০৮:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
একদিনে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৫৮ জন বেতন ও ভাতার দাবিতে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভ, শিক্ষক-কর্মচারীদের শাহবাগ অবরোধ অ্যানথ্রাক্স নিয়ন্ত্রণে গরুর জরুরী কোয়ারেন্টাইনের সিদ্ধান্ত এক দিনে ৮০ পয়েন্ট পতন, ধস নামলো ঢাকার শেয়ারবাজারে রংপুরে অ্যানথ্রাক্স: গঙ্গাচরায় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া গরু জবাই নিষিদ্ধ দীপিকা পাড়ুকোনের গ্লোবাল প্লেবুক: হিন্দি ছবির সুপারস্টার কীভাবে বানালেন সীমাহীন ক্যারিয়ার শিক্ষক আন্দোলনে অস্থিরতা শিক্ষায়, সমাধানে কী করছে সরকার? ১২ ম্যাচে ১১ হার, যেভাবে এক যুগে ‘সর্বনিম্ন’ অবস্থায় বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট আইএমএফ ও পাকিস্তানের মধ্যে $১.২ বিলিয়ন সহায়তা চুক্তি — ঋণ পরিশোধের জন্য প্রাথমিক চুক্তি সই মাদাগাস্কারে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল, রাষ্ট্রপতি নির্দলিত — গভীর সংকট ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

ভারতে কলসেন্টার কর্মীদের জায়গা নিচ্ছে এআই চ্যাটবট

প্রযুক্তির বিপ্লব ও কর্মসংস্থানের নতুন বাস্তবতা

বেঙ্গালুরুতে এক স্টার্টআপ অফিসে একদল তরুণ ডেভেলপার এমন এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন (এআই) চ্যাটবট তৈরি করছেন, যা মানুষের মতো কথা বলে ও মেসেজ পাঠায়। প্রতিষ্ঠানটির নাম লাইমচ্যাট (LimeChat)—তাদের লক্ষ্য গ্রাহকসেবা খাতের মানবকর্মীদের প্রায় অচল করে দেওয়া। কোম্পানির দাবি, তাদের তৈরি জেনারেটিভ এআই এজেন্ট ব্যবহার করলে প্রতি মাসে ১০ হাজার প্রশ্ন সামলাতে যে কর্মী প্রয়োজন হয়, তার সংখ্যা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব।

লাইমচ্যাটের সহপ্রতিষ্ঠাতা নিকিল গুপ্ত বলেন, “একবার আমাদের এআই এজেন্ট নিয়োগ দিলে আর কাউকে নিয়োগের দরকার হবে না।”

ভারতের আইটি খাতে দ্রুত রূপান্তরসস্তা শ্রম ও ইংরেজি দক্ষতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ভারত ছিল বিশ্বের “ব্যাক অফিস”—কিন্তু এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এই খাতের কর্মীদের স্থান দখল করছে। হেডসেট পরিহিত হাজারো গ্রাহকসেবা প্রতিনিধির চাকরি হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের ২৮৩ বিলিয়ন ডলারের আইটি খাতে এই পরিবর্তন এক ভয়াবহ ধাক্কা আনছে। ৩০ জন নির্বাহী, কর্মী ও সরকারি কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, দেশটি প্রযুক্তির গতি থামানোর পরিবর্তে আরও এগিয়ে নিচ্ছে, আশায় যে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং যাদের চাকরি হারাবে তারা অন্য খাতে শোষিত হবে।

বিশ্বব্যাপী কথোপকথনভিত্তিক এআই বাজার প্রতিবছর ২৪% হারে বাড়ছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এর আকার হবে ৪১ বিলিয়ন ডলার।

A laptop screen shows an interaction with an AI chatbot during a visit to the office of AI startup The Media Ant, in Bengaluru

সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও সমালোচনাপ্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, “প্রযুক্তি চাকরি নষ্ট করে না, বরং কাজের ধরণ পাল্টায়।” কিন্তু বিশেষজ্ঞরা একমত নন। ভারতের সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এবং ইউনিভার্সিটি অব বাথের অধ্যাপক সন্তোষ মেহরোত্রা বলেন, “সরকারের কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই যে কীভাবে এআই তরুণ কর্মীদের প্রভাবিত করবে।”

