১১:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
প্রথমবারের মতো ডাইনোসরের পায়ে খুর দেখা গেল পেনএআইয়ের ‘অ্যাটলাস’ ব্রাউজার: গুগল ক্রোমের আধিপত্যে নতুন চ্যালেঞ্জ দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ঋণ পরিশোধে অপমান সইতে না পেরে প্রাণ দিলেন মনির লালমনিরহাটে অবৈধভাবে বিক্রির জন্য মজুত ৪১৬ বস্তা সার জব্দ জমি নিয়ে সালিশে মারধর—হাতুড়ির আঘাতে প্রাণ গেল স্থানীয় মাতব্বরের স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা, স্বামী পলাতক ধ্বসের কিনারে কেন শেয়ারবাজারের লেনদেন ও সূচক দুইই! লিবিয়া থেকে দেশে ফিরলেন ৩০৯ বাংলাদেশি— আরো ফেরানোর উদ্যোগ সাগর-রুনি হত্যা তদন্তে টাস্কফোর্সকে শেষবারের মতো ৬ মাস সময় দিল হাইকোর্ট

দক্ষিণ কোরিয়ার থ্রিলার ‘নো আদার চয়েস’—এক চাকরিচ্যুত মানুষের মরিয়া সংগ্রামে প্রতিশোধ

দক্ষিণ কোরিয়ার খ্যাতনামা অভিনেতা লেই বিয়ং-হুন নতুন থ্রিলার নো আদার চয়েস-এ এক চাকরিচ্যুত মানুষের ভূমিকায় এমন এক গভীরতা ও তীব্রতা এনেছেন, যা ব্রেকিং ব্যাড–এর ওয়াল্টার হোয়াইটকেও ম্লান করে দেয়। পার্ক চান-উকের পরিচালনায় নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি কর্পোরেট নিষ্ঠুরতা ও পুরুষের অহংকারকে কেন্দ্র করে এক কালো কৌতুকনির্ভর, মনস্তাত্ত্বিক সামাজিক সমালোচনা।

গল্পসংক্ষেপ

মান-সু (লেই বিয়ং-হুন) ২৫ বছর ধরে এক কাগজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। সুখী পরিবার, সুন্দর বাড়ি—সবকিছু ঠিকই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ খরচ কমানোর অজুহাতে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

স্ত্রী মি-রি (সন ইয়েজিন) তাকে মানসিক ও বাস্তব সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করলেও, নিজের আত্মসম্মান হারানো মান-সু দ্রুত মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং সমাজে নিজের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের জন্য এক রক্তাক্ত পরিকল্পনা করে ফেলে।

কর্পোরেট যন্ত্রের ভেতরে বন্দি মানুষ

পার্ক চান-উকের চলচ্চিত্রটি মার্কিন লেখক ডোনাল্ড ই. ওয়েস্টলেকের উপন্যাস দ্য অ্যাক্স–এর প্রেক্ষাপট থেকে অনুপ্রাণিত। তবে তিনি গল্পটিকে কোরিয়ান বাস্তবতায় এনে আরও অন্ধকার ও তীক্ষ্ণ করে তুলেছেন।

এখানে “নো আদার চয়েস” বা “আর কোনো বিকল্প নেই” কেবল চলচ্চিত্রের নাম নয়—এটি মান-সুর মানসিক বন্দিত্বের প্রতীক। সে কর্পোরেট মেশিনের বাইরে নিজের অস্তিত্ব কল্পনাই করতে পারে না।

পুরুষত্ব, ক্ষমতা ও সহিংসতার রূপক

চলচ্চিত্রে পুরুষের অহংকার ও সামাজিক অবস্থানের সঙ্গে তার আত্মপরিচয়ের সম্পর্ক গভীরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যখন মান-সু তার পদমর্যাদা হারায়, সে কেবল চাকরি নয়—নিজের পরিচয়ও হারায়। সেই শূন্যতা পূরণ করতে সে সহিংসতাকে আশ্রয় নেয়, যেন শক্তি ও পুরুষত্ব পুনরুদ্ধারের পথ এটাই।

পরিচালক পার্ক সুচারুভাবে হাস্যরস, ট্র্যাজেডি ও ভয়ঙ্কর সহিংসতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করেছেন, ঠিক যেমন তিনি ওল্ডবয় (২০০৩) বা ডিসিশন টু লিভ (২০২২)-এ করেছিলেন।

লেই বিয়ং-হুনের অসাধারণ অভিনয়

লেই বিয়ং-হুনের অভিনয়ই এই ছবির প্রাণ। স্কুইড গেম ও কংক্রিট ইউটোপিয়া–এর অভিজ্ঞ এই অভিনেতা এখানে এক বিভ্রান্ত, হতাশ কিন্তু মানবিক চরিত্রের জটিল আবেগগুলো নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি এমন এক প্রজন্মের প্রতীক, যারা প্রযুক্তি-নির্ভর যুগে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে, কিন্তু পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত নয়।

নো আদার চয়েস কেবল এক চাকরিচ্যুত ব্যক্তির গল্প নয়; এটি সমাজব্যবস্থার এক নৃশংস প্রতিফলন, যেখানে মানুষকে ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়। চলচ্চিত্রটি দেখায়, কর্পোরেট জগতে মর্যাদা হারানো মানে নিজের মানবিকতা হারানো। আর সেই মানবিকতা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত আত্মবিনাশে গিয়ে ঠেকে।

