কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের সূচনা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানিতা আনন্দের বৈঠক দুই দেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। নয়াদিল্লিতে সোমবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যা গত বছরের খালিস্তানি নেতা হারদীপ সিং নিঝ্জারের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনার পর সর্বোচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক যোগাযোগ।
২০২৩ সালে অটোয়া ভারত সরকারের বিরুদ্ধে নিঝ্জার হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছিল, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক মারাত্মকভাবে অবনতি ঘটে। এক বছরের টানাপোড়েনের পর আনন্দের এই সফরকে উভয় দেশের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের “টার্নিং পয়েন্ট” হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের ইতিবাচক বার্তা
বৈঠকের সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেন, “গত কয়েক মাসে ভারত–কানাডা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ধারাবাহিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। আমরা অংশীদারিত্ব জোরদার করতে প্রয়োজনীয় কৌশল ও কাঠামো পুনর্গঠন করছি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা কানাডাকে একটি উন্মুক্ত সমাজ ও পরিপূরক অর্থনীতি হিসেবে দেখি, যা টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতার ভিত্তি।”
কূটনৈতিক গতিশীলতা পুনরুদ্ধারে আনন্দের ভূমিকা
অ্যানিতা আনন্দ তার সফরকে বর্ণনা করেছেন “সম্পর্ক পুনর্গঠনের গতিকে আরও এগিয়ে নেওয়া” হিসেবে। তিনি জানান, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে জি–৭ সম্মেলনের পার্শ্ব বৈঠকেই দুই দেশের সম্পর্কে বরফ গলতে শুরু হয়েছিল।
তার ভাষায়, “আমরা এখন সম্মিলিতভাবে দীর্ঘমেয়াদে এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, বিশেষত ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে সহযোগিতা জোরদারে।”
নতুন উচ্চতায় অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা
আনন্দ বলেন, “কানাডা ও ভারত এখন অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের পাশাপাশি আইন প্রয়োগ ও নিরাপত্তা সংলাপও বজায় রেখে সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, আসন্ন ভারত–কানাডা যৌথ ঘোষণাটি “সমগ্র ও সর্বব্যাপী” — যেখানে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হবে।
তার মতে, “গত কয়েক মাসের উত্তেজনার পর এখন দুই দেশ বাস্তববাদী ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগোচ্ছে।”
নিরাপত্তা সংলাপ ও গঠনমূলক অগ্রগতি
আনন্দ সাম্প্রতিক সময়ে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারত–কানাডা নিরাপত্তা ও আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের বৈঠককে “ফলপ্রসূ” বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে — যা সম্পর্কের গভীরতা বাড়াতে সহায়ক হবে।
তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করকে উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “মে মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমাদের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কার্নি ও প্রধানমন্ত্রী মোদির জি–৭–এ ফলপ্রসূ বৈঠক আজকের আলোচনাকে আরও অর্থবহ করেছে।”
বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও কৃষিতে উচ্চাভিলাষী রোডম্যাপ
জয়শঙ্কর জানান, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুই দেশের মধ্যে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা, কৃষি এবং বাণিজ্য খাতে একটি উচ্চাভিলাষী রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “এই রোডম্যাপ ভবিষ্যতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি হবে, যা উভয় দেশের জন্য লাভজনক।”
বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নতুন দিগন্ত
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনন্দ আগামী দিনে মুম্বাই সফরে যাবেন, যেখানে তিনি ভারতীয় ও কানাডীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক সুযোগ সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা হবে।
দুই দেশের মধ্যে এই নতুন কূটনৈতিক উষ্ণতা শুধু অতীতের তিক্ততা ভুলিয়ে নয়, বরং ভবিষ্যতের স্থিতিশীল ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক সম্পর্কের সম্ভাবনাও উন্মুক্ত করছে।
# ভারত–কানাডা সম্পর্ক,# কূটনীতি, #অ্যানিতা আনন্দ, #জয়শঙ্কর,# মোদি, #আন্তর্জাতিক রাজনীতি, #ইন্দো–প্যাসিফিক, #বাণিজ্য ও সহযোগিতা