সিঙ্গাপুরীয় তরুণ লেখক ওয়েন–ই লি তাঁর নতুন ঐতিহাসিক ফ্যান্টাসি উপন্যাস When They Burned The Butterfly–এ তুলে এনেছেন ১৯৫০ ও ৬০–এর দশকের এক সম্পূর্ণ নারী–নেতৃত্বাধীন গোপন সমাজ “রেড বাটারফ্লাই গ্যাং”-এর গল্প। ২১ অক্টোবর প্রকাশিতব্য এই বইয়ে নারী শক্তি, ঐতিহাসিক পরিবর্তন, ধর্মীয় রূপান্তর এবং আত্ম–আবিষ্কারের বিষয়গুলো একত্রিত হয়েছে কল্পনার জগতে।
রেড বাটারফ্লাই গ্যাং: বাস্তব ইতিহাসে অনুপ্রেরণা
‘রেড বাটারফ্লাই গ্যাং’-এর সদস্যদের উরুতে লাল প্রজাপতির উল্কি থাকত এবং হাতে থাকত অ্যাসিড বোমা। তারা যৌনকর্মীদের সুরক্ষা দিত ও প্রতারণাকারী স্বামীদের বিরুদ্ধে নারীদের পক্ষ নিয়ে প্রতিশোধের কাজ করত। ওয়েন–ই লি, যিনি তখনও জন্মাননি, টিকটকে দেখা এক ঐতিহাসিক ভিডিও থেকে অনুপ্রেরণা পান এই গ্যাংয়ের গল্প লেখার। শুরুতে তিনি সামসুই নারীদের নিয়ে লেখার কথা ভেবেছিলেন, কিন্তু ইতিহাসের এই “নৈতিকভাবে ‘ধূসর’” নারীরাই তাঁকে বেশি টেনেছিল।
নারীর দৃষ্টিভঙ্গিতে গোপন সমাজের পুনর্লিখন
ওয়েন–ই লি বলেন, “চীনা গোপন সমাজের প্রচলিত ধারণা সবসময় পুরুষ–প্রধান—ভ্রাতৃত্ব, ক্ষমতা ও আনুগত্যের উপর ভিত্তি করে। কিন্তু পুরোপুরি নারী গ্যাংয়ের ধারণা একেবারেই আলাদা।” তাঁর এই উপন্যাসটি নিউ ইয়র্কভিত্তিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান Tor Books, ছয় অঙ্কের মূল্যে প্রকাশ করছে। বইটি ২১ অক্টোবর থেকে সিঙ্গাপুরের বইয়ের দোকানে পাওয়া যাবে।
১৯৭২-এর সিঙ্গাপুর: আধুনিকায়ন, আগুন ও রহস্য
উপন্যাসের পটভূমি ১৯৭২ সাল–যখন চায়নাটাউনে People’s Park Complex গড়ে উঠছে এবং সরকার Crocodile ও Three Steel গ্যাংয়ের মতো গোপন সমাজের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালাচ্ছে। এমন সময় নির্জন স্কুলছাত্রী অ্যাডেলিন সিয়াওয়ের মা খুন হন, এবং অ্যাডেলিন জড়িয়ে পড়ে রেড বাটারফ্লাই গ্যাংয়ের জগতে। ধীরে ধীরে সে আবিষ্কার করে, তার মধ্যেই রয়েছে এক আগুনের শক্তি—যা তার মায়ের কাছ থেকেই উত্তরাধিকারসূত্রে এসেছে।
ধর্মীয় জাগরণ ও সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব
লি উল্লেখ করেন, ১৯৭২ সাল সিঙ্গাপুরে খ্রিস্টান পুনর্জাগরণের সময়ও ছিল, যখন মেথডিস্ট স্কুলের বহু শিক্ষার্থী ধর্মান্তরিত হন। এই প্রেক্ষাপটে ইংরেজি শিক্ষিত অ্যাডেলিন বুঝতে পারে তার হক্কিনভাষী মা আসলে এক গোপন জাদুকরী সমাজের পৃষ্ঠপোষক। লেখিকা বলেন, “আমি ভাষা, ধর্ম, জীবনধারা ও প্রজন্মগত ব্যবধানের বিষয়টি গভীরভাবে অনুসন্ধান করেছি—কারণ সিঙ্গাপুর এত দ্রুত বদলে গেছে যে প্রতিটি প্রজন্ম সম্পূর্ণ আলাদা অভিজ্ঞতা নিয়ে বড় হয়।”
