ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতার নতুন পর্বে প্রবেশ করলেও, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যে আলোচনায় এসেছে রাশিয়া-ভারত তেল বাণিজ্য। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে—তবে এই প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগবে।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের ঘোষণা
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, “মোদী আমার বন্ধু। আমাদের সম্পর্ক চমৎকার। আমরা সন্তুষ্ট ছিলাম না যে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনছে—এতে রাশিয়া তার হাস্যকর যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারছে যেখানে তারা প্রায় দেড় মিলিয়ন মানুষ হারিয়েছে। মোদী আজ আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, ভারত আর রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না। এটা বড় পদক্ষেপ। এখন আমাদের চীনকেও একই পথে আনতে হবে।”
যুদ্ধ শেষ হলে আবার বাণিজ্য
ট্রাম্প শুধু তেল বাণিজ্য বন্ধের বিষয়েই নয়, ভারতের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “জেলেনস্কি ও পুতিনের মধ্যে ঘৃণা অনেক গভীর—এটাই এখন প্রধান বাধা। কিন্তু যদি ভারত তেল কেনা বন্ধ করে, যুদ্ধ থামানো সহজ হবে। তারা রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না, যুদ্ধ শেষ হলে তবেই আবার সেই বাণিজ্য শুরু হবে।”
তবে প্রেসিডেন্টের মতে, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে কিছুটা সময় লাগবে। “মোদী এখন আর রাশিয়া থেকে তেল কিনছেন না। তবে এটি হঠাৎ করে সম্ভব নয়—একটু সময় লাগবে, তবে শিগগিরই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হবে,” বলেন ট্রাম্প।
‘মোদী ট্রাম্পকে ভালোবাসেন’ মন্তব্যে হাসির রেশ
ভারতকে ‘অসাধারণ দেশ’ আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রাষ্ট্রদূত সার্জিও গোর তাঁকে জানিয়েছেন, “মোদী ট্রাম্পকে ভালোবাসেন।”
ট্রাম্প হেসে বলেন, “তিনি আমাকে ভালোবাসেন, তবে শব্দটিকে ভুলভাবে নেবেন না — আমি তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট করতে চাই না।” তাঁর এই মন্তব্যে হোয়াইট হাউসের সাংবাদিকদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে।
বাণিজ্য আলোচনার সূক্ষ্ম সময়ে এ মন্তব্য
এই দাবি আসে এমন সময়ে, যখন দিল্লি ও ওয়াশিংটন বাণিজ্য আলোচনায় ব্যস্ত। আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র-ভারতীয় আমদানিতে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছিল।
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন। ভারত বর্তমানে চীনের পর রুশ জ্বালানির দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। এই কারণেই আগস্টে ট্রাম্প প্রশাসন অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্কও আরোপ করে।
সম্পর্কের উষ্ণতা ও আলোচনার লক্ষ্য
তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দুই দেশের সম্পর্ক কিছুটা উষ্ণ হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, “আমি মোদীর সঙ্গে সবসময় বন্ধুত্ব রাখব।” মোদীও পাল্টা মন্তব্যে বলেন, “ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি ইতিবাচক ও ভবিষ্যতমুখী কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে উঠছে।”
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা কয়েক মাস ধরে চলছে এবং নভেম্বরের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে পারস্পরিকভাবে গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব তৈরির কাজ চলছে, যদিও রাশিয়ার সঙ্গে তেল বাণিজ্য, এখনো আলোচনার প্রধান জটিলতা হিসেবে রয়ে গেছে।
ভারত_যুক্তরাষ্ট্র_সম্পর্ক
ডোনাল্ড_ট্রাম্প
নরেন্দ্র_মোদী
রাশিয়া_তেল_বাণিজ্য
আন্তর্জাতিক_রাজনীতি
সারাক্ষণ_রিপোর্ট