জে টেলরের মৃত্যু
২০২২ সালের জানুয়ারিতে, ১৩ বছর বয়সী জে টেলরের মৃতদেহ একটি পার্কিং লটে উদ্ধার হয়, যেখানে তাকে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করতে দেখা যায়। প্রথমে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও, কিছুদিন পর একটি ভিডিও সামনে আসে, যেখানে দেখা যায়, জে-এর আত্মহত্যা লাইভস্ট্রিম করা হয়েছিল ইনস্টাগ্রামে। ভিডিওতে তাকে আত্মহত্যার জন্য প্ররোচিত করা হয় এবং তাকে দেহ অর্ধনগ্ন থাকতে বলা হয়। পুলিশ তদন্ত শুরু করলে তারা জানতে পারে যে এটি একটি আন্তর্জাতিক শিকারি গোষ্ঠীর কাজ, যারা শিশুদের শিকার করে তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়।
FBI-র তদন্ত
জে-এর মৃত্যুর পর FBI এই তদন্তে নামায়, যেখানে তারা বুঝতে পারে, এই ধরনের শিকারি গোষ্ঠীগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে শিশুদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। এই গোষ্ঠীগুলি শুধুমাত্র অশ্লীল ছবি বা ভিডিও শেয়ার করাতে বাধ্য করে না, বরং তাদের মানসিকভাবে শোষণ করেও আত্মহত্যায় বাধ্য করে। তদন্তে দেখা যায় যে, শিকারীরা বিভিন্ন অনলাইন ফোরামে শিশুদের টার্গেট করে এবং তাদের মন ম্যানিপুলেটিভভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। FBI জানায়, বর্তমানে তারা ৩০০ জনকে তদন্ত করছে যারা এই ধরনের কার্যক্রমে জড়িত।
‘হোয়াইট টাইগার’ এর খোঁজ
যারা জে-এর মৃত্যুতে জড়িত ছিল, তাদের মধ্যে এক সদস্যকে ‘হোয়াইট টাইগার’ নামে চিহ্নিত করা হয়, যিনি মূলত জার্মানির এক মেডিকেল ছাত্র শাহরিয়ার নামে পরিচিত। এই ব্যক্তি একাধিক শিশু এবং কিশোরীকে শিকার করে এবং তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। FBI এবং জার্মান পুলিশ তাদের অভিযান চালিয়ে শাহরিয়ারকে গ্রেফতার করে এবং তার বাসায় একাধিক নির্যাতনমূলক ভিডিও এবং ছবি পাওয়া যায়।
অনলাইন শিকারীদের পদ্ধতি
এই ধরনের গোষ্ঠী তাদের সদস্যদের শিকার করার জন্য বিভিন্ন ভয়ংকর পদ্ধতি অবলম্বন করে। তারা সাধারণত শিশুদের এবং মানসিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিদের টার্গেট করে, তাদের ভালবাসা এবং দয়ার ভান করে, পরে তাদের শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করে। এক্ষেত্রে, তারা তাদের শিকারদের অনলাইনে হত্যা বা আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত করে, যাতে তারা নিজেদের জন্য একটি ভয়ংকর শিকার হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারে।
তদন্তের অগ্রগতি
শাহরিয়ারকে গ্রেফতার করার পর, তার ওপর একাধিক মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে শিশু নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে ১২৩টি অভিযোগ রয়েছে এবং এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, তার অপরাধ শুধুমাত্র শিশুদের ওপর শারীরিক নির্যাতন নয়, বরং তাদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে ধ্বংস করা। তদন্তকারীরা জানান, শিকারদের মধ্যে একটি নর্ডিক দেশের ১২ বছরের একটি মেয়ে ছিল, যার মাধ্যমে জে টেলরকে প্রথম শিকার হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
শিকারীদের বিচারের পথে
শাহরিয়ারকে জার্মানির আদালত আগামী দিনে বিচারের মুখোমুখি করতে চলেছে, যেখানে তার অপরাধের পরিমাণ এবং শিকারদের ওপর তার প্রভাব ব্যাপকভাবে বিশ্লেষিত হবে।
জে টেলরের পরিবারের লড়াই
জে টেলরের বাবা-মা এই ঘটনাটি জানার পর তাদের জীবনে একটি বড় শূন্যতা তৈরি হয়। তারা সরকারের কাছে অনুরোধ করছেন, যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইন পাস করা হয়। তারা এই ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ‘জে-র আইন’ প্রণয়ন করতে চান।