ইতিহাস, আর্কাইভ ও মৌখিক স্মৃতির সংযোগ
লি সিঙ্গাপুরের National Library Board–এর ডিজিটাল আর্কাইভের প্রশংসা করেছেন। তাঁর মতে, বইটির সবচেয়ে মূল্যবান অংশ এসেছে ব্লগ, অনলাইন ফোরাম ও সেই সময়কার সংবাদপত্র থেকে সংগৃহীত বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে।
নারীর চোখে আত্ম–আবিষ্কারের গল্প
এই উপন্যাসটি এক নারীর আত্ম–আবিষ্কারের কাহিনি, যা পুরুষ–কেন্দ্রিক সাহিত্যধারার প্রতি এক প্রতিক্রিয়া। লি বলেন, “নারী দৃষ্টিকোণ থেকে গল্প বললে জীবনের কঠিন দিক, আত্মত্যাগ ও টিকে থাকার সংগ্রামগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।”
আগুনের প্রতীক: ধ্বংস থেকে পুনর্জন্ম
নায়িকার ‘ফায়ার পাওয়ার’ মূলত আধুনিক সিঙ্গাপুরের ইতিহাসে আগুনের প্রতীক। ১৯৬১ সালের Bukit Ho Swee অগ্নিকাণ্ডকে তিনি কাহিনিতে রেড বাটারফ্লাই গ্যাংয়ের কাজ হিসেবে দেখিয়েছেন, আর ১৯৭২ সালের Robinsons স্টোরের আগুনও এতে যুক্ত হয়েছে। লি বলেন, “এটি শুধুই চরিত্রের পরিণতি নয়, বরং সিঙ্গাপুরের আত্মগঠনের গল্প।”
পশ্চিমা বনাম স্থানীয় পাঠকদৃষ্টি
লি মনে করেন, পশ্চিমা পাঠকের কাছে এটি urban fantasy মনে হতে পারে, কিন্তু সিঙ্গাপুরীয় বাস্তবতায় এটি খুবই প্রাসঙ্গিক ও বাস্তবসম্মত। তাঁর আগের উপন্যাস The Dark We Know (২০২৪) আমেরিকান লেখক গিলিয়ান ফ্লিনের প্রশংসা পেয়েছিল।
দ্বিতীয় পর্ব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ওয়েন–ই লি বর্তমানে এই সিরিজের দ্বিতীয় বই সম্পাদনা করছেন, যা ২০২৭ সালে প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, “প্রথম বই ধ্বংস নিয়ে, দ্বিতীয়টি পুনর্গঠন নিয়ে–মৃত্যু, পুনর্জন্ম ও হারানো জিনিসগুলোর ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়েই এর গল্প।”
প্রকাশনা ও লঞ্চ ইভেন্ট
When They Burned The Butterfly (মূল্য: ৩৪.৯৫ ডলার) বইটি ২১ অক্টোবর থেকে সব বড় বইয়ের দোকানে পাওয়া যাবে। লেখক ওয়েন–ই লিকে সরাসরি দেখা যাবে ১ নভেম্বর বিকেল ২টায় সিঙ্গাপুরের Book Bar–এ আয়োজিত লঞ্চ অনুষ্ঠানে।
# সিঙ্গাপুর_সাহিত্য,# নারী_লেখক, #ঐতিহাসিক_#ফ্যান্টাসি,# ওয়েনই_লি, রেড_#বাটারফ্লাই_গ্যাং,# সিঙ্গাপুর_#ইতিহাস, #বই_প্রকাশ, #সারাক্ষণ_রিপোর্ট