প্রতিকূল বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও মন্দার আশঙ্কা সত্ত্বেও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ভারতের রপ্তানি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। পণ্য ও সেবা দুই খাতেই সমান উন্নতি দেখা গেছে, যা দেশের অর্থনীতিতে আস্থার বার্তা দিয়েছে।
রপ্তানিতে নতুন উচ্চতা
চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের (এপ্রিল–সেপ্টেম্বর) প্রথমার্ধে ভারতের মোট রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ৪১৩ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪.৪৫ শতাংশ বেশি। বাণিজ্য সচিব রাজেশ আগরওয়াল জানিয়েছেন, এই বৃদ্ধিতে পণ্য ও সেবা উভয় খাতের অবদান রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভারত বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) চূড়ান্ত করার পথে রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও পারস্পরিকভাবে লাভজনক একটি বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে।
পণ্য ও সেবা খাতে সমান উন্নতি
আগরওয়ালের মতে, গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ভারতের রপ্তানি ছিল ৩৯৫ বিলিয়ন ডলার, যা এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১৩ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে সেবা খাতের রপ্তানি ১৮২ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১৯৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে এবং পণ্য খাতের রপ্তানি ২১৩ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ২২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
বাণিজ্য ঘাটতি ও আমদানির পরিবর্তন
চলতি বছরের প্রথমার্ধে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ৫৯.৪৮ বিলিয়ন ডলারে, যেখানে গত বছর একই সময়ে তা ছিল ৬০.৮৭ বিলিয়ন ডলার। আগরওয়াল জানান, সেপ্টেম্বর মাসে সোনা, সার, রূপা ও ইলেকট্রনিক পণ্যের আমদানি বেড়েছে, তবে পুরো ছয় মাসে সোনার মোট আমদানি গত বছরের তুলনায় কম।
সেপ্টেম্বর ২০২৫ মাসে ভারতের পণ্য রপ্তানি ৬.৭৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬.৩৮ বিলিয়ন ডলারে, অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে ১৬.৬ শতাংশে। এর ফলে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে হয়েছে ৩২.১৫ বিলিয়ন ডলার—যা গত ১৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
উৎসব ও কৃষিখাতের চাহিদা প্রভাবিত করেছে আমদানি
আগরওয়াল জানান, সেপ্টেম্বরে উৎসব মৌসুমের কারণে মূল্যবান ধাতুর আমদানি বেড়েছে এবং সার আমদানির বৃদ্ধি এসেছে কৃষিখাতের সক্রিয়তার কারণে। একইসঙ্গে ইলেকট্রনিক উপকরণের আমদানি বৃদ্ধি ভারতের অর্থনীতির গতিশীলতার ইঙ্গিত বহন করে।
আইএমএফের আশাবাদ: ভারতের প্রবৃদ্ধি বাড়বে
বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ভারতের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬.৬ শতাংশ করেছে, যা অর্থনীতির শক্তিশালী অবস্থান ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রমাণ। তিনি উল্লেখ করেন, জিএসটি হ্রাসের ফলে ভোক্তা ব্যয় বেড়েছে এবং অবকাঠামো খাতে দ্রুত বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অন্যদিকে, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি এই বছর ৩.৩ শতাংশ থেকে কমে ৩.২ শতাংশে নেমে আসবে বলে আইএমএফ জানিয়েছে।
দ্বিতীয়ার্ধে আশার আলো
সরকারি কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে (দ্বিতীয়ার্ধ, FY26) বৈশ্বিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে এবং ভারত পারস্পরিকভাবে লাভজনক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সুযোগ নিতে পারবে। ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভারতের FTA স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং ইউরোপীয় ফ্রি ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন (EFTA)-এর সঙ্গে চুক্তি কার্যকর হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তির শেষ পর্যায়
ইইউর সঙ্গে ভারতের FTA আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে আগরওয়াল বলেন, “আলোচনা খুবই ভালোভাবে এগোচ্ছে এবং এখন শেষ পর্যায়ে।” সম্প্রতি ব্রাসেলসে ১৪তম দফার আলোচনা শেষ হলেও কিছু ভারতীয় কর্মকর্তা সেখানে থেকে নিয়মকানুন সংক্রান্ত (Rules of Origin) বিষয়গুলো সমাধান করছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই এই চুক্তি সম্পন্ন হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনা
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি (BTA) নিয়ে আলোচনাও চলছে। আগরওয়াল জানান, ভারতের প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে এবং তিনি নিজেও ওয়াশিংটন ডিসিতে গিয়ে আলোচনায় যোগ দেবেন।
ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্বালানি আমদানি বাড়াতে আগ্রহী। গত ৭–৮ বছরে এই খাতে আমদানি ২৫ বিলিয়ন ডলার থেকে নেমে এসেছে ১২–১৩ বিলিয়ন ডলারে; যা আবার দ্রুত বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
# : ভারত_রপ্তানি, আন্তর্জাতিক_বাণিজ্য, ইউরোপীয়_ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র_ভারত_সম্পর্ক, অর্থনৈতিক_বৃদ্ধি, সারাক্ষণ_রিপোর্ট