মৃত্যুর ঘটনায় কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল
তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরম ভিত্তিক ওষুধ কোম্পানি শ্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালস-এর উৎপাদন লাইসেন্স বাতিল করেছে রাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ। কোম্পানিটির তৈরি কোলড্রিফ কফ সিরাপ পান করার পর মধ্যপ্রদেশে অন্তত ২৩ জন এবং রাজস্থানে কয়েকজনের মৃত্যু ঘটে। তদন্তে সিরাপের নমুনায় পাওয়া গেছে ডাইইথিলিন গ্লাইকোল (DEG)—একটি অত্যন্ত বিষাক্ত শিল্প রাসায়নিক, যা মানুষের কিডনি অকেজো করে দিতে সক্ষম।
এরপর কর্তৃপক্ষ কোম্পানিটির কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে এবং রাজ্যজুড়ে সব ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক পরিদর্শন শুরু করেছে।
কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে কর্মকর্তা বরখাস্ত
তামিলনাড়ু সরকারের পক্ষ থেকে দুটি জ্যেষ্ঠ ওষুধ পরিদর্শককে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে, কোম্পানির মালিক জি. রঙ্গনাথন (৭৫)-কে ৯ অক্টোবর চেন্নাই থেকে গ্রেপ্তার করেছে মধ্যপ্রদেশ পুলিশের বিশেষ তদন্ত দল। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (DCGI) নির্দেশ দিয়েছে, সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে ১৯৪৫ সালের Drugs and Cosmetics Rules কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে—যাতে কাঁচামাল ও প্রস্তুত ওষুধ দুটোই পরীক্ষার আওতায় আসে।
বিরোধীদের অভিযোগ: দায় এড়াতে নাটক
তামিলনাড়ু বিজেপির সভাপতি কে. অন্নামালাই রাজ্যের ডিএমকে সরকারকে তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, “মাত্র দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে দায় এড়ানোর চেষ্টা চলছে। কাঞ্চিপুরমে তৈরি ওষুধে মধ্যপ্রদেশে ২৩ জন ও রাজস্থানে তিন শিশুর মৃত্যু ঘটেছে, অথচ সরকার প্রকৃত দায়ীদের আড়াল করছে।”
ইডির অভিযান ও আর্থিক অনিয়মের তদন্ত
অন্যদিকে, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সোমবার চেন্নাইজুড়ে সাতটি স্থানে অভিযান চালায়। এর মধ্যে রয়েছে রঙ্গনাথনের কোডামবাক্কামের বাসভবন এবং শ্রেসান ফার্মার কার্যালয়।
ইডি সূত্রে জানা গেছে, কাঞ্চিপুরমের উৎপাদন কারখানায় ৩০০–এরও বেশি নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রক লঙ্ঘনের প্রমাণ মিলেছে। সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে অ-ঔষধ–মানের রাসায়নিক পদার্থ। ল্যাব পরীক্ষায় দেখা গেছে, কোলড্রিফ সিরাপে ৪৮.৬ শতাংশ পর্যন্ত ডাইইথিলিন গ্লাইকোল (DEG) রয়েছে—যা কিডনির স্থায়ী ক্ষতি ঘটায়।
তহবিল সরানোর সন্দেহ
তদন্তকারীরা ধারণা করছেন, উৎপাদন ব্যয় কমাতে নিম্নমানের উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি তহবিল সরানো, আর্থিক অনিয়ম এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে যোগসাজশের আশঙ্কাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ইডি আরও অনুসন্ধান করছে, এই বেআইনি অর্থ বিভিন্ন শেল কোম্পানি ও বেনামি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে কি না। তদন্তে নতুন গ্রেপ্তারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
চেন্নাইভিত্তিক ফার্মা কোম্পানিগুলোর ওপর নজরদারি
গত কয়েক মাসে চেন্নাইয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে এটি তৃতীয় বড় অভিযান। এর আগে অরবিন্দ রেমেডিজ লিমিটেড-এর ৬৩৭ কোটি রুপির ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি মামলা এবং ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে জাফর সাদিক-এর মাদক চোরাচালান মামলার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়েছিল।
নজরদারিতে তামিলনাড়ুর ওষুধ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
এখন সিবিআই যখন করুর মেলামেশা দুর্ঘটনা তদন্ত করছে এবং ইডি কোলড্রিফ মামলায় কঠোর তদন্ত শুরু করেছে, তখন তামিলনাড়ুর ওষুধ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতা আবারও জাতীয় পর্যায়ে আলোচনায় উঠে এসেছে।
#কফসিরাপকেলেঙ্কারি #তামিলনাড়ু #ওষুধদুর্নীতি #ইডিআভিযান #ডাইইথিলিনগ্লাইকোল #ভারতস্বাস্থ্যসংকট #সারাক্ষণরিপোর্ট