মিরপুরের রূপনগর এলাকায় পোশাক কারখানা ও কেমিক্যাল গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৬ জনের মরদেহ ঘটনাটির পাঁচ দিন পর তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
রবিবার রাত ১০টা ১৫ মিনিট থেকে শুরু হয়ে সোমবার ভোররাত ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত এই হস্তান্তর কার্যক্রম চলে বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহতদের মরদেহ ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ডিএমসি) হাসপাতালের মর্গের হিমঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছিল।
ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তকরণ
রূপনগর থানার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মখলেছুর রহমান জানান, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-এর ফরেনসিক ইউনিট ১৬ জন নিহতের ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল সরবরাহ করে।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ডিএনএ মিল নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের ডাকা হয় এবং ডিএমসি মর্গে মরদেহগুলো হস্তান্তর করা হয়।
আর্থিক সহায়তা
প্রতিটি শোকাহত পরিবারকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাফন কার্যক্রমের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়। এই অর্থ ঢাকার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিতরণ করেন তেজগাঁও ডেভেলপমেন্ট সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন।
শনাক্ত নিহতদের তালিকা
ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত ১৬ জন নিহত হলেন—
মাহিরা আক্তার (১৪), মৃত ওমর ফারুকের মেয়ে, বরগুনার বামনা উপজেলা;
নার্গিস আক্তার (১৮), ওয়াজি উল্লাহর মেয়ে, ভোলার লালমোহন উপজেলার দালিগনগর;
মো. সানোয়ার হোসেন (২৫), মিজানুর রহমানের ছেলে, নালিতাবাড়ী, শেরপুর;
নূরে আলম সরকার (২৩), আমিনুল ইসলামের ছেলে, ভবানীপুর, গাইবান্ধা সদর;
আল মামুন (৩৮), মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে, দরীকাটা গ্রাম, আমতলী, বরগুনা;
রবিউল ইসলাম রবিন (২০), নাজু মিয়ার ছেলে, তিলকনগর, বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া;
ফারজানা আক্তার (১৫), রতন মিয়ার মেয়ে, গোল্লা রাজাপুর, ধর্মপাশা, সুনামগঞ্জ;
খালিদ হাসান সাব্বির (২৯), মনিরুল ইসলামের ছেলে, ইসলামপুর, বরগুনা সদর;
আবদুল আলিম (১৪), নূর ইসলামের ছেলে, কৃষ্ণপুর, সিংড়া, নাটোর;
জয় মিয়া (২০), সবুজ মিয়ার ছেলে, নুরুল্লা গ্রাম, বারহাট্টা, নেত্রকোনা;
আসমা আক্তার (১৩), নয়ন মিয়ার মেয়ে, দক্ষিণখালি, মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা;
মুনা আক্তার সামিয়া (১৬), সোনু মিয়ার মেয়ে, কদমশ্রী, মদন, নেত্রকোনা;
মৌসুমি খাতুন (২২), আবদুল মান্নানের মেয়ে, পশ্চিম নাওদাবাস, হাতিবান্ধা, লালমনিরহাট;
মুক্তা বেগম (৩৬), মুশা দেওয়ানের মেয়ে, সুরেশ্বর, নড়িয়া, শরীয়তপুর;
তৌফায়েল আহমেদ (১৮), জজ মিয়ার ছেলে, জয়পুর, মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা;
এবং নাজমুল ইসলাম রিয়াজ (৪০), পাঁতি গ্রাম, কুমারখালী, কুষ্টিয়া।
তদন্ত ও প্রেক্ষাপট
ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ১৫ অক্টোবর ছয়টি ও ১৬ অক্টোবর আরও দশটি মরদেহের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন শনাক্তকরণের উদ্দেশ্যে।
১৪ অক্টোবর রূপনগর শিল্প এলাকায় ওই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বহু তলা বিশিষ্ট পোশাক কারখানা ও কেমিক্যাল গুদাম ভবন সম্পূর্ণ পুড়ে যায়, যাতে ১৬ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় এবং আরও অনেকে আহত হন।
১৬ অক্টোবর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (এফএসসিডি) এ ঘটনায় তদন্তের জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।
উপসংহার
মিরপুরের এই অগ্নিকাণ্ড আবারও কারখানার নিরাপত্তা, দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণ ও শিল্পাঞ্চল ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। নিহতদের পরিবারের হাতে মরদেহ হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে এক দুঃসহ অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটলেও, ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জোরালো হয়ে উঠছে।