এআই ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন
দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত গিটেক্স গ্লোবাল ২০২৫–এর উদ্বোধনী দিনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন তৌক আল মারি ঘোষণা দেন—কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন জাতীয় সার্বভৌমত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাঁর ভাষায়, “প্রতিরক্ষা বা সাইবার নিরাপত্তার মতোই, এআই ক্ষেত্রেও বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। কারণ এটি প্রতিটি দেশের সার্বভৌমত্বের অংশ।”
তিনি আরও বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এআইকে কোনো প্রযুক্তিগত পরীক্ষা হিসেবে নয়, বরং জাতীয় নীতির কেন্দ্রীয় উপাদান হিসেবে বিবেচনা করছে। ইতিমধ্যেই দেশটি অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য, সরকারি সেবা ও আইনগত কাঠামোয় এআইকে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যাতে একটি নন-অয়েল অর্থনীতি গড়ে তোলা যায়।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মোট অর্থনীতির ৭৭.৩ শতাংশই অ-তেল খাত থেকে আসে, যা পাঁচ বছর আগে ছিল মাত্র ৬৯ শতাংশ। সরকারের লক্ষ্য আগামী পাঁচ বছরে এই হার ৮০ শতাংশে উন্নীত করা।
মেধা—নতুন অর্থনীতির ‘তেল’
মন্ত্রী আল মারি বলেন, “প্রতিভাই হচ্ছে অর্থনীতির তেল।” তাঁর মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো যোগ্য জনবল। তিনি বলেন, “চমৎকার ধারণা থাকলেই হবে না, সেটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সঠিক প্রতিভা।”
এই লক্ষ্যেই সংযুক্ত আরব আমিরাত পেশাজীবী ও গবেষকদের আকৃষ্ট করতে দীর্ঘমেয়াদি ভিসা প্রোগ্রাম চালু করেছে। একইসঙ্গে স্থানীয় বিশেষজ্ঞ তৈরির জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মোহাম্মদ বিন জায়েদ ইউনিভার্সিটি অব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
লিঙ্কডইনের ২০২৪ সালের গ্লোবাল এআই ট্যালেন্ট রিপোর্টে দেশটি বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি বাজারের মধ্যে রয়েছে, যেখানে সবচেয়ে বেশি এআই পেশাদার কাজ করছেন।
পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ও এআইয়ের ভবিষ্যৎ
এআই অবকাঠামো তৈরির সঙ্গে সঙ্গে দেশটি পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহারে জোর দিচ্ছে। ডেটা সেন্টার ও কম্পিউটিং অবকাঠামোগুলো এখন ক্রমশ নবায়নযোগ্য ও পারমাণবিক জ্বালানিতে পরিচালিত হচ্ছে।
মাসদার ও ENEC-এর নেতৃত্বে নেওয়া প্রকল্পগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে এআই খাতের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহের বড় অংশ পূরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মন্ত্রী আরও জানান, ওরাকল, সিমেন্স, হুয়াওয়ে এবং আবুধাবি-ভিত্তিক G42–এর মতো আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এআই সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে, যাতে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি জ্বালানি দক্ষতাও বজায় থাকে।
তাঁর ভাষায়, “আমরা প্রাচীর নয়, সেতু তৈরি করতে পারদর্শী। সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ব্যবহার করুন আপনার সেতু হিসেবে। আমরা বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত হই, দেয়াল তুলি না।”
কর্মসংস্থানে এআইয়ের প্রভাব
মন্ত্রী স্বীকার করেন, এআই শুধু উন্নয়নের সুযোগই আনবে না, বরং কর্মসংস্থানের ধরনেও বড় পরিবর্তন ঘটাবে। তবে তিনি এটিকে শিল্প বিপ্লবের মতোই একটি রূপান্তর প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছেন, যা দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াবে এবং নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করবে।
তিনি বলেন, “যে কাজ একসময় কয়েক দিন লাগত, এখন সেটি কয়েক মিনিটেই করা সম্ভব।”
তাঁর মতে, প্রকৃত চ্যালেঞ্জ হলো অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি—দেশটি কত দ্রুত পরিকাঠামো, দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত চিন্তাভাবনাকে উন্নত করতে পারে, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
আল মারি বলেন, “এটি আসলে আমাদের নিজেদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা—আমাদের অবকাঠামো কতটা প্রস্তুত, আমাদের প্রতিভা কতটা লালিত হচ্ছে, আর আমাদের কৌশল কতটা সঠিকভাবে সমন্বিত হচ্ছে—সেটাই নির্ধারণ করবে আমরা কত দ্রুত এগোব।”
গিটেক্স গ্লোবাল: প্রযুক্তির মঞ্চে নতুন বার্তা
৪৫তম বর্ষে পদার্পণ করা গিটেক্স গ্লোবাল ২০২৫ এখন এআই অবকাঠামো নির্মাণ এবং এআই-নির্ভর অর্থনীতির নীতি নির্ধারণে কেন্দ্রীভূত। দুবাই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আয়োজিত এই বিশাল প্রযুক্তি প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে ১৮০টি দেশের ৬,৮০০-রও বেশি প্রযুক্তি কোম্পানি এবং ২,০০০ স্টার্টআপ।
এই আয়োজন প্রমাণ করছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নয়, বরং বৈশ্বিক প্রযুক্তি উন্নয়নেরও এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠছে।
#এআই #সংযুক্তআরবআমিরাত #গিটেক্সগ্লোবাল #প্রযুক্তি #অর্থনীতি #পরিচ্ছন্নজ্বালানি #সার্বভৌমত্ব