ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি এখন উৎপাদন খাত, যার অবদান ৫৬ শতাংশ। অপরদিকে, পরিষেবা খাতের অবদান ৪৪ শতাংশ। নতুন এই বিশ্লেষণ রাজধানীর অর্থনৈতিক কাঠামো ও প্রবৃদ্ধির ধরণ সম্পর্কে নতুন ধারণা দিয়েছে।
উৎপাদন খাত ঢাকার অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার অর্থনীতিতে উৎপাদন খাতের অবদান ৫৬ শতাংশ, যেখানে পরিষেবা খাতের অবদান ৪৪ শতাংশ। শনিবার ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এক ‘ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন’-এ এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
সভায় উপস্থাপিত হয় সংস্থার ‘ইকোনমিক পজিশন ইনডেক্স (EPI)’—একটি তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণী টুল, যা দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তাৎক্ষণিক ধারণা দেয় এবং নীতি প্রণয়নে সহায়তা করে।
জরিপ পদ্ধতি ও খাতভিত্তিক বিশ্লেষণ
ডিসিসিআই-এর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব একেএম আসাদুজ্জামান পাটোয়ারী মূল প্রবন্ধে জানান, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে ৬৫৪ জন উত্তরদাতাকে নিয়ে এই গবেষণা পরিচালিত হয়। এর মধ্যে ৩৬৫ জন ছিলেন উৎপাদন খাত থেকে এবং ২৮৯ জন পরিষেবা খাত থেকে।
উৎপাদন খাতের জরিপে আটটি শিল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়—
- খাদ্যপণ্য
- টেক্সটাইল
- তৈরি পোশাক
- চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য
- ওষুধ ও ঔষধি রাসায়নিক
- রাবার ও প্লাস্টিক পণ্য
- অ-ধাতব খনিজ পণ্য
- মৌলিক ধাতু
অন্যদিকে, পরিষেবা খাতে অন্তর্ভুক্ত ছিল পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা, স্থল পরিবহন এবং রিয়েল এস্টেট কার্যক্রম।
নীতি পরামর্শ ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ
পাটোয়ারী সুপারিশ করেন, শিল্পের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা, আর্থিক খাতের সংস্কার, ঋণ বিতরণ সহজ করা, সুদের হার কমানো, ভ্যাট ও আমদানি–রপ্তানি শুল্ক হ্রাস, এবং স্থানীয় সরবরাহ শৃঙ্খল জোরদার করা জরুরি। তিনি আরও বলেন, আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়ন, বাণিজ্যিক অবকাঠামো সম্প্রসারণ এবং রপ্তানি বাজার বৈচিত্র্যকরণেও জোর দিতে হবে।
শিল্পনেতা ও বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
ডিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, তৈরি পোশাক খাত অন্য শিল্পগুলোর তুলনায় অতিরিক্ত সুবিধা পায়, যা তুলনামূলক বিশ্লেষণকে জটিল করে তোলে। তিনি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) উন্নয়ন, বাণিজ্য লাইসেন্সের ডিজিটালাইজেশন এবং প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
জাতীয় উৎপাদনশীলতা সংস্থার মহাপরিচালক মো. নুরুল আলম সঠিক তথ্যসংগ্রহের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, কার্যকর নীতি প্রণয়নে সুনির্দিষ্ট তথ্য অপরিহার্য।
ডিসিসিআই-এর আরও এক সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ পরিসংখ্যানভিত্তিক বিশ্লেষণকে ভবিষ্যৎ গবেষণার জন্য সহায়ক বলে মন্তব্য করেন।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ নেসার আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ এরই মধ্যে এলডিসি–পূর্ব সুবিধার অনেকটাই ব্যবহার শেষ করেছে; তাই এখন গবেষণার পদ্ধতি আরও নিখুঁত ও বাস্তবমুখী হওয়া জরুরি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি শাখার মহাপরিচালক সৈয়দ মুনতাসির মামুন পরামর্শ দেন, কৃষি খাতকেও এই বিশ্লেষণে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যাতে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক চিত্র আরও স্পষ্ট হয়।
অন্যদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের সিইও (অতিরিক্ত দায়িত্বে) সৈয়দ সাইফ উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ডিসিসিআই-এর তথ্য ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানিক ডেটাসেটের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সমন্বয় প্রয়োজন। পাশাপাশি হালকা প্রকৌশল ও পরিষেবা খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
নীতিনির্ধারণে নতুন উপাত্তের ভূমিকা
ডিসিসিআই জানায়, তাদের তৈরি ইকোনমিক পজিশন ইনডেক্স (EPI) হবে এক গুরুত্বপূর্ণ নীতিসহায়ক টুল, যা উৎপাদন, বিক্রয়, অর্ডার, রপ্তানি, কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের প্রবণতা বিশ্লেষণ করে নীতিনির্ধারকদের প্রমাণভিত্তিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।
# ঢাকা_অর্থনীতি, ডিসিসিআই, উৎপাদন_খাত, পরিষেবা_খাত, অর্থনৈতিক_নীতি, রপ্তানি, এসএমই_উন্নয়ন, বাংলাদেশ_শিল্প
সারাক্ষণ রিপোর্ট 

















