অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারে নতুন দিকনির্দেশ
চীন ঘোষণা করেছে, আগামী পাঁচ বছরে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধিতে সরকারি বিনিয়োগের অনুপাত বাড়ানো হবে। পাশাপাশি জিডিপির সঙ্গে তুলনায় ঘরোয়া ভোগব্যয়ের হার ‘উল্লেখযোগ্যভাবে’ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কাজ করবে দেশটি। শুক্রবার বেইজিংয়ে সাংবাদিকদের এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারি কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।
এই ঘোষণা আসে বৃহস্পতিবার ২০২৬–২০৩০ মেয়াদে চীনের অর্থনৈতিক ও নীতিগত লক্ষ্যসমূহের নতুন রূপরেখা প্রকাশের পরপরই। ওই রূপরেখায় দেশটির নেতৃত্ব উৎপাদনশীলতা ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রবৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিলেও, ভোগব্যয় বৃদ্ধির দিকেও জোর দেওয়া হয়েছে।
প্রযুক্তিনির্ভর প্রবৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদনে জানানো হয়, আগস্ট মাসে নতুন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, “চীনকে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনে মনোযোগী হতে হবে।” তিনি আরও জানান, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-সম্পর্কিত মানবসম্পদের সমন্বিত বিকাশকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
পরিকল্পনাটিতে শিল্পোন্নয়ন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ওপর বেশি জোর দেওয়া হলেও, নীতিনির্ধারকরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে অভ্যন্তরীণ ভোগ ও বাজারচাহিদা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
প্রধান লক্ষ্য: ভারসাম্যপূর্ণ প্রবৃদ্ধি ও ভোগব্যয় বৃদ্ধি
চীনের কেন্দ্রীয় আর্থিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিশনের উপপরিচালক হান ওয়েনসিউ জানান, আগামী পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রথম লক্ষ্য হবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে “যুক্তিসঙ্গত” সীমার মধ্যে রাখা এবং জিডিপির তুলনায় ঘরোয়া ভোগব্যয়ের অনুপাত “উল্লেখযোগ্যভাবে” বাড়ানো। তবে তিনি নির্দিষ্ট কোনো শতাংশ উল্লেখ করেননি।
বর্তমানে চীনে ঘরোয়া ভোগব্যয় বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ পয়েন্ট কম, যেখানে ঋণনির্ভর বিনিয়োগ বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেশি।
জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের প্রধান ঝেং শানজিয়ে বলেন, “দেশীয় বাজারকে শক্তিশালী করা চীনের আধুনিকায়নের অন্যতম কৌশলগত ভিত্তি। চীনের অভ্যন্তরীণ চাহিদা সম্প্রসারণের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।”
ধীরগতির প্রবৃদ্ধি ও নীতিগত অগ্রাধিকার
চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে গত এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় পৌঁছেছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল থাকায় দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক থাকা সত্ত্বেও রপ্তানি কারখানার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যা দীর্ঘদিনের কাঠামোগত ভারসাম্যহীনতা দূরীকরণে সরকারের সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, চীন আগামী বছর থেকেই ১৫তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সফল সূচনা নিশ্চিত করতে নতুন নীতি, সংস্কার ও প্রকল্প হাতে নেবে এবং দ্রুত বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হবে।
মুদ্রানীতি ও আর্থিক স্থিতিশীলতা
চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, তারা মুদ্রানীতির তীব্রতা, সময় এবং গতি এমনভাবে সামঞ্জস্য করবে যাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল থাকে এবং শেয়ার, বন্ড ও বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের কার্যক্রম সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয়।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির গবেষণা দপ্তরের প্রধান জিয়াং জিনকুয়ান জানান, এ বছর দেশটির মোট জিডিপি ১৪০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ১৯.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার) ছাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর মেয়াদে জিডিপি ছিল ১০১.৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান।
নতুন এই পরিকল্পনা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, চীন প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পায়নের পথেই অগ্রসর হতে চায়, তবে একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বাজার ও জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধিকেও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করছে।
#China #Economy #FiveYearPlan #HouseholdConsumption #XiJinping #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 




















