আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ। তিনি জানিয়েছেন, পাকিস্তান আর আগের মতো কাবুলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে না এবং দেশটির মাটি থেকে সন্ত্রাস চালানো হলে তার ‘মূল্য চুকাতে হবে’।
সম্পর্ক সংকট ও যুদ্ধবিরতির অবসান
গত শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় দুই দেশের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হয়। যদিও পরবর্তীতে দোহায় প্রতিনিধি দলের বৈঠকের কারণে যুদ্ধবিরতি কিছুটা বাড়ানো হয় বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
আসিফ এক সামাজিক মাধ্যম পোস্টে লেখেন, “পাকিস্তান এখন আর কাবুলের সঙ্গে আগের মতো সম্পর্ক রাখতে সক্ষম নয়।” তিনি আরও বলেন, “যে সব আফগান বর্তমানে পাকিস্তানে অবস্থান করছেন, তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। কাবুলে এখন তাদের নিজস্ব সরকার বা খিলাফত রয়েছে। আমাদের জমি ও সম্পদ পাকিস্তানের ২৫ কোটি মানুষের জন্য।”
‘স্বাভিমানী জাতি অন্যের জমিতে বাঁচে না’
প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “স্বাভিমানী জাতি অন্যের জমি ও সম্পদের ওপর নির্ভর করে, টিকে থাকতে পারে না।” তিনি দাবি করেন, গত পাঁচ বছরে পাকিস্তান কাবুলকে ৮৩৬টি প্রতিবাদপত্র ও ১৩টি আনুষ্ঠানিক বার্তা পাঠিয়েছে, কিন্তু ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।
আসিফ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এখন আর প্রতিবাদ বা শান্তির আবেদন হবে না। কাবুলে আর কোনো প্রতিনিধি দলও পাঠানো হবে না। সন্ত্রাস যেখান থেকেই আসুক না কেন, তাকে এর কঠোর মূল্য দিতে হবে।”
ভারতের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ
খাজা আসিফ অভিযোগ করেন, আফগানিস্তান এখন ভারতের ‘প্রক্সি’ বা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে এবং নয়াদিল্লি ও নিষিদ্ধ তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) একসঙ্গে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
তিনি বলেন, “আজ যারা ভারতের কোলের মধ্যে বসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, তারাই একসময় আমাদের আশ্রয়ে ছিল, আমাদের মাটিতেই লুকিয়ে ছিল।”
যুদ্ধের প্রস্তুতি ও দুই ফ্রন্টে হুমকি
আসিফ আরও বলেন, পাকিস্তান যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষায় প্রস্তুত। সামা টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। কেউ যেন ভুলে না যায়, পাকিস্তানকে এখন দুই দিক থেকে হুমকির মুখোমুখি হতে হচ্ছে, এমনকি অভ্যন্তরীণ ফ্রন্টও তৈরি হতে পারে।”
২০২১ সালে আফগান তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাকিস্তানে ১০ হাজার ৩৪৭টি সন্ত্রাসী হামলায় ৩ হাজার ৮৪৪ জন নিহত হয়েছেন—এর মধ্যে সাধারণ নাগরিক ও নিরাপত্তা সদস্য দুজনই রয়েছেন বলে তিনি জানান।
টিটিপি হামলা ও নতুন উত্তেজনা
আফগান মাটি থেকে টিটিপির হামলার পর দুই দেশের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। খাইবার পাখতুনখোয়ার ওরাকজাই জেলায় সাম্প্রতিক এক হামলায় পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তাসহ ১১ জন নিহত হন।
ক্রিকেট সিরিজ থেকে আফগানিস্তানের সরে দাঁড়ানো
সম্প্রতি পাকিস্তানের বিমান হামলায় তিন আফগান ক্রিকেটার নিহত হওয়ার পর আফগানিস্তান নভেম্বরে রাওয়ালপিন্ডি ও লাহোরে অনুষ্ঠিতব্য ত্রিদেশীয় টি–টোয়েন্টি সিরিজ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়।
আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) এক বিবৃতিতে জানায়, “উরগুন জেলার তিন সাহসী ক্রিকেটার—কবির, সিবগাতুল্লাহ ও হারুনের শাহাদতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। পাকিস্তানি বাহিনীর কাপুরুষোচিত হামলায় তারা শহিদ হয়েছেন।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “এই মর্মান্তিক ঘটনায় শ্রদ্ধা জানিয়ে এসিবি আসন্ন ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
রশিদ খানের প্রতিবাদ
আফগানিস্তানের তারকা ক্রিকেটার রশিদ খান পাকিস্তানের বিমান হামলার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, “নাগরিক অবকাঠামোতে হামলা একেবারেই অনৈতিক ও অমানবিক। এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।”
তিনি আরও বলেন, “নিরপরাধ প্রাণহানির ঘটনায় আমি এসিবির সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছি। আমাদের জাতীয় মর্যাদা সর্বাগ্রে থাকতে হবে।”
#
পাকিস্তান, আফগানিস্তান, খাজা আসিফ, টিটিপি, সীমান্ত সংঘর্ষ, ভারত, দোহা আলোচনা, আফগান ক্রিকেট, রশিদ খান, সারাক্ষণ রিপোর্ট