০৮:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
জলবায়ু নীতিতে উল্টো স্রোত: ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সবুজ ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় খালেদা জিয়ার মৃত্যু ও একই দিনে বহিষ্কার: রুমিন ফারহানার মন্তব্য ৪৭২ দিন অন্ধকার বাঙ্কারে জীবন: ইউক্রেনের সৈনিক সংকটের নীরব দলিল খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে তারেক রহমানকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও ফিল্ড মার্শালের শোকবার্তা হস্তান্তর করলেন স্পিকার রূপা ও প্লাটিনামের দামে ঝড়, দুই ধাতুর উল্লম্ফনে নতুন বছরে বিনিয়োগকারীদের বড় দোটানা ইয়েমেনে সন্ত্রাসবিরোধী মিশন শেষ করলো সংযুক্ত আরব আমিরাত, নিরাপত্তার প্রশ্নে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বিদেশি অতিথিদের সৌজন্য সাক্ষাৎ, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ভারতের শিল্প উৎপাদনে দুই বছরের সর্বোচ্চ উত্থান নভেম্বরেই ঘুরে দাঁড়াল অর্থনীতির চাকা অস্ট্রেলিয়ায় সোনার দামে আগুন, ভিক্টোরিয়ায় নতুন প্রজন্মের স্বর্ণখোঁজাদের ঢল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জোয়ারে নতুন কোটিপতিরা, সিলিকন ভ্যালির ক্ষমতার মানচিত্র বদলাচ্ছে

এশিয়াকে বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা কমানোর আহ্বান আইএমএফের—মার্কিন শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় আঞ্চলিক সংহতির পরামর্শ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক আর্থিক অস্থিরতা থেকে বাঁচতে এশিয়ার দেশগুলোকে আঞ্চলিক বাণিজ্য আরও জোরদার করতে হবে এবং অশুল্ক বাধা কমাতে হবে।

বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে এশিয়া

চীনের নেতৃত্বে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে এশিয়া বিশ্বের উৎপাদন ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক এবং চলমান মার্কিন-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা এ অঞ্চলের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে।

আইএমএফের এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় বলা হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য friction বৃদ্ধি এশিয়ার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যকে বাড়িয়েছে।

আঞ্চলিক বাণিজ্য সংহতির প্রয়োজন

আইএমএফের মতে, বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা কমিয়ে এবং আঞ্চলিক সংহতি জোরদার করে এশিয়ার দেশগুলো তাদের রপ্তানি বাজার বৈচিত্র্য আনতে পারবে, খরচ কমাতে পারবে এবং মার্কিন শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব কিছুটা লাঘব করতে পারবে।

আইএমএফের সঙ্গে পাকিস্তানের ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি । Daily Star Bangla |  undefined

আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক কৃষ্ণ শ্রীনিবাসন বলেন, “এশিয়া যদি নিজের মধ্যে আরও সংহত হয়, তবে সেটাই বহিরাগত ধাক্কার বিরুদ্ধে এক ধরনের সুরক্ষা তৈরি করবে।”

তার মতে, বর্তমানে এশিয়ার মোট রপ্তানির প্রায় ৬০ শতাংশই অঞ্চলের ভেতরে পণ্য উপাদান (intermediate goods) হিসেবে বিনিময় হয়, কিন্তু চূড়ান্ত পণ্যের মাত্র ৩০ শতাংশ এই অঞ্চলের ভেতরে থাকে। এতে বোঝা যায়, এখনো মার্কিন ও ইউরোপীয় বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা প্রবল।

দ্বিপাক্ষিক নয়, বহুপাক্ষিক চুক্তির গুরুত্ব

আইএমএফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বিস্তৃত বাণিজ্য চুক্তি এশিয়ার জন্য লাভজনক হতে পারে। কারণ দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলোর কারণে নীতিগত জটিলতা ও মানদণ্ডের অসামঞ্জস্যতা তৈরি হয়।

কোভিড-১৯ মহামারির সময় যেসব অশুল্ক বাধা বেড়ে গিয়েছিল, সেগুলো এখনো বহাল রয়েছে। এসব বাধা কমাতে পারলে বড় অর্থনৈতিক সুফল মিলবে বলে আইএমএফের ধারণা।

ইতিবাচক প্রবণতা

শ্রীনিবাসন বলেন, “কিছু দেশ ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার অংশ হিসেবে স্বেচ্ছায় এসব অশুল্ক বাধা কমাচ্ছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক ইঙ্গিত।”

No surprise that India's economy growing faster than China, says IMF APAC Director  Krishna Srinivasan | Mint

আইএমএফের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আঞ্চলিক বাণিজ্য সংহতি বাড়লে এশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) মাঝারি মেয়াদে ১.৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে, আর আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধি হতে পারে ৪ শতাংশ পর্যন্ত।

প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস

আইএমএফ ২০২৫ সালে এশিয়ার প্রবৃদ্ধি ৪.৫ শতাংশ হবে বলে ধারণা দিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় সামান্য কম হলেও এপ্রিলের পূর্বাভাসের তুলনায় ০.৬ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।

তবে ২০২৬ সালে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে ৪.১ শতাংশে নেমে আসবে বলে সংস্থাটি জানায়। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বাণিজ্য উত্তেজনা, চীনে দুর্বল চাহিদা এবং উদীয়মান অর্থনীতিতে ভোক্তা ব্যয়ের ধীরগতি।

ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

বাগে আসছে না বাণিজ্য ঘাটতি

আইএমএফ সতর্ক করে বলেছে, বাণিজ্য নীতির অনিশ্চয়তা কিছুটা কমলেও তা এখনো উচ্চমাত্রায় রয়েছে, যা বিনিয়োগ ও বাজার আস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

আইএমএফের বার্তা স্পষ্ট—এশিয়ার দেশগুলো যদি অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সংহতি বাড়ায়, তবে তারা মার্কিন শুল্ক ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধাক্কা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাণিজ্য উদারীকরণই হতে পারে অঞ্চলের টেকসই প্রবৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি।

#আইএমএফ #এশিয়া_বাণিজ্য #যুক্তরাষ্ট্র_শুল্ক #চীন #আঞ্চলিক_সংহতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

জলবায়ু নীতিতে উল্টো স্রোত: ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সবুজ ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায়

এশিয়াকে বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা কমানোর আহ্বান আইএমএফের—মার্কিন শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় আঞ্চলিক সংহতির পরামর্শ

০৪:১২:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধি ও বৈশ্বিক আর্থিক অস্থিরতা থেকে বাঁচতে এশিয়ার দেশগুলোকে আঞ্চলিক বাণিজ্য আরও জোরদার করতে হবে এবং অশুল্ক বাধা কমাতে হবে।

বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে এশিয়া

চীনের নেতৃত্বে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে এশিয়া বিশ্বের উৎপাদন ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক এবং চলমান মার্কিন-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা এ অঞ্চলের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে।

আইএমএফের এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় বলা হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য friction বৃদ্ধি এশিয়ার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যকে বাড়িয়েছে।

আঞ্চলিক বাণিজ্য সংহতির প্রয়োজন

আইএমএফের মতে, বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা কমিয়ে এবং আঞ্চলিক সংহতি জোরদার করে এশিয়ার দেশগুলো তাদের রপ্তানি বাজার বৈচিত্র্য আনতে পারবে, খরচ কমাতে পারবে এবং মার্কিন শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব কিছুটা লাঘব করতে পারবে।

আইএমএফের সঙ্গে পাকিস্তানের ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি । Daily Star Bangla |  undefined

আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক কৃষ্ণ শ্রীনিবাসন বলেন, “এশিয়া যদি নিজের মধ্যে আরও সংহত হয়, তবে সেটাই বহিরাগত ধাক্কার বিরুদ্ধে এক ধরনের সুরক্ষা তৈরি করবে।”

তার মতে, বর্তমানে এশিয়ার মোট রপ্তানির প্রায় ৬০ শতাংশই অঞ্চলের ভেতরে পণ্য উপাদান (intermediate goods) হিসেবে বিনিময় হয়, কিন্তু চূড়ান্ত পণ্যের মাত্র ৩০ শতাংশ এই অঞ্চলের ভেতরে থাকে। এতে বোঝা যায়, এখনো মার্কিন ও ইউরোপীয় বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা প্রবল।

দ্বিপাক্ষিক নয়, বহুপাক্ষিক চুক্তির গুরুত্ব

আইএমএফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো বিস্তৃত বাণিজ্য চুক্তি এশিয়ার জন্য লাভজনক হতে পারে। কারণ দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলোর কারণে নীতিগত জটিলতা ও মানদণ্ডের অসামঞ্জস্যতা তৈরি হয়।

কোভিড-১৯ মহামারির সময় যেসব অশুল্ক বাধা বেড়ে গিয়েছিল, সেগুলো এখনো বহাল রয়েছে। এসব বাধা কমাতে পারলে বড় অর্থনৈতিক সুফল মিলবে বলে আইএমএফের ধারণা।

ইতিবাচক প্রবণতা

শ্রীনিবাসন বলেন, “কিছু দেশ ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার অংশ হিসেবে স্বেচ্ছায় এসব অশুল্ক বাধা কমাচ্ছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক ইঙ্গিত।”

No surprise that India's economy growing faster than China, says IMF APAC Director  Krishna Srinivasan | Mint

আইএমএফের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আঞ্চলিক বাণিজ্য সংহতি বাড়লে এশিয়ার মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) মাঝারি মেয়াদে ১.৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে, আর আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধি হতে পারে ৪ শতাংশ পর্যন্ত।

প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস

আইএমএফ ২০২৫ সালে এশিয়ার প্রবৃদ্ধি ৪.৫ শতাংশ হবে বলে ধারণা দিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় সামান্য কম হলেও এপ্রিলের পূর্বাভাসের তুলনায় ০.৬ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।

তবে ২০২৬ সালে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে ৪.১ শতাংশে নেমে আসবে বলে সংস্থাটি জানায়। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বাণিজ্য উত্তেজনা, চীনে দুর্বল চাহিদা এবং উদীয়মান অর্থনীতিতে ভোক্তা ব্যয়ের ধীরগতি।

ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

বাগে আসছে না বাণিজ্য ঘাটতি

আইএমএফ সতর্ক করে বলেছে, বাণিজ্য নীতির অনিশ্চয়তা কিছুটা কমলেও তা এখনো উচ্চমাত্রায় রয়েছে, যা বিনিয়োগ ও বাজার আস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

আইএমএফের বার্তা স্পষ্ট—এশিয়ার দেশগুলো যদি অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সংহতি বাড়ায়, তবে তারা মার্কিন শুল্ক ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধাক্কা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাণিজ্য উদারীকরণই হতে পারে অঞ্চলের টেকসই প্রবৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি।

#আইএমএফ #এশিয়া_বাণিজ্য #যুক্তরাষ্ট্র_শুল্ক #চীন #আঞ্চলিক_সংহতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট