বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে পুনর্গঠন ও সংস্কার কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও কার্যকর করতে বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার ‘ব্যাংক রেজুলিউশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫’-এর অধীনে নতুন ‘ব্যাংক রেজুলিউশন বিধিমালা ২০২৫’ জারি করেছে। এই বিধিমালা সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ, পুনর্গঠন ও পরিচালনা কাঠামোকে স্পষ্ট, বাস্তবসম্মত এবং ফলপ্রসূ করার উদ্দেশ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে।
সংস্কারের উদ্দেশ্য ও বাস্তবায়ন কাঠামো
বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড অনুমোদিত এই বিধিমালা মূলত অর্ডিন্যান্সের কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য বিস্তারিত নির্দেশনা নির্ধারণ করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, প্রয়োজনে এই বিধিমালার পরিপূরক হিসেবে অতিরিক্ত গাইডলাইনও জারি করা হবে।
বিধিমালার উদ্দেশ্য হলো—পুনর্গঠন প্রক্রিয়া যেন দ্রুত, সুশৃঙ্খল ও আইনি কাঠামোর মধ্যে সম্পন্ন হয় তা নিশ্চিত করা।
রেজুলিউশন কর্তৃপক্ষ ও ইসলামি ব্যাংকের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
এই বিধিমালা অনুসারে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক রেজুলিউশন বিভাগ (বিআরডি) পুনর্গঠন কার্যক্রমের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করবে।
ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে বিআরডি প্রয়োজনে শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি প্যানেল গঠন করতে পারবে এবং শরিয়াহ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে পারবে, যাতে ইসলামি নীতিমালা অনুযায়ী পুনর্গঠন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
প্রতিটি ব্যাংকে সমন্বয় ইউনিট গঠন
প্রতিটি নির্ধারিত ব্যাংককে একটি রেজুলিউশন কোঅর্ডিনেশন ইউনিট (আরসিইউ) গঠন করতে হবে, যা পুনর্গঠন কার্যক্রমের দৈনন্দিন কাজ পরিচালনা করবে।
এই ইউনিটের প্রধান হবেন একজন ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা।
বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোকে বিআরডি কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে, যদি না বিআরডি নিজেই তথ্য প্রকাশের অনুমতি দেয়।
প্রশাসক নিয়োগ ও তার দায়িত্ব
যদি বিআরডি সরাসরি ব্যাংক পরিচালনা না করে, তবে অর্ডিন্যান্সের ১৬(১)(কা) ও ২০(১) ধারা অনুযায়ী একজন প্রশাসক নিয়োগ করা হবে।
ইসলামি ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রশাসককে শরিয়াহ জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে অথবা শরিয়াহ বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সহযোগিতা নিতে হবে।
প্রশাসক ব্যাংকের সব আর্থিক ও কৌশলগত সিদ্ধান্তে সর্বশেষ কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং বিআরডি-এর তত্ত্বাবধানে নিয়মিত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
তিনি ব্যাংকের সব সম্পদ ও দায়-দেনার তালিকা প্রস্তুত করে বিআরডি-তে জমা দেবেন এবং বিআরডি-এর অনুমোদনে একজন স্বতন্ত্র অডিটর নিয়োগ করবেন, যিনি ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা যাচাই করে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেবেন।
পাঁচ ইসলামি ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া
অস্থায়ী সরকারের নির্দেশে প্রণীত ‘ব্যাংক রেজুলিউশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫’ মূলত সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক, বিশেষ করে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণের লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে।
বর্তমানে এক্সিম ব্যাংক, সাউথইস্ট ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক—এই পাঁচটি ব্যাংক একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে ব্যাংক রেজুলিউশন বিভাগ (বিআরডি) প্রতিষ্ঠা করেছে এবং একীভূত ব্যাংকগুলোর জন্য প্রশাসকও নিয়োগ দিয়েছে।
এই পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি প্রায় ৩৫,০০০ কোটি টাকা, যা পূরণের জন্য সরকার ও উন্নয়ন অংশীদারদের যৌথভাবে অর্থায়নের সম্ভাবনা রয়েছে।
সম্ভাব্য ফলাফল: নতুন রাষ্ট্রীয় ইসলামি ব্যাংক
এই একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
প্রস্তাবিত ব্যাংকের নাম ‘ইউনাইটেড ইসলামি ব্যাংক’, যা ইসলামী ব্যাংকিং খাতে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন বিধিমালা ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও টেকসই পুনর্গঠন নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশেষ করে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণে এটি একটি কাঠামোবদ্ধ ও আইনসম্মত ভিত্তি প্রদান করেছে, যা ভবিষ্যতে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও আস্থা পুনরুদ্ধারে বড় ভূমিকা রাখবে।
#বাংলাদেশব্যাংক #ব্যাংকরেজুলিউশন২০২৫ #ইসলামিব্যাংক #অর্থনীতি #সংস্কার #একীভূতকরণ #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 




















