বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের ভিড়ে প্রশাসনিক ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় জাপান সরকার ভিসা আবেদন ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নতুন ফি হার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সমান পর্যায়ে নির্ধারণ করা হবে। সরকারের আশা, এতে একদিকে প্রশাসনিক ব্যয় সামলানো সহজ হবে, অন্যদিকে অতিরিক্ত পর্যটক চাপও কিছুটা কমবে।
ভিসা ফি বাড়ানোর পরিকল্পনা
জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন ফি কাঠামো নির্ধারণে তারা জি—৭ দেশ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) সদস্য দেশগুলোর হার বিবেচনায় নিচ্ছে।
সুনির্দিষ্ট বৃদ্ধি হার এখনো নির্ধারণ হয়নি, তবে এটি আগামী অর্থবছরের শুরুতেই কার্যকর হতে পারে।
বর্তমানে জাপানে একবার প্রবেশের (সিঙ্গেল এন্ট্রি) ভিসার ফি ৩,০০০ ইয়েন (প্রায় ২০ ডলার), আর একাধিকবার প্রবেশের (মাল্টিপল এন্ট্রি) ভিসার ফি ৬,০০০ ইয়েন।
তুলনামূলক বিশ্লেষণ: যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ভিসা ফি
যুক্তরাষ্ট্রে স্বল্পমেয়াদি ভিসার ফি ১৮৫ ডলার, যুক্তরাজ্যে ১৭৭ ডলার এবং কানাডায় ১০০ কানাডিয়ান ডলার (প্রায় ৭১ ডলার)।
ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালি—যারা শেনজেন অঞ্চলের সদস্য—তারা স্বল্পমেয়াদি ভিসার জন্য ৯০ ইউরো (প্রায় ১০৫ ডলার) ফি নেয়।
এই দেশগুলো নিয়মিত ফি সমন্বয় করে থাকে মুদ্রাস্ফীতি ও বিনিময় হার পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, এবং অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে। কিন্তু জাপান ১৯৭৮ সালের পর থেকে ভিসা ফি বাড়ায়নি।
পর্যটক সংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব
২০২৫ সালের প্রথমার্ধে জাপান ২ কোটি ১৫ লাখ আন্তর্জাতিক পর্যটক গ্রহণ করেছে—যা এক বছরের ব্যবধানে ১৭.৮ মিলিয়ন থেকে বড় ধরনের বৃদ্ধি।
এই প্রথম কোনো বছরের প্রথম ছয় মাসেই পর্যটকের সংখ্যা ২ কোটির বেশি হলো।
পর্যটক সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দিতে হচ্ছে, ফলে প্রশাসনিক ব্যয়ও বেড়েছে।
এ কারণেই সরকার ফি সংগ্রহের পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনতে চায়—আবেদনের সময়ই অর্থগ্রহণের ব্যবস্থা করতে চায় সরকার, যেমনটা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে প্রচলিত। এতে অপ্রয়োজনীয় আবেদন কমবে এবং প্রক্রিয়া সহজ হবে।
ফি বৃদ্ধির সম্ভাব্য প্রভাব
সরকারের মতে, ভিসা ফি বাড়ালেও জাপানে পর্যটক আসার প্রবণতা তেমন কমবে না। বরং এটি ‘ওভারট্যুরিজম’ বা অতিরিক্ত পর্যটনের চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
বর্তমানে ১২০টির বেশি দেশের নাগরিকদের জন্য জাপান স্বল্পমেয়াদি ভিসা বাধ্যতামূলক করেছে, যার মধ্যে রয়েছে চীন, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন।
২০২৪ সালে চীনের নাগরিকদের কাছে ৫২.৪ লাখ ভিসা ইস্যু করা হয়েছে—যা মোট ভিসার ৭০ শতাংশ।
দ্বিতীয় স্থানে ফিলিপাইন (৫.৭ লাখ) এবং তৃতীয় স্থানে ভিয়েতনাম (৩.২ লাখ)।
এই তিন দেশ মিলে মোট ভিসার প্রায় ৯০ শতাংশ।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সহ ৭৪টি দেশ ও অঞ্চল নির্দিষ্ট শর্তে স্বল্পমেয়াদি ভিসা ছাড় সুবিধা ভোগ করে।
কর ও রাজস্ব নীতিতে নতুন প্রস্তাব
শাসক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির কিছু সদস্য মনে করছেন, বিদেশি পর্যটকদের ওপর কর বাড়ানো রাজস্ব বৃদ্ধির একটি কার্যকর উপায় হতে পারে—যাতে দেশীয় করদাতাদের ওপর বাড়তি বোঝা না পড়ে।
গত মে মাসে এলডিপি’র কয়েকজন আইনপ্রণেতা প্রস্তাব করেন, আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য বিদ্যমান ভ্যাট (ভোগকর) ছাড় বাতিল করা এবং প্রস্থানের সময় আরোপিত পর্যটন লেভি বাড়ানো উচিত।
তাদের মতে, বর্তমান ব্যবস্থায় অনেক বিদেশি পর্যটক ডিউটি–ফ্রি দোকান থেকে ইলেকট্রনিক্স, প্রসাধনী ও ওষুধপত্র বাল্ক আকারে কিনে পরে তা বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করছেন—যা “পর্যটননির্ভর অর্থনীতির মূল লক্ষ্য নয়।”
পর্যটন কর থেকে রাজস্ব বৃদ্ধি
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পর্যটন কর থেকে ৪৮.১ বিলিয়ন ইয়েন আয় হয়েছে—যা আগের বছরের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি।
সরকার মনে করছে, ভিসা ফি ও পর্যটন কর থেকে বাড়তি রাজস্ব একদিকে প্রশাসনিক ব্যয় সামলাতে সাহায্য করবে, অন্যদিকে টেকসই পর্যটন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে।
#জাপান, ভিসা_ফি, পর্যটন, অর্থনীতি, ওভারট্যুরিজম, জাপান_সরকার, ভ্রমণনীতি, সারাক্ষণ_রিপোর্ট