ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে একজন সৈনিকের জন্য কয়েক সপ্তাহের মোতায়েনই যেখানে স্বাভাবিক, সেখানে টানা চার শত বাহাত্তর দিন অন্ধকার ও স্যাঁতসেঁতে বাঙ্কারে কাটানো এক মানবিক সীমা ছোঁয়া অভিজ্ঞতা। ইউক্রেনীয় সেনা সার্জেন্ট সেরহিই তিশচেনকোর এই দীর্ঘ সময়ের যুদ্ধজীবন এখন দেশটির সৈনিক সংকট, মানসিক চাপ এবং ড্রোননির্ভর যুদ্ধ বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।
প্রথমে ভেবেছিলেন এক মাস
কিয়েভের উপকণ্ঠে নিজের বাড়িতে বসে তিশচেনকো বলছেন, তিনি ভেবেছিলেন এই মোতায়েন হয়তো এক মাস বা সর্বোচ্চ দুই মাসের। বাস্তবে সেটি গড়িয়েছে এক বছরেরও বেশি। পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলে একটি ছোট বাঙ্কারে দিনের আলো না দেখে, তাজা বাতাস ছাড়া, টানা গোলাবর্ষণ আর ড্রোনের নজরদারির মধ্যে থাকতে হয়েছে তাকে ও তার সহযোদ্ধাদের।
অন্ধকার বাঙ্কারের জীবন
মাটির নিচের বাঙ্কারটি ছিল নিচু ও স্যাঁতসেঁতে। শোয়ার জন্য কোনো গদি ছিল না, ভরসা ছিল জলরোধী স্লিপিং ব্যাগ। শুরুতে আশপাশের অবস্থান থেকে খাবার ও যোগাযোগের সুযোগ মিললেও পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হয়। হামলায় সহযোদ্ধারা নিহত হন, কিন্তু বদলি আসে না। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, ফেরার দিন অনিশ্চিত।

ড্রোনের দাপট ও মানসিক চাপ
ড্রোনের কারণে দিনের বেলা বের হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। একটি ছোট জানালাও ঢেকে দিতে হয়, যাতে আলো বের হয়ে অবস্থান ফাঁস না হয়। সময় গুনতে হতো মোবাইলের ঘড়ি দেখে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এত দীর্ঘ মোতায়েন সৈনিকদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে এবং মনোবল ভেঙে দেয়।
বাড়ি ফেরা ও স্বীকৃতি
দীর্ঘ অপেক্ষার পর এক রাতে দৌড়ে নিরাপদ অবস্থানে পৌঁছান তিশচেনকো। তখন হাঁটার শক্তিও প্রায় ছিল না। বাড়ি ফিরে পরিবারকে কাছে পেয়ে তিনি বলেন, এই অভিজ্ঞতা স্বাভাবিক নয়। পরে রাষ্ট্রীয় সম্মানে তাকে ইউক্রেনের বীর খেতাব দেওয়া হয়। তবে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ড্রোননির্ভর এই যুদ্ধে মানুষকে কি শুধু গর্তে বসিয়ে রাখা যায়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















