #সারাক্ষণরিপোর্ট