ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে নোবেল শান্তি পুরস্কার
২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো। পুরস্কারের ঘোষণার পর থেকেই এটি নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষত ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রেক্ষাপটে। মাচাদোর দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা এবং তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা পুনরায় সেই বিতর্কে ফেলে দিয়েছে যা “শান্তি” এবং “পুনঃপ্রতিষ্ঠান” শব্দগুলোর অর্থ নির্ধারণে বিভ্রান্তি তৈরি করছে।
মাচাদোর রাজনৈতিক যাত্রা
মাচাদো একজন প্রকৌশলী এবং গত দুই দশক ধরে ভেনেজুয়েলার বিরোধী রাজনীতিতে অন্যতম পরিচিত মুখ। তিনি “সুমাত” নামক একটি সিভিক প্ল্যাটফর্মের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য স্বেচ্ছাসেবক নেটওয়ার্ক তৈরি করে। তবে এই প্ল্যাটফর্মটি আমেরিকান প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিদেশি তহবিল পাওয়ার অভিযোগের মধ্যে পড়েছিল, যদিও মাচাদো সেগুলো বৈধ বলে দাবি করেন। ২০০২ সালে হুগো চাভেজের বিরুদ্ধে সাময়িক সরকার গঠন এবং এর সাথে মাচাদোর নাম জড়ানো, তাকে সরকারের বিরুদ্ধে একটি “পটভূমি পরিবর্তনের” প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বিভিন্ন সময় মাচাদো বিদেশি তহবিলের অভিযোগ এবং প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা পরিকল্পনার মতো অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছেন। তবে তিনি সবসময় এই অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে নাকচ করেছেন।
নোবেল পুরস্কারের প্রসঙ্গ
অসলো নোবেল কমিটি মাচাদোর নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করেছে “ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রচার এবং একনায়কতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের সংগ্রামে তাঁর অক্লান্ত কাজের জন্য।” তবে এই ভাষাটি অনেকের কাছে পরিচিত হলেও, এর প্রেক্ষাপট নতুন এবং বিভ্রান্তিকর। মাচাদোর কর্মকাণ্ডের সাথে বিদেশি সহায়তার সংশ্লিষ্টতা এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দায়বদ্ধতা বিষয়টি অনেকের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছে।
ট্রাম্পের নোবেল না পাওয়া
২০২৫ সালের জন্য ট্রাম্পের নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রস্তাবনা ছিল একটি আলোচিত বিষয়। মার্কিন প্রশাসন তার দ্বিতীয় মেয়াদে বিদেশী নীতিতে সক্রিয় ছিল এবং ট্রাম্পের সমর্থকদের মতে, তিনি বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। তবে, নোবেল কমিটি তার এ সব কৃতিত্বকে প্রশংসা না করে, অন্যদিকে মাচাদোর মতো একজন বিরোধী নেত্রীকে পুরস্কৃত করে রাজনৈতিক দর্শনের প্রতি তার সমর্থন জোরালো করেছে।
নোবেল পুরস্কারের রাজনৈতিক রঙ
অসলো নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তে অনেকেই মনে করছেন, এটি শুধু ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক সঙ্কটকে নয়, বরং ট্রাম্প এবং পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে উপস্থাপন করে। বিশেষত, ট্রাম্পের মতো একটি নেতার জন্য পুরস্কারের বিরোধিতা এবং মাচাদোর প্রতি সমর্থন এটি স্পষ্ট করে যে নোবেল পুরস্কার এখন একটি রাজনৈতিক পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী “শান্তি” কিভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দেয়।
নোবেল পুরস্কারের প্রতিফলন
এই বছর নোবেল কমিটি একে “শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের” পুরস্কার হিসাবে উপস্থাপন করেছে, তবে এটি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক অবস্থান নেওয়া পুরস্কার, যা ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অবস্থানকে সমর্থন করে। এর মাধ্যমে নোবেল কমিটি শান্তির সংজ্ঞা এবং এটি অর্জন করার জন্য ব্যবহৃত পন্থা সম্পর্কে নতুন প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী আরও আলোচনার সৃষ্টি করবে।
মাচাদোর পুরস্কারের বিষয়টি ভেনেজুয়েলা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির দৃশ্যপটে এক নতুন আলোচনার সূচনা করল, যেখানে শান্তির সংজ্ঞা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার উপায় সম্পর্কে বিশ্বের বিভিন্ন অংশের দৃষ্টিভঙ্গি পরিস্ফুটিত হচ্ছে।