এশীয় শেয়ারবাজারে স্থিতি, বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি প্রযুক্তি খাতে
সপ্তাহের শুরুতে জোরালো উত্থানের পর মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) এশিয়ার শেয়ারবাজার কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় ছিল। বিশ্ব বাণিজ্যে উত্তেজনা কমার আশায় বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বজায় থাকলেও, বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর আসন্ন আয় প্রতিবেদন ঘিরে বাজারে সতর্কতার আবহ তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় সম্ভাব্য সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা বন্ডের দাম বাড়িয়েছে এবং ডলারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। বিনিয়োগকারীরা এখন অপেক্ষা করছেন, ফেডারেল রিজার্ভ (Fed) কতটা ‘সহনশীল’ নীতির ইঙ্গিত দেয় তা দেখতে।
সোনার বাজারে রেকর্ড উচ্চতা
পাঁচ দিনে ৯ শতাংশ দামের পতনের পরও নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে পরিচিত সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৪,০০০ ডলারের কাছাকাছি অবস্থান করছে। মূলধন-নির্ভর বিনিয়োগকারীরা বড় পরিমাণে বিক্রি করায়, বাজারে ওঠানামা বেড়েছে।
ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ নিল শিয়ারিং বলেন, “প্রাথমিকভাবে মৌলিক কারণেই সোনার দাম বাড়ছিল, কিন্তু এখন খুচরা বিনিয়োগকারীদের আগ্রহই দামকে প্রভাবিত করছে।” তিনি আরও জানান, “বাস্তব মানে রেকর্ড পর্যায়ে থাকার কারণে আগামী বছরগুলোতে দাম কমার আশঙ্কাই বেশি।”
ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের নতুন পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৬ সালের শেষে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩,৫০০ ডলারে নেমে আসতে পারে।
এশীয় বাজারে মুনাফা তোলা
জাপানের নিক্কেই সূচক সোমবারের ২.৫ শতাংশ বৃদ্ধির পর মঙ্গলবার ০.২ শতাংশ কমে বন্ধ হয়। চলতি বছরে সূচকটি ইতিমধ্যে প্রায় ২৭ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি সূচক ১.২ শতাংশ কমেছে, তবে আগের দিনের বড় উত্থান সামগ্রিকভাবে বাজারে স্থিতি এনেছে। তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফল দেখিয়েছে—মূলত ভোক্তা ব্যয় ও রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে।
চীনের শাংহাই কম্পোজিট সূচক ৪,০০০ পয়েন্ট অতিক্রম করেছে, যা ২০১৫ সালের পর প্রথমবারের মতো। অপরদিকে, এমএসসিআই এশিয়া-প্যাসিফিক সূচক (জাপান বাদে) সামান্য ০.২ শতাংশ কমেছে।
জাপানের নতুন নেতৃত্ব ও যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ চুক্তি
জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি টোকিওতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প–এর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, বাণিজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা হয়—যা বছরের শুরুর দিকে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
পশ্চিমা বাজারে মিশ্র প্রবণতা
ইউরোপীয় বাজারে ইউরোস্টক্স ৫০ এবং ডিএএক্স ফিউচারস ০.২ শতাংশ কমেছে, এফটিএসই ফিউচারস প্রায় অপরিবর্তিত ছিল। অপরদিকে, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ও নাসডাক ফিউচারস সামান্য পরিবর্তন নিয়ে প্রায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে স্থিত ছিল।
ওয়াল স্ট্রিটে প্রযুক্তি শেয়ারগুলোর উত্থান অব্যাহত ছিল—বিশেষ করে কোয়ালকম ১১ শতাংশ বেড়েছে, কারণ প্রতিষ্ঠানটি ডেটা সেন্টারের জন্য দুটি নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চিপ উন্মোচন করেছে।
‘ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন’ ও প্রযুক্তি আয়ের প্রত্যাশা
এই সপ্তাহে বাজারের নজর রয়েছে তথাকথিত “ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন” প্রযুক্তি জায়ান্টদের ওপর—মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট, অ্যাপল, অ্যামাজন, মেটা প্ল্যাটফর্মস–এর আয়ের প্রতিবেদন নিয়ে। বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারমূল্যের উচ্চ অবস্থান ধরে রাখতে হলে এসব কোম্পানির শক্তিশালী ফলাফল দেখানো জরুরি।
অন্যদিকে, খরচ কমাতে অ্যামাজন প্রায় ৩০,০০০ করপোরেট কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করছে, বলে সূত্র জানিয়েছে।
সুদের হার ও বন্ড বাজারের প্রতীক্ষা
বন্ড বাজারে ১০ বছরের মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের ফলন ৩.৯৮ শতাংশে স্থিত ছিল। বুধবারের ফেড সভায় ০.২৫ শতাংশ সুদ কমানোর সিদ্ধান্তকে প্রায় নিশ্চিত ধরা হচ্ছে। তবে মূল মনোযোগ এখন ডিসেম্বরের আরেক দফা হার কমানোর ইঙ্গিত আসে কি না, সেদিকে।
ফেডের ব্যালান্সশিট সংকোচন বা ‘কোয়ান্টিটেটিভ টাইটেনিং (QT)’–এর অবসান ঘটার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে।
কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এই সপ্তাহে সুদ কমাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক (ECB) ও ব্যাংক অব জাপান (BOJ) আপাতত স্থিতিশীল অবস্থানে থাকার সম্ভাবনা বেশি।
মুদ্রা ও পণ্যের বাজারে পরিবর্তন
ফেডের ‘সহনশীল’ নীতির প্রত্যাশায় মার্কিন ডলার ০.৪ শতাংশ কমে ১৫২.২০ ইয়েনে নেমে এসেছে। ইউরো সামান্য বেড়ে ১.১৬৬০ ডলারে লেনদেন হলেও ১.১৭২৮ ডলারে প্রতিরোধের মুখে আছে।
ডলার সূচক ০.৩ শতাংশ কমে ৯৮.৬৪৩–এ দাঁড়িয়েছে।

এদিকে, পণ্যের বাজারে তেলের দাম সামান্য কমেছে। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওপেক+–এর আটটি দেশ ডিসেম্বরের বৈঠকে তেল উৎপাদন সামান্য বাড়ানোর দিকে ঝুঁকছে। সৌদি আরব বাজার অংশ পুনরুদ্ধারে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ০.২ শতাংশ কমে ৬৫.৫১ ডলারে এবং মার্কিন ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬১.২০ ডলারে দাঁড়ায়।
সারসংক্ষেপ
- প্রযুক্তি খাতের আয়ের প্রত্যাশায় এশীয় বাজারে স্থিতিশীলতা।
- ফেড ও কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদ কমানোর সম্ভাবনায় বন্ড শক্তিশালী, ডলার দুর্বল।
- সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৪,০০০ ডলারে, তবে পতনের আশঙ্কা বাড়ছে।
- অ্যামাজনের বড় চাকরি ছাঁটাই পরিকল্পনা প্রযুক্তি খাতে আলোচনায়।
- ওপেক+ ডিসেম্বর বৈঠকে তেল উৎপাদন বাড়ানোর ইঙ্গিতে বাজারে সামান্য চাপ।
#বৈশ্বিক_বাজার /# প্রযুক্তি_#শেয়ার / #সোনার_দাম / #ওপেক / #ডলার / #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 




