ভারতের কলসেন্টার, পে-রোল ও ডেটা হ্যান্ডলিং খাতে ১৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষ কাজ করেন। কিন্তু স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির কারণে নিয়োগের হার দ্রুত কমছে। স্টাফিং ফার্ম টিমলিজ ডিজিটালের তথ্য অনুযায়ী, এই খাতে গত দুই বছরে কর্মীসংখ্যা মাত্র ১৭ হাজার বেড়েছে—যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৃদ্ধি ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার।

চাকরি হারানোর গল্প৩২ বছর বয়সী মেঘা এস. বেঙ্গালুরুর এক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে বছরে ১০ হাজার ডলার আয় করতেন। গত মাসে তাকে চাকরি হারাতে হয়—কারণ কোম্পানি বিক্রয়কলে মান যাচাইয়ের জন্য নতুন এআই টুল চালু করে। তিনি বলেন, “আমাকে বলা হয়েছিল আমি প্রথম যাকে এআই বদলে দিয়েছে।”

অন্যদিকে, ভারতের শ্রম মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব সুমিতা দাওরা বলেন, “এআই নতুন চাকরি সৃষ্টি করলেও পরিবর্তনের সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বেকারভাতা বা সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করা দরকার।”

Developers attend a meeting inside pods at the office of AI startup LimeChat in Bengaluru

অটোমেশনের সোনার খনি না সংকট?ভারতের আইটি খাত এখন এক “অটোমেশন গোল্ড রাশ”-এর মুখে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ট্যারিফ, বিদেশি আউটসোর্সিংয়ের ওপর ২৫% করের প্রস্তাব এবং নতুন এইচ-১বি ভিসায় ১ লাখ ডলার ফি—সব মিলিয়ে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

জেফারিস ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরে ভারতের কলসেন্টার আয়ে ৫০% এবং অন্যান্য ব্যাক-অফিস খাতে ৩৫% পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞ প্রমোদ ভাসিনের মতে, দীর্ঘমেয়াদে ভারত “ব্যাক অফিস” থেকে “এআই ফ্যাক্টরি”-তে রূপ নিতে পারে, যেখানে নতুন প্রজন্মের প্রকৌশলীরা বিশ্বব্যাপী অটোমেশন উন্নয়নে কাজ করবে।

লাইমচ্যাটের উত্থান ও প্রতিযোগিতা

লাইমচ্যাট ইতিমধ্যে ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রায় ৫,০০০টি চাকরি স্বয়ংক্রিয় করেছে। তাদের বট এখন ক্লায়েন্টদের ৭০% গ্রাহক অভিযোগ সামলায়, এবং আগামী বছর এই হার ৯০-৯৫%-এ পৌঁছাবে বলে তারা আশা করছে। কোম্পানির আয় ২০২২ সালের ৭৯ হাজার ডলার থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ১৫ লাখ ডলারে পৌঁছেছে।

প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছে রিলায়েন্সের মালিকানাধীন হ্যাপটিক, যারা মানবসদৃশ গ্রাহকসেবা প্রদানকারী এআই এজেন্ট চালু করেছে। তাদের আয় ২০২০ সালে ১ মিলিয়নের নিচে থেকে ২০২৪ সালে বেড়ে ১৮ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

A developer works inside the office of AI startup The Media Ant, in Bengaluru

এআই-চালিত অফিস ও “নেহা”-র গল্প

বেঙ্গালুরুর বিজ্ঞাপন সংস্থা “দ্য মিডিয়া অ্যান্ট” গত এক বছরে তাদের কর্মীসংখ্যা ৪০% কমিয়েছে। ছয় সদস্যের কলসেন্টার এখন বদলে গেছে একটি এআই ভয়েস এজেন্ট “নেহা”-তে, যে নিখুঁত ভারতীয় উচ্চারণে ইংরেজিতে কথা বলে।

যখন একজন সাংবাদিক নেহাকে ইউটিউবে বিজ্ঞাপন বিষয়ে প্রশ্ন করেন, সে বাজেট ও লক্ষ্য বাজার জানতে চায় এবং উত্তর দেয়—“আমি ইমেইলে বিস্তারিত পাঠাব… আপনার দিনটি শুভ হোক।”

তবে সবকিছুই নিখুঁত নয়। অনেক সময় চ্যাটবট জটিল প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়। উদাহরণস্বরূপ, এক এআই বটকে যখন তার দাবি প্রমাণ করতে বলা হয় যে এক মিলিয়ন চিকিৎসক তাদের পণ্য ব্যবহার করেন, তখন সে জবাব দেয়—“আমি দুঃখিত, পর্যাপ্ত তথ্য নেই।”

