রুপির ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার
সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত ভারতীয় প্রবাসীরা সাম্প্রতিক সময়ে রুপির দরবৃদ্ধির দিকে নজর রাখছেন। অক্টোবর মাসে ডলারের বিপরীতে রুপি ৮৮.৮৭ থেকে কমে ৮৭.৮০ তে এসেছে, যা জুনের পর থেকে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি উত্থান। বৃহস্পতিবার রুপি প্রতি আমিরাতি দিরহাম ২৩.৯২ এ লেনদেন হয়, যেখানে ৯ অক্টোবর তা ছিল ২৪.২০।
রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দেওয়ার পর রুপির এই উত্থান আরও এগোতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা
অক্টোবর মাসে রুপির মান প্রায় ০.২৮ শতাংশ বেড়ে প্রতি ডলারে ৮৮.০৬ রুপিতে দাঁড়ায়। আরবিআই একাধিকবার ডলার বিক্রি করে জল্পনাকৃত অবস্থান কমাতে এবং বাজার স্থিতিশীল রাখতে পদক্ষেপ নিয়েছে।
অক্টোবরে রুপি ৮৭.৯৫ থেকে ৮৮.৮১ রুপির মধ্যে ওঠানামা করেছে, যা এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থান। তবুও, বছরের হিসেবে রুপি এখনো ৪.৭২ শতাংশ নিচে।

আরবিআইয়ের সক্রিয় ভূমিকা রুপির পতন কিছুটা রোধ করলেও দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব সীমিত রয়ে গেছে। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক, কড়াকড়ি অভিবাসন নীতি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের টানা বিক্রি রুপির ওপর চাপ বাড়িয়েছে।
রুপির ওপর চাপের কারণ
১. বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রত্যাহার: বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতীয় বাজার থেকে অর্থ তুলে নিচ্ছে।
২. স্বর্ণমূল্য বৃদ্ধি: স্বর্ণ আমদানির বিল বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বাড়ছে।
৩. রিয়েল ইফেকটিভ এক্সচেঞ্জ রেট (REER) পতন: রুপির প্রকৃত মান কমে যাওয়ায় তা বাণিজ্য অংশীদারদের তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়ছে।
৪. যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি: বাড়তি ভিসা সীমাবদ্ধতা ও শুল্ক আরোপ ভারতীয় রপ্তানির জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফলে, অক্টোবর মাসে আরবিআই ১৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ নেট স্বল্পমেয়াদি ডলার যোগ করেছে রিজার্ভে এবং ১.৬২ ট্রিলিয়ন রুপি সরবরাহ করেছে বাজারে তারল্য বজায় রাখতে।
ইতিবাচক দিক: ক্যারি ট্রেড সম্ভাবনা
সেঞ্চুরি ফিন্যান্সিয়ালের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা বিজয় ভালেচা বলেন, “আরবিআই ডলার-রুপি সোয়াপের মাধ্যমে বাজারে রুপি তরলতা বাড়াচ্ছে। নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যচুক্তি হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে এবং রুপির জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।”
ভারতের রেপো রেট ৫.৫০ শতাংশে থাকায়, এমনকি যদি চতুর্থ প্রান্তিকে ০.২৫ শতাংশ কমানো হয়, তবুও তা এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় উচ্চ থাকবে। এ কারণে ভারতের ক্যারি ট্রেড বা সুদের পার্থক্যজনিত বিনিয়োগ এখন আকর্ষণীয় অবস্থায় রয়েছে।
রুপির ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত রুপি অস্থির থাকবে এবং ৮৬.০০ থেকে ৯০.০০ রুপির মধ্যে ওঠানামা করতে পারে।
- ট্রেডিং ইকোনমিকস অনুযায়ী, বছর শেষে রুপি ৮৭.৭৫ তে স্থিত হতে পারে এবং আগামী ১২ মাসে তা ৮৬.৭৮ পর্যন্ত শক্তিশালী হতে পারে।
- অন্যদিকে, লংফোরকাস্ট ও ট্রেডার্স ইউনিয়ন এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ডলারের শক্তি, ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি এবং ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি রুপিকে আবার দুর্বল করতে পারে।
প্রধান কারণগুলো:
- যুক্তরাষ্ট্রের বন্ড ফলন ও সীমিত ফেড রেট কমানোর কারণে ডলার শক্তিশালী থাকছে।
- ভারতের জ্বালানি আমদানি নির্ভরতা বাড়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বিস্তৃত হচ্ছে।
- বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি নিতে অনীহা বাড়াচ্ছে।

প্রবাসীদের জন্য রেমিট্যান্স পরামর্শ
বিশ্লেষক ভালেচা বলেন, “অগাস্টের নিম্নস্তর ৮৬.৯২ থেকে সেপ্টেম্বরের সর্বোচ্চ ৮৮.৮৭ পর্যন্ত ট্রেন্ড অনুযায়ী ফিবোনাচ্চি এক্সটেনশন বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে ৮৮.৮৫ ও ৮৯.৬০ স্তরে শক্ত প্রতিরোধ আছে। তাই ডলার-রুপি আরও নিচে নামতে পারে। প্রবাসীরা যদি টাকা পাঠানোর পরিকল্পনা করেন, এখনই সময় হতে পারে।”
রুপির সাম্প্রতিক শক্তিশালী হওয়া ইতিবাচক হলেও সামগ্রিক অর্থনৈতিক চাপে তা স্থায়ী হবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ, বাণিজ্যনীতি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি—সব মিলিয়ে আগামী মাসগুলোতে রুপির দিকনির্দেশ ঠিক করবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















