২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে গড় পাসের হার নেমে এসেছে মাত্র ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশে। গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কম এই হার শিক্ষাব্যবস্থার মান ও শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
ফলাফল প্রকাশ
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ড একযোগে ফলাফল প্রকাশ করে। বাংলাদেশ আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন। এবারে মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়।
ফলাফল জানার উপায়
শিক্ষার্থীরা তিনটি মাধ্যমে ফলাফল জানতে পারবে—
১. ওয়েবসাইটে: সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে রেজাল্ট কর্নারে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের EIIN নম্বর দিয়ে রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করা যাবে।
২. প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে: শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা বোর্ডের সমন্বিত ওয়েবসাইট থেকে ফলাফল সংগ্রহ করতে পারবে।
৩. এসএমএসে: ফলাফল জানার জন্য HSC বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর, রোল ও বছর লিখে 16222-তে পাঠাতে হবে।
উদাহরণ: HSC Dha 123456 2024 লিখে 16222-তে পাঠালে ফলাফল ফিরে আসবে।
শিক্ষা বোর্ডের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বোর্ড অফিস বা কোনো সংবাদপত্র অফিসে সরাসরি ফলাফল পাওয়া যাবে না।
পরীক্ষার সময়সূচি ও অংশগ্রহণ
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ২৬ জুন এবং শেষ হয় ১৯ আগস্ট। ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২১ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। মোট ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেয়।
আগের বছরের তুলনায় পার্থক্য
সাল | গড় পাসের হার (%) | বিশেষ মন্তব্য |
---|---|---|
২০২১ | ৯৫.২৬ | কোভিড-পরবর্তী বিশেষ মূল্যায়ন |
২০২২ | ৮৫.৯৫ | পরীক্ষায় স্বাভাবিক ধারায় ফেরা |
২০২৩ | ৭৪.৮৯ | প্রশ্নপত্রের মান কঠোর হয় |
২০২৪ | ৭৮.২৯ | ফলাফলে সামান্য উন্নতি |
২০২৫ | ৫৮.৮৩ | গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পাসের হার |
শিক্ষাবিদদের মতামত
শিক্ষাবিদদের মতে, এ বছরের ফলাফল একটি সতর্ক সংকেত। তাঁদের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে—
- নতুন পাঠ্যক্রমের চাপ এবং মূল্যায়ন কাঠামোর পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
- কোভিড-পরবর্তী সময়ের শিক্ষাগত ঘাটতি এখনও পুরোপুরি কাটেনি।
- বহু শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাস ও পুনরাবৃত্তির অভাবে প্রস্তুতিতে পিছিয়ে ছিল।
শিক্ষা বিশ্লেষক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “পাঠ্যসূচির গভীরতা বোঝার দক্ষতা বাড়ানো ছাড়া ফলাফল উন্নতি সম্ভব নয়। সংখ্যায় কম পাস মানেই দুর্বল প্রজন্ম নয়, বরং মূল্যায়ন আরও বাস্তবভিত্তিক হয়েছে।”
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
ফলাফল ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ বলছেন, কঠোর মূল্যায়নের কারণে বাস্তবচিত্র স্পষ্ট হয়েছে; আবার কেউ প্রশ্ন তুলছেন প্রশ্নের মান ও পুনর্মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে।
রাজধানীর এক কলেজছাত্রী জানিয়েছেন, “বেশ কয়েকটি বিষয় কঠিন ছিল, কিন্তু আমি আশা করিনি পাসের হার এত কম হবে।”
সামনে কী?
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাসের হার কমে যাওয়ার কারণ বিশ্লেষণে শিগগিরই একটি বোর্ডসমূহের যৌথ মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। একই সঙ্গে আগামী বছরের প্রশ্ন কাঠামো ও মূল্যায়নপদ্ধতিতেও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
#এইচএসসি২০২৫ #ফলাফল #শিক্ষাবোর্ড #শিক্ষামন্ত্রণালয় #সারাক্ষণরিপোর্ট