০৪:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
ট্রাম্পের ‘কিং ট্রাম্প’ এআই ভিডিওতে সমালোচনার ঝড় রুশ গ্যাস প্ল্যান্টে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা, বড় অগ্নিকাণ্ড এআই ডেটা সেন্টারের বিদ্যুৎ এখন ‘নিজস্ব প্ল্যান্টে ডিএমজে পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় উত্তর কোরীয় সেনার পলায়ন তরুণদের মধ্যে ক্যান্সারের বৃদ্ধি: কারণ ও প্রভাব বিমানবন্দর অগ্নিকাণ্ডে রপ্তানিকারকদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ তৎপরতা যশোর এখন বাংলাদেশের শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র ওমানের দুর্ঘটনায় নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ চট্টগ্রামে পৌঁছেছে আট মাস পর ভারতে আটক ১২ বাংলাদেশি নাবিকের দেশে ফেরা নারী অধিকার ও শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্নে ইলা মিত্রের শতবর্ষে নওগাঁয় র‌্যালি

ইরানে পুরানো ক্ষত পুনরুজ্জীবিত: মার্কিন ও ইসরাইলি আক্রমণে উদ্বেগের নতুন ঢেউ

তেহরানের বাস্তবতা ও ক্ষতের গভীরতা

ইরানে মার্কিন ও ইসরাইলি আক্রমণের পর এক গভীর উদ্বেগ ও অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। তেহরানের ক্যাফে গডোটের মালিক, হোমায়ুন ঘানি জাদেহ, বলেন, “এটা একটি অস্তিত্ববাদী ট্র্যাজিকোমেডি, যা ইরানিরা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “একটা নাটকীয় ঘটনাবলীতে, ইরানি জনগণ এমন কিছু দেখছে যা তাদের জীবনের বাস্তবতাকেই তুলে ধরছে।”

যুদ্ধের প্রভাব: এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

জুন মাসে ইসরাইলি আক্রমণে নিহত সাঈদ ইযাদি, যিনি হামাস ও হিজবুল্লাহর মতো গোষ্ঠীগুলির প্রতি ইরানের সমর্থন প্রদানের দায়িত্বে ছিলেন, তার স্মরণে একটি অনুষ্ঠান ছিল। কিন্তু সেই ইভেন্টে এসে ইসরাইলি বিমান হামলা শুরু হলে এবং সেখানে উপস্থিত শিল্পীরা আটকে পড়েন। শিল্পকর্মের প্রদর্শনী স্থগিত হয়ে গিয়েছিল এবং অজানা বিপদে আটকে পড়া শিল্পীরা রাত্রিবেলা যুদ্ধের বিস্ফোরণ দেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, যা বাস্তবতা এবং শিল্পের মধ্যে সীমারেখা মুছে ফেলেছিল।

ইরানিরা ও তাদের জীবনযাত্রা: সরকার ও জনগণের মধ্যে বিরোধ

ইরানে একদিকে সরকারি বিধিনিষেধ যেমন হিজাব পরিধান, ইন্টারনেট সেন্সরশিপ এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট কালোবাজারি, অন্যদিকে, যুব সমাজের মধ্যে একটি পৃথক জীবনধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শহরের রাস্তায় তরুণীরা হিজাব ছাড়াই চলাফেরা করছে, ইনস্টাগ্রাম বা টিকটক ব্যবহার করার জন্য তারা ভিপিএন ব্যবহার করছে। যদিও রাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে প্রচ্ছন্নভাবে চাপ রয়েছে, সাধারণ জনগণ তাদের নিজস্ব জীবনযাত্রা চালিয়ে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব: পুরনো শত্রুতা নতুন রূপে

তেহরানের একটি মিউজিয়াম, যা আগে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস, এখন “যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচর দপ্তর” মিউজিয়াম হিসেবে পরিচিত। এখানে ১৯৭৯ সালের হোস্টেজ ক্রাইসিস বা বন্দী সংকটের স্মৃতি সংরক্ষিত রয়েছে। ইরানের জনগণ তাদের ইতিহাসের সেই অংশটিকে নিজেদের মতো করে পুনর্লিখন করেছে। বিশেষ করে, ১৯৫৩ সালে সিআইএ-সমর্থিত অভ্যুত্থান ও তার পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতা ইরানিদের মধ্যে আমেরিকার প্রতি গভীর সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।

সংকটের মধ্যে জীবনযাত্রা: নাগরিক জীবনের যুদ্ধ

তেহরানের এক ট্যাক্সি চালক, সিয়াভাশ নায়েনি, যে এখন ক্যান্সারে আক্রান্ত, তার জীবনের বাস্তবতা দেখায় ইরানি জনগণের সংগ্রামের চিত্র। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও যুদ্ধের কারণে জীবনযাত্রা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় এসকল সঙ্কটের কারণে সাধারণ মানুষ গভীর উদ্বেগ অনুভব করছে এবং তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করছে।

পরিবর্তনের অপেক্ষা: গডোটের মতো অপেক্ষা

তেহরানের ক্যাফে গডোটের মালিক হোমায়ুন ঘানি জাদেহ বলেন, “যেমন নাটকে গডোট আসবে, তেমনি কিছু ইরানিরাও অপেক্ষা করছে, তবে তাদের গডোট একটু ভিন্ন।” ইরানের জনগণ বর্তমানে এক দীর্ঘ অপেক্ষার মধ্যে রয়েছে, যেখানে তারা জানে পরিবর্তন আসছে কিন্তু ঠিক কীভাবে বা কখন তা আসবে, তা জানে না।

