বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “জামায়াত নেতাদের ফাঁসি জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।” তিনি রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
নির্বাচনে অংশগ্রহণে ঐক্যের ডাক
বিএনপির মহাসচিব দেশের সব রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানিয়েছেন, সামান্য মতপার্থক্য ভুলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে। তিনি বলেন, “সব দল একসঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিলে গণতন্ত্রকে আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।”
শনিবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান।
‘নির্বাচন সময়মতোই ফেব্রুয়ারিতে হবে’
ফখরুল আশা প্রকাশ করেন, আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে। তার মতে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনরুদ্ধার সম্ভব।
তিনি বলেন, “২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে যে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছিল, তা একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।”
বিএনপির পক্ষ থেকে তিনি ২০২৪ সালের আন্দোলনে শহীদ হওয়া সব মুক্তিকামী মানুষকে গভীর শ্রদ্ধা জানান।
অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন ঘোষণা
ফখরুল উল্লেখ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যেই জানিয়েছে যে নির্বাচন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরও জানান, জাতীয় জুলাই সনদে (National July Charter) স্বাক্ষর ও রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার মাধ্যমে সংস্কার সংক্রান্ত সব বিষয় ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত করা হয়েছে।
অতীতের দমননীতি ও অভিযোগ
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিবাদী শাসনামলে’ প্রায় ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল, ২০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয় এবং ১ হাজার ৭০০ জনকে গুম করা হয়।
তিনি বলেন, “জামায়াত আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নয়া দিগন্তের মালিক মীর কাসেম আলী এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মতো আলেম-ওলামা ও রাজনৈতিক নেতাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। এটি জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়।”
ফখরুল আরও অভিযোগ করেন, ওই সময়ে সাংবাদিকদের ওপরও ব্যাপক দমননীতি চালানো হয়েছিল।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের গুরুত্ব
তিনি বলেন, “এই দেশের মানুষ এমন একটি বাংলাদেশ চায় যা গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন, যেখানে কোনো বিদেশি শক্তি নয়—দেশের জনগণের ইচ্ছাই হবে শাসনের ভিত্তি।”
ফখরুল স্মরণ করিয়ে দেন, স্বাধীনতার পর ‘বাকশাল’-এর সময়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুরোপুরি দমিত হয়েছিল। “১৯৭৫ সালে ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠার পর সব পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমি মনে করি, তখন অনেক সাংবাদিক বেকার হয়ে পড়েছিলেন, কেউ কেউ এমনকি বায়তুল মোকাররমের সামনে পত্রিকা বিক্রির কাজ করতেন।”
জিয়ার বহুদলীয় রাজনীতি ও সংস্কার
ফখরুল বলেন, ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই প্রথম একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে সরে এসে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন।
তিনি যোগ করেন, “আমরা ভুলে গেলে চলবে না যে দেশের মূল সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল জিয়াউর রহমানের সময়েই, যা পরবর্তীতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এগিয়ে নিয়েছিলেন।”
বিএনপি মহাসচিবের মতে, বর্তমান সময়ে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সব রাজনৈতিক দলের ঐক্য অপরিহার্য। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য একটি মুক্ত, স্বচ্ছ ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা—যেখানে মানুষের ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্রের মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকবে।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















