১১:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে মজুত বৃদ্ধি ও ভারতের রুশ তেল আমদানি স্থগিতের সম্ভাবনায় বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা

বুদাপেস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আসন্ন বৈঠকের ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার তেলের দাম ১ শতাংশের বেশি কমে গেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ ও বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ায় বাজারে নতুন অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

তেলের দাম ৫ মাসের সর্বনিম্নে

ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৫ সেন্ট বা ১.৩৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬১.০৬ ডলারে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) তেলের দাম কমে ব্যারেলপ্রতি ৫৭.৪৬ ডলারে নেমে আসে, যা গত ৫ মে মাসের পর সর্বনিম্ন।

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের প্রভাব

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ও পুতিন শিগগিরই হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে বৈঠকে বসবেন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে। এই ঘোষণা এসেছে এমন সময়ে, যখন ট্রাম্পের ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে পরদিনই।
অর্থনীতিবিদ টিম স্নাইডার বলেন, “রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা আবার বাড়তে শুরু করেছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।”

যুক্তরাষ্ট্রে তেল মজুত বৃদ্ধি

এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (EIA) জানিয়েছে, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রুড তেলের মজুত বেড়ে ৩.৫ মিলিয়ন ব্যারেলে পৌঁছেছে, যা বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি। প্রত্যাশা ছিল মাত্র ২.৮৮ মিলিয়ন ব্যারেল বৃদ্ধি।
এই অতিরিক্ত মজুতের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে শোধনাগারের মৌসুমি রক্ষণাবেক্ষণ এবং কার্যক্রমের সীমিত ব্যবহার। ইউবিএস বিশ্লেষক জিওভানি স্টাউনোভো জানান, “তথ্যটি সামান্য নেতিবাচক, কারণ চাহিদা আগের সপ্তাহের তুলনায় দুর্বল।”

রেকর্ড পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন

তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক তেল উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ব্যারেল, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

ভারতের রুশ তেল আমদানি নিয়ে নতুন অনিশ্চয়তা

বাজারে আরেকটি বড় আলোচ্য বিষয় হলো ভারতের রুশ তেল আমদানির ভবিষ্যৎ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বুধবার তাকে জানিয়েছেন যে ভারত শিগগিরই রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে। বর্তমানে রাশিয়া ভারতের মোট তেল আমদানির এক-তৃতীয়াংশ সরবরাহ করে।
আইজি মার্কেট বিশ্লেষক টনি সাইকামোর বলেন, “ভারতের এই সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক বাজারে রুশ তেলের ক্রেতা কমিয়ে দেবে, যা মূল্যবৃদ্ধির দিকে প্রভাব ফেলতে পারে।”

ভারতের অবস্থান ও রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া

তবে ভারত জানায়, তাদের মূল লক্ষ্য হলো জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখা ও সরবরাহ নিশ্চিত করা। দেশটি ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। অন্যদিকে রাশিয়া আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়েছে, ভারতের সঙ্গে তাদের জ্বালানি সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞা

এদিকে, ব্রিটেন সরকার বুধবার রাশিয়ার দুটি বৃহৎ জ্বালানি কোম্পানি রসনেফট ও লুকঅয়েলের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যা রাশিয়ার বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে অবস্থানকে আরও চাপে ফেলতে পারে।

বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি

মার্কিন-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা এবং সম্ভাব্য তেল সরবরাহের উদ্বৃত্ত আশঙ্কাও বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের অনিশ্চয়তা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মজুত বৃদ্ধি একসঙ্গে তেলের দামের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছে।

#t: তেলবাজার, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক, রাশিয়া, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনীতি, জ্বালানি সংকট, রসনেফট, লুকঅয়েল, সারাক্ষণ রিপোর্ট
জনপ্রিয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রে মজুত বৃদ্ধি ও ভারতের রুশ তেল আমদানি স্থগিতের সম্ভাবনায় বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা

০৬:৫২:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

বুদাপেস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আসন্ন বৈঠকের ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার তেলের দাম ১ শতাংশের বেশি কমে গেছে। ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ ও বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ায় বাজারে নতুন অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

তেলের দাম ৫ মাসের সর্বনিম্নে

ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৫ সেন্ট বা ১.৩৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬১.০৬ ডলারে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) তেলের দাম কমে ব্যারেলপ্রতি ৫৭.৪৬ ডলারে নেমে আসে, যা গত ৫ মে মাসের পর সর্বনিম্ন।

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের প্রভাব

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ও পুতিন শিগগিরই হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে বৈঠকে বসবেন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে। এই ঘোষণা এসেছে এমন সময়ে, যখন ট্রাম্পের ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে পরদিনই।
অর্থনীতিবিদ টিম স্নাইডার বলেন, “রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা আবার বাড়তে শুরু করেছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।”

যুক্তরাষ্ট্রে তেল মজুত বৃদ্ধি

এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (EIA) জানিয়েছে, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রুড তেলের মজুত বেড়ে ৩.৫ মিলিয়ন ব্যারেলে পৌঁছেছে, যা বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি। প্রত্যাশা ছিল মাত্র ২.৮৮ মিলিয়ন ব্যারেল বৃদ্ধি।
এই অতিরিক্ত মজুতের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে শোধনাগারের মৌসুমি রক্ষণাবেক্ষণ এবং কার্যক্রমের সীমিত ব্যবহার। ইউবিএস বিশ্লেষক জিওভানি স্টাউনোভো জানান, “তথ্যটি সামান্য নেতিবাচক, কারণ চাহিদা আগের সপ্তাহের তুলনায় দুর্বল।”

রেকর্ড পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন

তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক তেল উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ব্যারেল, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

ভারতের রুশ তেল আমদানি নিয়ে নতুন অনিশ্চয়তা

বাজারে আরেকটি বড় আলোচ্য বিষয় হলো ভারতের রুশ তেল আমদানির ভবিষ্যৎ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বুধবার তাকে জানিয়েছেন যে ভারত শিগগিরই রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে। বর্তমানে রাশিয়া ভারতের মোট তেল আমদানির এক-তৃতীয়াংশ সরবরাহ করে।
আইজি মার্কেট বিশ্লেষক টনি সাইকামোর বলেন, “ভারতের এই সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক বাজারে রুশ তেলের ক্রেতা কমিয়ে দেবে, যা মূল্যবৃদ্ধির দিকে প্রভাব ফেলতে পারে।”

ভারতের অবস্থান ও রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া

তবে ভারত জানায়, তাদের মূল লক্ষ্য হলো জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখা ও সরবরাহ নিশ্চিত করা। দেশটি ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। অন্যদিকে রাশিয়া আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়েছে, ভারতের সঙ্গে তাদের জ্বালানি সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞা

এদিকে, ব্রিটেন সরকার বুধবার রাশিয়ার দুটি বৃহৎ জ্বালানি কোম্পানি রসনেফট ও লুকঅয়েলের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যা রাশিয়ার বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে অবস্থানকে আরও চাপে ফেলতে পারে।

বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি

মার্কিন-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা এবং সম্ভাব্য তেল সরবরাহের উদ্বৃত্ত আশঙ্কাও বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের অনিশ্চয়তা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মজুত বৃদ্ধি একসঙ্গে তেলের দামের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছে।

#t: তেলবাজার, ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক, রাশিয়া, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনীতি, জ্বালানি সংকট, রসনেফট, লুকঅয়েল, সারাক্ষণ রিপোর্ট