থাইল্যান্ডে স্থানীয় প্রতিবেশ–ব্যবস্থায় হুমকি তৈরি করা অনুপ্রবেশকারী মাছ ‘ব্ল্যাকচিন তেলাপিয়া’ দমন অভিযানে বড় সাফল্য অর্জন করেছে সরকার। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭,৩০০ টন মাছ অপসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কৃষি ও সমবায়মন্ত্রী ক্যাপ্টেন থামানাত প্রমপাও।
মাছ অপসারণ ও প্রাদেশিক অগ্রগতি
ক্যাপ্টেন থামানাত জানান, মৎস্য অধিদপ্তরের নেতৃত্বে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে পরিচালিত এই অভিযানে সাতটি ধাপে পরিকল্পিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো স্থানীয় চাষিদের ক্ষতি কমানো ও মাছটির দ্রুত বিস্তার রোধ করা।
এরই মধ্যে প্রাচিনবুরি ও ফাত্থালুং প্রদেশ সম্পূর্ণভাবে এই প্রজাতি মুক্ত হয়েছে। ফলে আক্রান্ত প্রদেশের সংখ্যা ১৯ থেকে কমে ১৭-তে দাঁড়িয়েছে।
এই ১৭টির মধ্যে ৯টি প্রদেশ এখন নিম্ন-ঘনত্ব এলাকায় পরিণত হয়েছে (প্রতি ১০০ বর্গমিটারে ১০টিরও কম মাছ)। এসব প্রদেশ হলো— চাচোয়েংসাও, ননথাবুরি, ব্যাংকক, সামুত সংখ্রাম, নাখন পাঠোম, রাতচাবুরি, ফেচাবুরি, সুরাত থানি এবং সংখলা।
অন্যদিকে ৮টি প্রদেশে মাঝারি মাত্রায় মাছটির উপস্থিতি পাওয়া গেছে— চান্তাবুরি, চনবুরি, রায়ং, সামুত প্রাকান, সামুত সাখন, প্রাচুয়াপ খিরি খান, চুমফন এবং নাখন সি থাম্মারাত।
পরিবেশ পুনরুদ্ধার উদ্যোগ
প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে মৎস্য অধিদপ্তর স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের উপযোগী ১১ লক্ষাধিক শিকারি মাছ পানিতে ছেড়ে দিয়েছে, যা অবশিষ্ট ব্ল্যাকচিন তেলাপিয়া নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করছে।
একইসঙ্গে রাবার অথরিটি অব থাইল্যান্ড ও ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের সহযোগিতায় ধ্বংস করা মাছগুলোকে মূল্যবান সম্পদে রূপান্তর করা হয়েছে। প্রায় ৫,০০০ টন মাছ প্রক্রিয়াজাত করে রাবার চাষের জন্য জৈব গাঁজানো পানি তৈরি করা হয়েছে এবং আরও ২,০০০ টনের বেশি মাছ পশুখাদ্যের জন্য ফিশমিলে রূপান্তর করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মোট ৩ কোটি ৪০ লাখ বাথের বেশি অর্থমূল্য সৃষ্টি হয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদি নজরদারি পরিকল্পনা
মৎস্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক থিতিপর্ন লাওপ্রাসারেত জানিয়েছেন, ‘ব্ল্যাকচিন তেলাপিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মপরিকল্পনা’র অধীনে ধারাবাহিক নজরদারি চালানো হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ প্রজাতি আবারও বিস্তার লাভ না করতে পারে।
অর্থবছর ২০২৫–এ মৎস্য অধিদপ্তর ৭ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি জলজ প্রাণী অবমুক্ত করার লক্ষ্য নিয়েছে, যা দেশের জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে।
দীর্ঘদিন ধরে থাইল্যান্ডের স্থানীয় জলাশয়ে আক্রমণাত্মক প্রজাতি হিসেবে ‘ব্ল্যাকচিন তেলাপিয়া’ বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সরকার ও স্থানীয় চাষিদের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এই অভিযানে এখন দেশের অধিকাংশ অঞ্চল মুক্ত হচ্ছে, যা পরিবেশ ও কৃষি–অর্থনীতির জন্য আশাব্যঞ্জক সংকেত।
#ব্ল্যাকচিন_তেলাপিয়া, #থাইল্যান্ড, #মৎস্য_অভিযান, #পরিবেশ_সংরক্ষণ, #জীববৈচিত্র্য, #মাছ_চাষ, #সারাক্ষণ_রিপোর্ট