এই নির্মম কিন্তু ব্যঙ্গাত্মক থ্রিলারটি পুরুষের আত্মমর্যাদা ও কর্পোরেট নিষ্ঠুরতার সংঘর্ষে তৈরি এক আবেগঘন, চিন্তাশীল চলচ্চিত্র। পার্ক চান-উকের নিখুঁত পরিচালনা ও লেই বিয়ং-হুনের অসাধারণ অভিনয় এটিকে কোরিয়ান সিনেমার সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনস্তাত্ত্বিক সামাজিক ব্যঙ্গচিত্রে পরিণত করেছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রথমবারের মতো ডাইনোসরের পায়ে খুর দেখা গেল

দক্ষিণ কোরিয়ার থ্রিলার ‘নো আদার চয়েস’—এক চাকরিচ্যুত মানুষের মরিয়া সংগ্রামে প্রতিশোধ

০৭:৩২:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

দক্ষিণ কোরিয়ার খ্যাতনামা অভিনেতা লেই বিয়ং-হুন নতুন থ্রিলার নো আদার চয়েস-এ এক চাকরিচ্যুত মানুষের ভূমিকায় এমন এক গভীরতা ও তীব্রতা এনেছেন, যা ব্রেকিং ব্যাড–এর ওয়াল্টার হোয়াইটকেও ম্লান করে দেয়। পার্ক চান-উকের পরিচালনায় নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি কর্পোরেট নিষ্ঠুরতা ও পুরুষের অহংকারকে কেন্দ্র করে এক কালো কৌতুকনির্ভর, মনস্তাত্ত্বিক সামাজিক সমালোচনা।

গল্পসংক্ষেপ

মান-সু (লেই বিয়ং-হুন) ২৫ বছর ধরে এক কাগজ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। সুখী পরিবার, সুন্দর বাড়ি—সবকিছু ঠিকই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ খরচ কমানোর অজুহাতে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

স্ত্রী মি-রি (সন ইয়েজিন) তাকে মানসিক ও বাস্তব সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করলেও, নিজের আত্মসম্মান হারানো মান-সু দ্রুত মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং সমাজে নিজের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের জন্য এক রক্তাক্ত পরিকল্পনা করে ফেলে।

কর্পোরেট যন্ত্রের ভেতরে বন্দি মানুষ

পার্ক চান-উকের চলচ্চিত্রটি মার্কিন লেখক ডোনাল্ড ই. ওয়েস্টলেকের উপন্যাস দ্য অ্যাক্স–এর প্রেক্ষাপট থেকে অনুপ্রাণিত। তবে তিনি গল্পটিকে কোরিয়ান বাস্তবতায় এনে আরও অন্ধকার ও তীক্ষ্ণ করে তুলেছেন।

এখানে “নো আদার চয়েস” বা “আর কোনো বিকল্প নেই” কেবল চলচ্চিত্রের নাম নয়—এটি মান-সুর মানসিক বন্দিত্বের প্রতীক। সে কর্পোরেট মেশিনের বাইরে নিজের অস্তিত্ব কল্পনাই করতে পারে না।

পুরুষত্ব, ক্ষমতা ও সহিংসতার রূপক

চলচ্চিত্রে পুরুষের অহংকার ও সামাজিক অবস্থানের সঙ্গে তার আত্মপরিচয়ের সম্পর্ক গভীরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যখন মান-সু তার পদমর্যাদা হারায়, সে কেবল চাকরি নয়—নিজের পরিচয়ও হারায়। সেই শূন্যতা পূরণ করতে সে সহিংসতাকে আশ্রয় নেয়, যেন শক্তি ও পুরুষত্ব পুনরুদ্ধারের পথ এটাই।

পরিচালক পার্ক সুচারুভাবে হাস্যরস, ট্র্যাজেডি ও ভয়ঙ্কর সহিংসতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করেছেন, ঠিক যেমন তিনি ওল্ডবয় (২০০৩) বা ডিসিশন টু লিভ (২০২২)-এ করেছিলেন।

লেই বিয়ং-হুনের অসাধারণ অভিনয়

লেই বিয়ং-হুনের অভিনয়ই এই ছবির প্রাণ। স্কুইড গেম ও কংক্রিট ইউটোপিয়া–এর অভিজ্ঞ এই অভিনেতা এখানে এক বিভ্রান্ত, হতাশ কিন্তু মানবিক চরিত্রের জটিল আবেগগুলো নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি এমন এক প্রজন্মের প্রতীক, যারা প্রযুক্তি-নির্ভর যুগে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে, কিন্তু পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত নয়।

নো আদার চয়েস কেবল এক চাকরিচ্যুত ব্যক্তির গল্প নয়; এটি সমাজব্যবস্থার এক নৃশংস প্রতিফলন, যেখানে মানুষকে ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়। চলচ্চিত্রটি দেখায়, কর্পোরেট জগতে মর্যাদা হারানো মানে নিজের মানবিকতা হারানো। আর সেই মানবিকতা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত আত্মবিনাশে গিয়ে ঠেকে।

এই নির্মম কিন্তু ব্যঙ্গাত্মক থ্রিলারটি পুরুষের আত্মমর্যাদা ও কর্পোরেট নিষ্ঠুরতার সংঘর্ষে তৈরি এক আবেগঘন, চিন্তাশীল চলচ্চিত্র। পার্ক চান-উকের নিখুঁত পরিচালনা ও লেই বিয়ং-হুনের অসাধারণ অভিনয় এটিকে কোরিয়ান সিনেমার সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনস্তাত্ত্বিক সামাজিক ব্যঙ্গচিত্রে পরিণত করেছে।