বিশ্বজুড়ে কোম্পানিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই খাতে বিপুল বিনিয়োগ ঘোষণা করছে। তবে এই বিনিয়োগ-উচ্ছ্বাস এখন অনেকের কাছে ডটকম যুগের বুদবুদের স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, চাহিদা কমে গেলে বা বিনিয়োগ প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল না দিলে বাজারে বড় ধস নামতে পারে।
বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়ছে
ব্যাংক অব আমেরিকার এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৫৪ শতাংশ বিনিয়োগকারী মনে করেন বর্তমানে এআই খাত একটি বুদবুদের মধ্যে রয়েছে। অপরদিকে ৩৮ শতাংশ একে অস্বীকার করেছেন। এআই নিয়ে এই বিভক্ত মতই প্রমাণ করছে যে বাজার এখন উচ্ছ্বাস ও আশঙ্কার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে।
ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কবার্তা
অক্টোবরের শুরুতে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড জানিয়েছিল, বিনিয়োগকারীরা যদি এআই খাতের সম্ভাবনা নিয়ে আস্থা হারান, তবে বৈশ্বিক বাজারে বড় ধস নামতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির ফাইন্যান্সিয়াল পলিসি কমিটি বলেছে, “বাজার সংশোধনের ঝুঁকি বেড়ে গেছে” এবং এর অভিঘাত ব্রিটেনের আর্থিক ব্যবস্থায়ও পড়তে পারে।
জিআইসি’র মত—‘প্রাথমিক পর্যায়ে অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস’
সিঙ্গাপুরের সার্বভৌম সম্পদ তহবিল জিআইসি’র প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা ব্রায়ান ইয়ো মনে করেন, “প্রাথমিক পর্যায়ের স্টার্টআপগুলোর মধ্যে এখন অতিরিক্ত হাইপ চলছে। যে কোনো কোম্পানি যদি নামের সঙ্গে এআই যোগ করে, তার মূল্যায়ন বহুগুণে বেড়ে যাচ্ছে—যা সব ক্ষেত্রেই যৌক্তিক নয়।”
জেফ বেজোসের পর্যবেক্ষণ—‘সব পরীক্ষাই এখন অর্থায়ন পাচ্ছে’
অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস বলেছেন, “যখন মানুষ এআই নিয়ে উত্তেজিত হয়, তখন প্রতিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষাই অর্থায়ন পায়। এই উত্তেজনার মধ্যে বিনিয়োগকারীরা ভালো ও খারাপ ধারণার পার্থক্য বুঝতে পারেন না।”
তবে তিনি আরও বলেন, “শিল্পভিত্তিক বুদবুদ সব সময় নেতিবাচক নয়। কিছু প্রতিষ্ঠান টিকে যায়, এবং তাদের উদ্ভাবন শেষ পর্যন্ত সমাজেরই উপকারে আসে।”
গোল্ডম্যান স্যাকসের অর্থনীতিবিদের বিশ্লেষণ
গোল্ডম্যান স্যাকসের অর্থনীতিবিদ জোসেফ ব্রিগস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এআই অবকাঠামোয় যে বিপুল বিনিয়োগ হচ্ছে, তা এখনো টেকসই। তবে তিনি সতর্ক করেছেন, “চূড়ান্ত বিজয়ীরা কারা হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়,” কারণ প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন এবং কম পরিবর্তন-খরচ প্রতিযোগিতাকে আরও অনিশ্চিত করছে।
এবিবি’র প্রধান নির্বাহী—‘বুদবুদ নয়, বরং সীমিত সক্ষমতা’
এবিবি কোম্পানির সিইও মোর্টেন উইরোড বলেন, “আমি মনে করি না এটি বুদবুদ, তবে বাস্তবে আমরা নির্মাণ খাতে সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা দেখছি। এই বিনিয়োগের পরিমাণ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে, যা বাস্তবায়নে বহু বছর সময় লাগবে।”
আইএমএফ-এর প্রধান অর্থনীতিবিদের সতর্কতা
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়ের-অলিভিয়ের গুরিনচাস মনে করেন, “এআই খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ-বিস্ফোরণ হয়তো ডটকম ধসের মতো পতনের মুখে পড়তে পারে, তবে এটি ঋণনির্ভর নয় বলে বড় অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কা কম।” তার মতে, “বাজার সংশোধন ঘটলে ক্ষতি সীমিত থাকবে কিছু বিনিয়োগকারীর মধ্যে।”
ওপেনএআই প্রধান স্যাম অল্টম্যানের মন্তব্য
স্যাম অল্টম্যান স্বীকার করেছেন, “হ্যাঁ, বিনিয়োগকারীরা এখন এআই নিয়ে অতিরিক্ত উত্তেজিত। কেউ কেউ বিপুল পরিমাণ অর্থ হারাবেন, আবার কেউ বিশাল লাভ করবেন। এটাই বাস্তবতা।”
ইউবিএসের পর্যবেক্ষণ—‘বুদবুদের মধ্যেও বিনিয়োগ অব্যাহত’
ইউবিএস ব্যাংকের গবেষণায় দেখা গেছে, যারা মনে করেন এআই খাত বুদবুদে রয়েছে, তাদের প্রায় ৯০ শতাংশ এখনো এই খাতে বিনিয়োগ ধরে রেখেছেন। তাদের যুক্তি—“এখনও বুদবুদের চূড়ান্ত পর্যায় আসেনি।”
বিশ্বের অর্থনীতি ও প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ বিশেষজ্ঞরা একমত নন—এআই কি স্থায়ী বিপ্লব, নাকি শুধু এক অতিমূল্যায়িত প্রবণতা? তবে সবাই এক বিষয়ে একমত: বিনিয়োগের ঢেউয়ের পেছনে যেমন বিপুল সম্ভাবনা, তেমনি ঝুঁকির মেঘও ক্রমে ঘন হচ্ছে।
# কৃত্রিম_বুদ্ধিমত্তা, এআই_বুদবুদ, বিনিয়োগ, অর্থনীতি, প্রযুক্তি, জেফ_বেজোস, আইএমএফ, গোল্ডম্যান_স্যাকস, ওপেনএআই, বাজার_বিশ্লেষণ