দোহায় অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে রক্তক্ষয়ী সীমান্তযুদ্ধের পর পাকিস্তান ও আফগানিস্তান তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের নেতৃত্বে হওয়া এই আলোচনা ছিল ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষের পর শান্তির প্রথম বড় পদক্ষেপ।
দোহা আলোচনায় যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত
রবিবার (১৯ অক্টোবর) পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ এক্স (সাবেক টুইটার) এ জানান, “যুদ্ধবিরতি চূড়ান্ত হয়েছে।” তিনি আরও জানান: বিস্তারিত আলোচনার জন্য আগামী ২৫ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পুনরায় বৈঠক হবে।
তালেবান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদও এক বিবৃতিতে বলেন, দুই পক্ষই পূর্ণাঙ্গ ও অর্থবহ যুদ্ধবিরতিতে একমত হয়েছে। কাতার ও তুরস্ক এই আলোচনায় মধ্যস্থতা করে এবং কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, পরবর্তী বৈঠকগুলো যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব ও বাস্তবায়ন যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
সংঘর্ষের পটভূমি
গত সপ্তাহে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে তীব্র সীমান্তযুদ্ধের ঘটনায় বহু নিহত ও শতাধিক আহত হয়। ২,৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিতর্কিত সীমান্তে স্থলযুদ্ধের পাশাপাশি পাকিস্তান আফগান ভূখণ্ডে বিমান হামলাও চালায়। ইসলামাবাদ অভিযোগ করে, আফগান ভূখণ্ডে অবস্থানরত জঙ্গিরা পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে, এবং কাবুল সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে।
অন্যদিকে তালেবান সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলে, পাকিস্তান তাদের বিরুদ্ধে “ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে” এবং আফগানিস্তানের অস্থিতিশীলতা বাড়াতে ইসলামিক স্টেট-ঘনিষ্ঠ জঙ্গিদের আশ্রয় দিচ্ছে। ইসলামাবাদও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সাম্প্রতিক হামলা ও হতাহতের ঘটনা
শুক্রবার সীমান্তের কাছে আত্মঘাতী হামলায় সাত পাকিস্তানি সেনা নিহত ও ১৩ জন আহত হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির বলেন, “আফগান ভূখণ্ডে অবস্থানরত প্রক্সি গ্রুপগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, যারা পাকিস্তানের ভেতরে ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে।”
তবে তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ জানান, আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় যে, “দুই দেশ পরস্পরের বিরুদ্ধে কোনো শত্রুভাবাপন্ন পদক্ষেপ নেবে না এবং পাকিস্তানবিরোধী কোনো গোষ্ঠীকে সমর্থন দেবে না।” তিনি আরও যোগ করেন, এটি আফগান সরকারের দীর্ঘদিনের নীতিরই প্রতিফলন—“আফগান মাটি অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।”
যুদ্ধবিরতির পরও বিমান হামলার অভিযোগ
তালেবান মুখপাত্র অভিযোগ করেন, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও পাকিস্তান আফগান ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালিয়েছে, যা বেসামরিক লোকদের প্রাণহানি ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, “কাবুল প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করছে, তবে আলোচনা দলের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আফগান যোদ্ধাদের আপাতত সংযমের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সেনারা “নিশ্চিত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে” সীমান্তবর্তী এলাকায় জঙ্গি ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছে এবং কোনো বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু ছিল না।
তিনি দাবি করেন, যুদ্ধবিরতির সময়ও জঙ্গিরা পাকিস্তানের ভেতরে একাধিক হামলার চেষ্টা করেছে। এসব অভিযানে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী শতাধিক জঙ্গিকে হত্যা করেছে, যাদের অধিকাংশই ওই আত্মঘাতী হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে দাবি করা হয়।
ক্রীড়া সম্পর্কেও টানাপোড়েন
এদিকে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড জানায়, পাকতিকা প্রদেশে বিমান হামলায় তিন স্থানীয় ক্রিকেটারের মৃত্যুর ঘটনায় দেশটি আগামী মাসে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া টিটোয়েন্টি ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।
ভবিষ্যৎ আলোচনার দিকনির্দেশনা
২৫ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে পরবর্তী বৈঠকে যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন ও সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে দুই পক্ষ জানিয়েছে। কাতার ও তুরস্কের কূটনৈতিক মধ্যস্থতায় এই প্রক্রিয়াকে ভবিষ্যৎ স্থায়ী শান্তির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আফগানিস্তান_পাকিস্তান_শান্তিচুক্তি, #দোহা_আলোচনা, #যুদ্ধবিরতি, #সীমান্ত_সংঘর্ষ, #তালেবান, #ইসলামাবাদ, #কাতার_তুরস্ক_মধ্যস্থতা, #সন্ত্রাসবাদ, #দক্ষিণ_এশিয়া_নিরাপত্তা, #সারাক্ষণ_রিপোর্ট