যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বিধিনিষেধে চীনা এয়ারলাইন্সের আপত্তি
যুক্তরাষ্ট্র সরকার চীনা বিমান সংস্থাগুলোর রাশিয়ার আকাশপথ ব্যবহার বন্ধ করার যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা কার্যকর হওয়ার আগেই চীনের সব বড় এয়ারলাইন্স আনুষ্ঠানিকভাবে এর বিরোধিতা করেছে। আগামী মাস থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন দপ্তরে দাখিল করা এক নথিতে এয়ার চায়না জানায়, তারা এই প্রস্তাবের “বিরোধিতা” করছে, কারণ এটি যাত্রীদের জন্য ভ্রমণকে আরও জটিল করে তুলবে।
যাত্রীদের ভ্রমণ পরিকল্পনায় বড় প্রভাব
এয়ার চায়নার হিসেবে, যদি এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়, তাহলে শুধু নভেম্বর ও ডিসেম্বর ২০২৫ মাসেই প্রায় ৪,৪০০ যাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এই সময়টিতে থ্যাংকসগিভিং ও বড়দিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ উৎসব রয়েছে, ফলে যাত্রীদের অসুবিধা ও জনস্বার্থের ক্ষতি হবে বলে সংস্থাটি উল্লেখ করে।
কোম্পানিটি আরও প্রস্তাব করেছে যে, যদি যুক্তরাষ্ট্র সরকার সিদ্ধান্তে অটল থাকে, তবে অন্তত ৬০ দিনের সময়সীমা দেওয়া হোক, যাতে যাত্রীরা পুনরায় টিকিট বুক করতে পারেন এবং কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা না ঘটে।
অন্যান্য চীনা এয়ারলাইন্সের অবস্থান
এয়ার চায়না ছাড়াও চায়না সাউদার্ন, চায়না ইস্টার্ন, হাইনান, শিয়ামেন ও সিচুয়ান এয়ারলাইন্সও যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দিয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক উত্তেজনা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং এই প্রস্তাব সেই দ্বন্দ্বকে আরও জটিল করে তুলছে।
মার্কিন যুক্তি: প্রতিযোগিতায় ভারসাম্য আনাই লক্ষ্য
যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন বিভাগ বলেছে, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো মার্কিন ও চীনা বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতার ভারসাম্য আনা। মার্কিন এয়ারলাইন্সগুলো ২০২২ সাল থেকে রাশিয়ার আকাশপথে উড়তে পারছে না—যা মস্কোর প্রতিশোধমূলক নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু চীনা এয়ারলাইন্সগুলো রাশিয়ার আকাশপথ ব্যবহার করে সময় ও খরচ বাঁচাতে পারছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মতে এটি একধরনের “অন্যায্য সুবিধা।”
মার্কিন বিমান সংস্থাগুলোও তাদের আনুষ্ঠানিক মন্তব্যে এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে।
পরিবেশগত দিক থেকে বিপরীত ফলাফল
তবে চীনের শিয়ামেন এয়ারলাইন্স যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাবের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, রুট পরিবর্তন করলে উড়োজাহাজকে আরও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে, ফলে জ্বালানি খরচ ও কার্বন নিঃসরণ বাড়বে—যা টেকসই ও পরিবেশবান্ধব বিমান চলাচলের লক্ষ্যবিরোধী।
তাদের নথিতে বলা হয়েছে, “এই প্রস্তাব কার্যকর হলে এটি টেকসই ও পরিবেশগত দায়িত্বশীলতা প্রচারের যৌথ লক্ষ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।”
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই প্রস্তাব “দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগের জন্য সহায়ক নয়” এবং এটি “যুক্তরাষ্ট্রের নিজের স্বার্থকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।” তারা আরও দাবি করেছে, মার্কিন জনগণের মধ্যেও এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিরোধিতা রয়েছে।
চীন, যুক্তরাষ্ট্র, বিমান চলাচল, রাশিয়া, বাণিজ্য সম্পর্ক, পরিবেশ, কূটনীতি