 ভবিষ্যতের অপেক্ষা

এভাবে, ইরান এক অনিশ্চিত এবং অস্থির অবস্থায় রয়েছে, যেখানে জনগণ সরকার ও বাইরের শক্তির মধ্যে চাপের মাঝে নিজেদের পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। ইতিহাসের গভীরে ডুবে থাকা এই দেশটি, আজকের সংকটময় মুহূর্তে, এক নতুন দৃষ্টিতে অপেক্ষা করছে, ভবিষ্যৎ কি নিয়ে আসবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ট্রাম্পের ‘কিং ট্রাম্প’ এআই ভিডিওতে সমালোচনার ঝড়

ইরানে পুরানো ক্ষত পুনরুজ্জীবিত: মার্কিন ও ইসরাইলি আক্রমণে উদ্বেগের নতুন ঢেউ

০১:০৮:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

তেহরানের বাস্তবতা ও ক্ষতের গভীরতা

ইরানে মার্কিন ও ইসরাইলি আক্রমণের পর এক গভীর উদ্বেগ ও অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। তেহরানের ক্যাফে গডোটের মালিক, হোমায়ুন ঘানি জাদেহ, বলেন, “এটা একটি অস্তিত্ববাদী ট্র্যাজিকোমেডি, যা ইরানিরা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “একটা নাটকীয় ঘটনাবলীতে, ইরানি জনগণ এমন কিছু দেখছে যা তাদের জীবনের বাস্তবতাকেই তুলে ধরছে।”

যুদ্ধের প্রভাব: এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

জুন মাসে ইসরাইলি আক্রমণে নিহত সাঈদ ইযাদি, যিনি হামাস ও হিজবুল্লাহর মতো গোষ্ঠীগুলির প্রতি ইরানের সমর্থন প্রদানের দায়িত্বে ছিলেন, তার স্মরণে একটি অনুষ্ঠান ছিল। কিন্তু সেই ইভেন্টে এসে ইসরাইলি বিমান হামলা শুরু হলে এবং সেখানে উপস্থিত শিল্পীরা আটকে পড়েন। শিল্পকর্মের প্রদর্শনী স্থগিত হয়ে গিয়েছিল এবং অজানা বিপদে আটকে পড়া শিল্পীরা রাত্রিবেলা যুদ্ধের বিস্ফোরণ দেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, যা বাস্তবতা এবং শিল্পের মধ্যে সীমারেখা মুছে ফেলেছিল।

ইরানিরা ও তাদের জীবনযাত্রা: সরকার ও জনগণের মধ্যে বিরোধ

ইরানে একদিকে সরকারি বিধিনিষেধ যেমন হিজাব পরিধান, ইন্টারনেট সেন্সরশিপ এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট কালোবাজারি, অন্যদিকে, যুব সমাজের মধ্যে একটি পৃথক জীবনধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শহরের রাস্তায় তরুণীরা হিজাব ছাড়াই চলাফেরা করছে, ইনস্টাগ্রাম বা টিকটক ব্যবহার করার জন্য তারা ভিপিএন ব্যবহার করছে। যদিও রাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে প্রচ্ছন্নভাবে চাপ রয়েছে, সাধারণ জনগণ তাদের নিজস্ব জীবনযাত্রা চালিয়ে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব: পুরনো শত্রুতা নতুন রূপে

তেহরানের একটি মিউজিয়াম, যা আগে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস, এখন “যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচর দপ্তর” মিউজিয়াম হিসেবে পরিচিত। এখানে ১৯৭৯ সালের হোস্টেজ ক্রাইসিস বা বন্দী সংকটের স্মৃতি সংরক্ষিত রয়েছে। ইরানের জনগণ তাদের ইতিহাসের সেই অংশটিকে নিজেদের মতো করে পুনর্লিখন করেছে। বিশেষ করে, ১৯৫৩ সালে সিআইএ-সমর্থিত অভ্যুত্থান ও তার পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতা ইরানিদের মধ্যে আমেরিকার প্রতি গভীর সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।

সংকটের মধ্যে জীবনযাত্রা: নাগরিক জীবনের যুদ্ধ

তেহরানের এক ট্যাক্সি চালক, সিয়াভাশ নায়েনি, যে এখন ক্যান্সারে আক্রান্ত, তার জীবনের বাস্তবতা দেখায় ইরানি জনগণের সংগ্রামের চিত্র। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও যুদ্ধের কারণে জীবনযাত্রা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় এসকল সঙ্কটের কারণে সাধারণ মানুষ গভীর উদ্বেগ অনুভব করছে এবং তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করছে।

পরিবর্তনের অপেক্ষা: গডোটের মতো অপেক্ষা

তেহরানের ক্যাফে গডোটের মালিক হোমায়ুন ঘানি জাদেহ বলেন, “যেমন নাটকে গডোট আসবে, তেমনি কিছু ইরানিরাও অপেক্ষা করছে, তবে তাদের গডোট একটু ভিন্ন।” ইরানের জনগণ বর্তমানে এক দীর্ঘ অপেক্ষার মধ্যে রয়েছে, যেখানে তারা জানে পরিবর্তন আসছে কিন্তু ঠিক কীভাবে বা কখন তা আসবে, তা জানে না।

 ভবিষ্যতের অপেক্ষা

এভাবে, ইরান এক অনিশ্চিত এবং অস্থির অবস্থায় রয়েছে, যেখানে জনগণ সরকার ও বাইরের শক্তির মধ্যে চাপের মাঝে নিজেদের পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। ইতিহাসের গভীরে ডুবে থাকা এই দেশটি, আজকের সংকটময় মুহূর্তে, এক নতুন দৃষ্টিতে অপেক্ষা করছে, ভবিষ্যৎ কি নিয়ে আসবে।