ভোক্তার মনোভাব ও বাস্তব সীমাবদ্ধতা

২০২৪ সালের অগাস্টে ইওয়াইয়ের এক জরিপে দেখা যায়, ভারতের ৬২% ভোক্তা এআইয়ের পরামর্শে ক্রয় সিদ্ধান্ত নেন—যা বৈশ্বিক গড়ের দ্বিগুণ। কিন্তু ৭৮% ব্যবহারকারী এখনও মানুষ-নির্ভর সহায়তাকেই পছন্দ করেন।

লাইমচ্যাটের নিকিল গুপ্ত অবশ্য বলেন, “সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত এআই এজেন্ট মানুষের চেয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে পারে। কেবল কিছু জটিল ও নেতিবাচক গ্রাহক অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রেই মানব হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।”

People walk around a complex of software skill training centres surrounded by multiple billboards in Hyderabad

জাভা থেকে এআই: প্রশিক্ষণের নতুন দিগন্ত

৯০ ও ২০০০-এর দশকে ভারতের আইটি বুম গ্রামীণ যুবকদের শহরমুখী করেছিল। আজ সেই হায়দরাবাদের আমিরপেট অঞ্চল আবারও সরব, তবে এবার প্রোগ্রামিংয়ের পরিবর্তে এআই প্রশিক্ষণে।

“কোয়ালিটি থট” নামের একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র এখন ৯ মাসের “এআই ডেটা সায়েন্স ও প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং” কোর্স চালু করেছে, যার খরচ আগের চেয়ে দ্বিগুণ। প্রশিক্ষক প্রিয়াঙ্কা কান্ডুলাপাতি বলেন, “রেক্রুটাররা এখন মৌলিক এআই দক্ষতা চায়—আমরাও কোর্স সেইভাবে সাজাচ্ছি।”

প্রবীণ ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট বিনোদ খোসলা সতর্ক করে বলেছেন, “আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতের সব আইটি সার্ভিস এআই দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে। সময়টা হবে বেশ অশান্ত।”

ভারতের কলসেন্টার বিপ্লব এখন নতুন রূপ নিচ্ছে—মানবশ্রমের জায়গায় আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এটি হয়তো উৎপাদনশীলতা ও খরচ কমাবে, কিন্তু লাখো তরুণের কর্মজীবনে অস্থিরতা তৈরি করবে। ভারতের এই এআই-নির্ভর রূপান্তর একদিকে যেমন নতুন প্রযুক্তির দিগন্ত উন্মোচন করছে, অন্যদিকে তা কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগও সৃষ্টি করছে।

 

# ভারত, কৃত্রিম_বুদ্ধিমত্তা, এআই_চ্যাটবট, কলসেন্টার, কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি, লাইমচ্যাট, আইটি_খাত, ডিজিটাল_অর্থনীতি

জনপ্রিয় সংবাদ

একদিনে আরও ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৫৮ জন

ভারতে কলসেন্টার কর্মীদের জায়গা নিচ্ছে এআই চ্যাটবট

০৪:৪৮:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

প্রযুক্তির বিপ্লব ও কর্মসংস্থানের নতুন বাস্তবতা

বেঙ্গালুরুতে এক স্টার্টআপ অফিসে একদল তরুণ ডেভেলপার এমন এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন (এআই) চ্যাটবট তৈরি করছেন, যা মানুষের মতো কথা বলে ও মেসেজ পাঠায়। প্রতিষ্ঠানটির নাম লাইমচ্যাট (LimeChat)—তাদের লক্ষ্য গ্রাহকসেবা খাতের মানবকর্মীদের প্রায় অচল করে দেওয়া। কোম্পানির দাবি, তাদের তৈরি জেনারেটিভ এআই এজেন্ট ব্যবহার করলে প্রতি মাসে ১০ হাজার প্রশ্ন সামলাতে যে কর্মী প্রয়োজন হয়, তার সংখ্যা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব।

লাইমচ্যাটের সহপ্রতিষ্ঠাতা নিকিল গুপ্ত বলেন, “একবার আমাদের এআই এজেন্ট নিয়োগ দিলে আর কাউকে নিয়োগের দরকার হবে না।”

