বিশ্বের সামরিক শক্তির ভারসাম্যে এক নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে। নিউজউইকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত এখন চীনকে পেছনে ফেলে বিশ্বের তৃতীয় শক্তিশালী বিমানবাহিনীর মর্যাদা অর্জন করেছে। এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যে এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
বৈশ্বিক সামরিক ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এখনও সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে, এরপরই রাশিয়া। তবে ভারতের দ্রুত উত্থান এশিয়ার শক্তির ভারসাম্যে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বহুদিন ধরে আকাশ-শক্তিতে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত চীন এবার তালিকায় চতুর্থ স্থানে নেমে গেছে।
বিশ্বের ১০৩টি দেশ এবং ১২৯টি সামরিক বিমান ইউনিটের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছে এই ওয়ার্ল্ড ডিরেক্টরি অব মডার্ন মিলিটারি এয়ারক্রাফট (WDMMA) র্যাঙ্কিং। এতে মোট ৪৮,০৮২টি বিমান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে স্থলবাহিনী, নৌবাহিনী ও মেরিন এভিয়েশন শাখার বিমান।
বিমান শক্তির তাৎপর্য
বিশ্বজুড়ে সামরিক কৌশলে বিমান শক্তি এখনও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান সক্ষমতা একাই রাশিয়া, চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের যৌথ শক্তির চেয়েও এগিয়ে। বৈশ্বিক সামরিক ব্যয়ের প্রায় ৪০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের হাতে, যা তাদের প্রভাবকে আরও মজবুত করে তুলেছে।
অন্যদিকে, ভারত ও চীন ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে নিজেদের বিমানবাহিনীকে আধুনিকীকরণের পথে এগিয়ে নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষণ সংস্থা জেনস (Janes) পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা ব্যয় ৩.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২.৫৬ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। এই ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী সংঘাতের তীব্রতা ও কৌশলগত পুনর্গঠনের প্রতিফলন, যা আধুনিক যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক প্রতিরোধনীতিতে বিমান শক্তির ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব নির্দেশ করে।
ভারতের অবস্থান ও সক্ষমতা
বর্তমানে ভারতের বিমানবাহিনীর TruVal Rating (TVR) ৬৯.৪, যা এটিকে বৈশ্বিক তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে রেখেছে। এই রেটিং কেবল বিমানের সংখ্যা নয়, বরং আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা ক্ষমতা, লজিস্টিক সহায়তা, আধুনিকীকরণ এবং প্রশিক্ষণ মানকেও বিবেচনায় নেয়।
ভারতের বিমানবাহিনীর বহরে বর্তমানে ১,৭১৬টি ইউনিট রয়েছে—এর মধ্যে ৩১.৬ শতাংশ যুদ্ধবিমান, ২৯ শতাংশ হেলিকপ্টার এবং ২১.৮ শতাংশ প্রশিক্ষণ বিমান। ভারতের বিমানবাহিনী যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিমান সংগ্রহ করে, যা তাদের কৌশলগত অবস্থানকে আরও জটিল ও বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে।
‘অপারেশন সিন্ধুর’ ও ভারতের সক্ষমতা
ভারতের বিমানবাহিনীর কার্যকরী দক্ষতার প্রমাণ মিলেছে সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিন্ধুর’-এ। গত মে মাসে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে অবকাঠামো লক্ষ্য করে এই নিখুঁত বিমান হামলা চালানো হয়।
এই অভিযানটি ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পাহালগামে সংঘটিত এক সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে পরিচালিত হয়, যেখানে ২৬ জন নিহত হন। ‘অপারেশন সিন্ধুর’ ভারতের সীমান্ত পেরিয়ে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখানোর সক্ষমতা ও কৌশলগত নিখুঁততা তুলে ধরে।
এই মিশন ভারতের বিমানবাহিনীর ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিগত দক্ষতা, সমন্বয় এবং কৌশলগত প্রসারতার প্রতীক। আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে এটি ভারতের আকাশ নিয়ন্ত্রণ ও সামরিক প্রভাব বৃদ্ধির একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নিউজউইকের এই র্যাঙ্কিং বিশ্বে ভারতের সামরিক শক্তির এক নতুন বাস্তবতা তুলে ধরেছে। এটি কেবল ভারতের প্রতিরক্ষা আধুনিকীকরণের সাফল্য নয়, বরং এশিয়ায় নতুন কৌশলগত ভারসাম্যেরও ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ভারত, চীন, বিমানবাহিনী, নিউজউইক, সামরিক শক্তি, বিশ্ব র্যাঙ্কিং, প্রতিরক্ষা, অপারেশন সিন্ধুর, এশিয়া, ভূরাজনীতি, সারাক্ষণ রিপোর্ট