যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি ভিসার আবেদন ফি ১ লাখ ডলার পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্তে অনেক মার্কিন কোম্পানি বিদেশে ব্যাক-অফিস কার্যক্রম স্থানান্তর করছে। বিশেষ করে ভারত এখন হয়ে উঠছে এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রধান আউটসোর্সিং কেন্দ্র।
কঠিন শর্তে ভিসা আবেদন
ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, দক্ষ বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য ব্যবহৃত এইচ-১বি ভিসার আবেদন ফি ১ লাখ ডলার করা হবে এবং বেতনমানও বাড়ানো হবে। এতে বিদেশি পেশাজীবী নিয়োগে বড় ধরনের বাধা তৈরি হয়েছে।
এই ভিসা সাধারণত প্রযুক্তি, অডিট, হিসাবরক্ষণ ও পরামর্শ খাতে দক্ষ কর্মী নিয়োগে ব্যবহৃত হয়। মার্কিন নাগরিক ও অভিবাসন দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুন ২০২৫ পর্যন্ত অনুমোদিত অধিকাংশ ভিসা গিয়েছে অ্যামাজন, গুগল, ও শীর্ষ পরামর্শ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। দেশভিত্তিক হিসাবে ভারতীয় নাগরিকেরা পেয়েছেন মোট ভিসার প্রায় ৭০ শতাংশ।
এইচএলএস গ্লোবালের দৃষ্টান্ত
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ট্যাক্স ও অডিট প্রতিষ্ঠান ‘এইচএলএস গ্লোবাল’ ইতোমধ্যেই কাজের একটি বড় অংশ স্থানান্তর করেছে ভারত ও জাপানে। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালে ভারতে একটি সহায়ক কোম্পানি গঠন করে, যেখানে বর্তমানে ১০০ জনের মতো কর্মী রয়েছে—এর মধ্যে ২০ জন যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাক্স ও অডিট সংক্রান্ত কাজে যুক্ত।
প্রতিষ্ঠানটির জাপানি শাখাও যুক্তরাষ্ট্রের কাজ বাড়াচ্ছে। টোকিও অফিস ছাড়াও ২০২৬ সালের এপ্রিল নাগাদ মিয়াজাকি প্রদেশে নতুন অফিস খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের সিইও শুনসুকে সাইতো বলেন, “সত্যি বলতে, ১ লাখ ডলারের ফি দিলে ভিসার আবেদন করা খুব কঠিন।” তার মতে, অনেক ক্লায়েন্টই জাপানি কোম্পানি হওয়ায় দ্বিভাষিক (ইংরেজি ও জাপানি) হিসাবরক্ষক নিয়োগ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি বিকল্প হিসেবে ‘জে ভিসা’সহ অন্যান্য ভিসা ব্যবস্থাও বিবেচনা করছে।
অফশোরিং প্রবণতা বাড়ছে
প্রতি বছর এইচ-১বি ভিসার সংখ্যা সীমিত থাকে মাত্র ৮৫,০০০। এত উচ্চ ফি ও কঠোর শর্তের ফলে কোম্পানিগুলো এখন ব্যাক-অফিস কার্যক্রম বিদেশে সরিয়ে নিচ্ছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরামর্শ প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাকসেনচার’ দক্ষিণ ভারতে নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের পরিকল্পনা করছে, যেখানে প্রায় ১২,০০০ নতুন ভারতীয় কর্মী নিয়োগের লক্ষ্য রয়েছে।
আমেরিকান শ্রমবাজারে দ্বন্দ্ব
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, ভিসা সীমাবদ্ধতা যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয় চাকরি বাড়াবে। কিন্তু বাস্তবে, কাজ বিদেশে চলে যাওয়ায় এর উল্টো ফল হতে পারে। প্রশাসন জানিয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠান বিদেশে আউটসোর্সিং করছে, তাদের ওপর নতুন করে ‘সার্ভিস ট্যারিফ’ আরোপের পরিকল্পনা রয়েছে।
বিদেশি দক্ষতার ঘাটতি ও বিনিয়োগের প্রভাব
দক্ষ বিদেশি কর্মী নিয়োগে বাধা যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত, জাপানি কর্মীদের ক্ষেত্রে সমস্যা প্রকট।
২০২৪ সালে মাত্র ২০০ জাপানি নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী নাগরিকত্ব (গ্রিন কার্ড) পেয়েছেন—যা ১৯৯২ সালের সর্বোচ্চ সংখ্যার মাত্র ৩ শতাংশ। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে জাপানি জনগোষ্ঠী দ্রুত বুড়িয়ে যাচ্ছে।
জাপানি উপস্থিতির হ্রাস
২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর থেকে এইচ-১বি ভিসার শর্ত কঠোর হওয়ায় জাপানি নাগরিকদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, বিপরীতে ভারতীয় ও চীনা বংশোদ্ভূত অভিবাসীদের সংখ্যা বেড়েছে।
নিউ ইয়র্কভিত্তিক কর্মী সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ‘ইন্টারেসে ইন্টারন্যাশনাল’-এর প্রেসিডেন্ট মাসাতো ফুজিহারা বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসনের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে জাপানিদের সংখ্যা কমতে শুরু করেছিল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে, যুক্তরাষ্ট্রে জাপানি ব্যবসাগুলোর টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।”
# যুক্তরাষ্ট্র, এইচ-১বি_ভিসা, ভারত, আউটসোর্সিং, ট্রাম্প_প্রশাসন, জাপানি_কর্মী, আন্তর্জাতিক_বিনিয়োগ, মার্কিন_অর্থনীতি