ভারতের আইটি খাতে দ্রুত রূপান্তরসস্তা শ্রম ও ইংরেজি দক্ষতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ভারত ছিল বিশ্বের “ব্যাক অফিস”—কিন্তু এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এই খাতের কর্মীদের স্থান দখল করছে। হেডসেট পরিহিত হাজারো গ্রাহকসেবা প্রতিনিধির চাকরি হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের ২৮৩ বিলিয়ন ডলারের আইটি খাতে এই পরিবর্তন এক ভয়াবহ ধাক্কা আনছে। ৩০ জন নির্বাহী, কর্মী ও সরকারি কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, দেশটি প্রযুক্তির গতি থামানোর পরিবর্তে আরও এগিয়ে নিচ্ছে, আশায় যে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং যাদের চাকরি হারাবে তারা অন্য খাতে শোষিত হবে।

বিশ্বব্যাপী কথোপকথনভিত্তিক এআই বাজার প্রতিবছর ২৪% হারে বাড়ছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এর আকার হবে ৪১ বিলিয়ন ডলার।

A laptop screen shows an interaction with an AI chatbot during a visit to the office of AI startup The Media Ant, in Bengaluru

সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও সমালোচনাপ্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, “প্রযুক্তি চাকরি নষ্ট করে না, বরং কাজের ধরণ পাল্টায়।” কিন্তু বিশেষজ্ঞরা একমত নন। ভারতের সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এবং ইউনিভার্সিটি অব বাথের অধ্যাপক সন্তোষ মেহরোত্রা বলেন, “সরকারের কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই যে কীভাবে এআই তরুণ কর্মীদের প্রভাবিত করবে।”

ভারতের কলসেন্টার, পে-রোল ও ডেটা হ্যান্ডলিং খাতে ১৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষ কাজ করেন। কিন্তু স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির কারণে নিয়োগের হার দ্রুত কমছে। স্টাফিং ফার্ম টিমলিজ ডিজিটালের তথ্য অনুযায়ী, এই খাতে গত দুই বছরে কর্মীসংখ্যা মাত্র ১৭ হাজার বেড়েছে—যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৃদ্ধি ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার।

চাকরি হারানোর গল্প৩২ বছর বয়সী মেঘা এস. বেঙ্গালুরুর এক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে বছরে ১০ হাজার ডলার আয় করতেন। গত মাসে তাকে চাকরি হারাতে হয়—কারণ কোম্পানি বিক্রয়কলে মান যাচাইয়ের জন্য নতুন এআই টুল চালু করে। তিনি বলেন, “আমাকে বলা হয়েছিল আমি প্রথম যাকে এআই বদলে দিয়েছে।”

অন্যদিকে, ভারতের শ্রম মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব সুমিতা দাওরা বলেন, “এআই নতুন চাকরি সৃষ্টি করলেও পরিবর্তনের সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বেকারভাতা বা সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করা দরকার।”

Developers attend a meeting inside pods at the office of AI startup LimeChat in Bengaluru

অটোমেশনের সোনার খনি না সংকট?ভারতের আইটি খাত এখন এক “অটোমেশন গোল্ড রাশ”-এর মুখে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন ট্যারিফ, বিদেশি আউটসোর্সিংয়ের ওপর ২৫% করের প্রস্তাব এবং নতুন এইচ-১বি ভিসায় ১ লাখ ডলার ফি—সব মিলিয়ে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

জেফারিস ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরে ভারতের কলসেন্টার আয়ে ৫০% এবং অন্যান্য ব্যাক-অফিস খাতে ৩৫% পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞ প্রমোদ ভাসিনের মতে, দীর্ঘমেয়াদে ভারত “ব্যাক অফিস” থেকে “এআই ফ্যাক্টরি”-তে রূপ নিতে পারে, যেখানে নতুন প্রজন্মের প্রকৌশলীরা বিশ্বব্যাপী অটোমেশন উন্নয়নে কাজ করবে।

লাইমচ্যাটের উত্থান ও প্রতিযোগিতা

লাইমচ্যাট ইতিমধ্যে ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রায় ৫,০০০টি চাকরি স্বয়ংক্রিয় করেছে। তাদের বট এখন ক্লায়েন্টদের ৭০% গ্রাহক অভিযোগ সামলায়, এবং আগামী বছর এই হার ৯০-৯৫%-এ পৌঁছাবে বলে তারা আশা করছে। কোম্পানির আয় ২০২২ সালের ৭৯ হাজার ডলার থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ১৫ লাখ ডলারে পৌঁছেছে।

