বৈশ্বিক জরিপে হংকংয়ের অবস্থান সর্বনিম্ন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিসকো (Cisco) পরিচালিত এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, বৈশ্বিক ৩০টি বাজারের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই পুরোপুরি গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে হংকং। এই জরিপটি আগস্টে সম্পন্ন হয় এবং ফলাফল প্রকাশিত হয় বুধবার।
জরিপ অনুযায়ী, হংকংয়ের অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাত্র ২ শতাংশকে “পেসসেটার” বা নেতৃত্বদানকারী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে—যেসব প্রতিষ্ঠান এআই ব্যবহারের নানা সূচকে তাদের প্রতিযোগীদের চেয়ে ভালো করেছে। বৈশ্বিকভাবে এই অনুপাত ১৩ শতাংশ।
সিসকোর এই জরিপে ২৬টি শিল্পক্ষেত্রের ৮,০০০-এরও বেশি আইটি ও ব্যবসা খাতের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার অংশগ্রহণ ছিল, যারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের এআই কৌশল নির্ধারণে দায়িত্বশীল।
এআই রোডম্যাপ ও নিরাপত্তা সচেতনতায় ঘাটতি
জরিপে দেখা যায়, “পেসসেটার” শ্রেণির ৯৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের সুস্পষ্ট এআই রোডম্যাপ রয়েছে, কিন্তু হংকংয়ের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা মাত্র ৩২ শতাংশ।
এ ধরনের নেতৃত্বদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত এআই ব্যবহার বাড়ানো, এটিকে প্রধান বিনিয়োগ অগ্রাধিকার হিসেবে নির্ধারণ, নতুন ডেটা সেন্টার স্থাপন, এবং বিনিয়োগের ফলাফল ট্র্যাক করার দিকে বেশি মনোযোগী।
তারা এআই-সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা ঝুঁকি সম্পর্কেও তুলনামূলকভাবে বেশি সচেতন।

সিসকোর এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ক্লাউড ও এআই অবকাঠামো পরিচালক সাইমন মিচেলি বলেন, “হংকংয়ের এআই প্রস্তুতি এতটা কম হবে তা কিছুটা বিস্ময়কর।”
উদীয়মান অর্থনীতিগুলো এগিয়ে
সিসকোর এশিয়া-প্যাসিফিক, জাপান ও গ্রেটার চায়না অঞ্চলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বেন ডসন বলেন, “অবাক করা বিষয় হলো—ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে এআই গ্রহণের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর কাছে উন্নত দেশগুলোকে টপকে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।”
“এআই অবকাঠামো ঋণ” সংকটে হংকং
জরিপে হংকংয়ের প্রতিষ্ঠানে তথাকথিত “এআই ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেট” বা অবকাঠামোগত ঘাটতির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সিসকো এই ধারণাকে সংজ্ঞায়িত করেছে “প্রযুক্তিগত ও ডিজিটাল দুর্বলতা হিসেবে, যা প্রতিষ্ঠানের রূপান্তর প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।”
এই ঘাটতি তৈরি হয়েছে বারবার সংস্কার বিলম্ব, পর্যাপ্ত অর্থায়নের অভাব এবং নকশাগত সীমাবদ্ধতার কারণে।
জরিপে দেখা যায়, হংকংয়ের ৩৮ শতাংশ উত্তরদাতা অনুমান করছেন আগামী তিন বছরের মধ্যে তাদের কাজের চাপ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে। ৬৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এখনো কেন্দ্রীভূত ডেটা ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হিমশিম খাচ্ছে, এবং মাত্র ১৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শক্তিশালী চিপ সক্ষমতা রয়েছে।
এছাড়া পাঁচটির মধ্যে একটিরও কম প্রতিষ্ঠান এআই-নির্দিষ্ট সাইবার হুমকি শনাক্ত বা প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

আগামী বছরে এআই এজেন্ট চালুর পরিকল্পনা
যদিও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবু হংকংয়ের ৭১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে তারা আগামী এক বছরের মধ্যে এআই এজেন্ট ব্যবহার শুরু করবে, যারা কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ সম্পাদন করবে।
সিসকোর সভাপতি ও প্রধান পণ্য কর্মকর্তা জিতু প্যাটেল বলেন, “আমরা এখন প্রশ্নোত্তর ভিত্তিক চ্যাটবটের যুগ থেকে এগিয়ে গিয়েছি—এখন আসছে এমন এক নতুন এআই পর্ব, যেখানে স্বয়ংক্রিয় এজেন্টরা স্বাধীনভাবে কাজ সম্পন্ন করবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “যেসব প্রতিষ্ঠান এই পরিবর্তনে এগিয়ে, তারা ইতিমধ্যেই অন্যদের তুলনায় বহুগুণ বেশি ফল পাচ্ছে।”
#হংকং #কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা #সিসকো #প্রযুক্তি #এআই_অবকাঠামো #ডিজিটাল_রূপান্তর #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