প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছে রিলায়েন্সের মালিকানাধীন হ্যাপটিক, যারা মানবসদৃশ গ্রাহকসেবা প্রদানকারী এআই এজেন্ট চালু করেছে। তাদের আয় ২০২০ সালে ১ মিলিয়নের নিচে থেকে ২০২৪ সালে বেড়ে ১৮ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

A developer works inside the office of AI startup The Media Ant, in Bengaluru

এআই-চালিত অফিস ও “নেহা”-র গল্প

বেঙ্গালুরুর বিজ্ঞাপন সংস্থা “দ্য মিডিয়া অ্যান্ট” গত এক বছরে তাদের কর্মীসংখ্যা ৪০% কমিয়েছে। ছয় সদস্যের কলসেন্টার এখন বদলে গেছে একটি এআই ভয়েস এজেন্ট “নেহা”-তে, যে নিখুঁত ভারতীয় উচ্চারণে ইংরেজিতে কথা বলে।

যখন একজন সাংবাদিক নেহাকে ইউটিউবে বিজ্ঞাপন বিষয়ে প্রশ্ন করেন, সে বাজেট ও লক্ষ্য বাজার জানতে চায় এবং উত্তর দেয়—“আমি ইমেইলে বিস্তারিত পাঠাব… আপনার দিনটি শুভ হোক।”

তবে সবকিছুই নিখুঁত নয়। অনেক সময় চ্যাটবট জটিল প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়। উদাহরণস্বরূপ, এক এআই বটকে যখন তার দাবি প্রমাণ করতে বলা হয় যে এক মিলিয়ন চিকিৎসক তাদের পণ্য ব্যবহার করেন, তখন সে জবাব দেয়—“আমি দুঃখিত, পর্যাপ্ত তথ্য নেই।”

ভোক্তার মনোভাব ও বাস্তব সীমাবদ্ধতা

২০২৪ সালের অগাস্টে ইওয়াইয়ের এক জরিপে দেখা যায়, ভারতের ৬২% ভোক্তা এআইয়ের পরামর্শে ক্রয় সিদ্ধান্ত নেন—যা বৈশ্বিক গড়ের দ্বিগুণ। কিন্তু ৭৮% ব্যবহারকারী এখনও মানুষ-নির্ভর সহায়তাকেই পছন্দ করেন।

লাইমচ্যাটের নিকিল গুপ্ত অবশ্য বলেন, “সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত এআই এজেন্ট মানুষের চেয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে পারে। কেবল কিছু জটিল ও নেতিবাচক গ্রাহক অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রেই মানব হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।”

People walk around a complex of software skill training centres surrounded by multiple billboards in Hyderabad

জাভা থেকে এআই: প্রশিক্ষণের নতুন দিগন্ত

৯০ ও ২০০০-এর দশকে ভারতের আইটি বুম গ্রামীণ যুবকদের শহরমুখী করেছিল। আজ সেই হায়দরাবাদের আমিরপেট অঞ্চল আবারও সরব, তবে এবার প্রোগ্রামিংয়ের পরিবর্তে এআই প্রশিক্ষণে।

“কোয়ালিটি থট” নামের একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র এখন ৯ মাসের “এআই ডেটা সায়েন্স ও প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং” কোর্স চালু করেছে, যার খরচ আগের চেয়ে দ্বিগুণ। প্রশিক্ষক প্রিয়াঙ্কা কান্ডুলাপাতি বলেন, “রেক্রুটাররা এখন মৌলিক এআই দক্ষতা চায়—আমরাও কোর্স সেইভাবে সাজাচ্ছি।”

প্রবীণ ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট বিনোদ খোসলা সতর্ক করে বলেছেন, “আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতের সব আইটি সার্ভিস এআই দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে। সময়টা হবে বেশ অশান্ত।”

ভারতের কলসেন্টার বিপ্লব এখন নতুন রূপ নিচ্ছে—মানবশ্রমের জায়গায় আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এটি হয়তো উৎপাদনশীলতা ও খরচ কমাবে, কিন্তু লাখো তরুণের কর্মজীবনে অস্থিরতা তৈরি করবে। ভারতের এই এআই-নির্ভর রূপান্তর একদিকে যেমন নতুন প্রযুক্তির দিগন্ত উন্মোচন করছে, অন্যদিকে তা কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগও সৃষ্টি করছে।

 

# ভারত, কৃত্রিম_বুদ্ধিমত্তা, এআই_চ্যাটবট, কলসেন্টার, কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি, লাইমচ্যাট, আইটি_খাত, ডিজিটাল_অর্থনীতি