বাংলাদেশের পুঁজিবাজার গভীর করা ও ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের (এসএমই) অর্থায়নের পথ সহজ করতে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে। এসএমই তালিকাভুক্তি ত্বরান্বিত, বিনিয়োগকারী আকর্ষণ এবং উদ্ভাবনী আর্থিক পণ্য প্রবর্তনই এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
চুক্তির প্রেক্ষাপট
ডিসিসিআই–ডিএসই বোর্ডের ১৬ সেপ্টেম্বর গুলশানে ডিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের ধারাবাহিকতায় এ সমঝোতা হয়। উভয় পক্ষই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা ও টেকসই পুঁজিবাজার গঠনে যৌথভাবে কাজের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।
কারা সই করেছেন
ডিএসইর চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম ডিএসইর পক্ষে এবং ডিসিসিআইর সভাপতি তাসকীন আহমেদ ডিসিসিআইর পক্ষে এমওইউতে সই করেন।
ডিএসইর বার্তা: বাজার উন্নয়নের নতুন অধ্যায়
ডিএসইর প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত এমডি মোহাম্মদ আসাদুর রহমান বলেন, এ এমওইউ পুঁজিবাজার উন্নয়নে যৌথ প্রচেষ্টার নতুন অধ্যায়। ডিএসইর একটি বিশেষায়িত দল ডিসিসিআইয়ের সাথে হাতে–হাত মিলিয়ে এসএমইকে বাজারে সংযুক্ত করতে কাজ করবে; শুরুতে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হবে এবং উদ্যোক্তাদের তালিকাভুক্তির সহায়তা দেওয়া হবে। তাঁর প্রত্যাশা, এ যৌথ উদ্যোগ দুই প্রতিষ্ঠানের জন্য ইতিবাচক ফল আনবে এবং বাজার আরও প্রাণবন্ত হবে।
ডিসিসিআইর বার্তা: ব্যাঙ্কনির্ভরতা কমিয়ে পুঁজিবাজারে গতি
তাসকীন আহমেদ বলেন, এ চুক্তি কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়; বেসরকারি খাতকে গতিশীল করা, জ্ঞান ও উদ্ভাবন বিনিময় এবং যৌথ গবেষণার মাধ্যমে অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের প্রতিশ্রুতি। তিনি উল্লেখ করেন, অর্থনীতি এখনো অতিরিক্তভাবে ব্যাংকনির্ভর; তাই পুঁজিবাজার উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করার সময় এসেছে। সমন্বিত প্রচেষ্টায় বেসরকারি খাত ও পুঁজিবাজার একে অপরকে পরিপূরক এমন একটি শক্ত ভিত্তি গড়ে উঠবে বলে তিনি আশাবাদী। ডিসিসিআই দীর্ঘদিন ধরে এমএসএমই উন্নয়ন ও গবেষণায় কাজ করছে; এ এমওইউ এসএমইদের জন্য পুঁজিবাজারভিত্তিক অর্থায়নের নতুন সুযোগ তৈরি করবে এবং জ্ঞান ভাগাভাগি, সচেতনতা বৃদ্ধি ও গবেষণার মাধ্যমে তাদের বাজার–অংশগ্রহণ বাড়ানো হবে।
পুঁজিবাজারের গভীরতা বাড়ানোর প্রয়োজন
ডিএসই চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য ব্যাংকের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার ফলে পুঁজিবাজার এখনো জাতীয় অর্থনীতির প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি; এ নির্ভরতা ব্যাংক ও পুঁজিবাজার—দুই খাতের টেকসই উন্নয়নেই বাধা। তাই তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ও গুণগত মান বাড়ানো, ডেরিভেটিভসসহ নতুন বিনিয়োগপণ্য চালু এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও উচ্চ মূলধনী বিনিয়োগকারীদের সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে বাজারের গভীরতা বাড়াতে হবে।
গ্রাহককেন্দ্রিক ডিএসই: প্রযুক্তি সমন্বয়ে জোর
ডিএসই নিজেকে গ্রাহককেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তুলে ধরে জানায়, বিনিয়োগকারী, তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান, ইস্যু ম্যানেজার ও ফান্ড ম্যানেজারসহ সব স্টেকহোল্ডারের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা ও প্রযুক্তিগত সমন্বয় অপরিহার্য। কার্যকর সংযোগ নিশ্চিত করতে ডিএসই একটি সমন্বিত প্রযুক্তি–ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার কাজ করছে।
ডিসিসিআই–ডিএসই সহযোগিতার নতুন দিগন্ত
ডিসিসিআইয়ের আন্তরিক সহযোগিতার প্রশংসা জানিয়ে ডিএসই বলেছে, এ এমওইউ দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত খুলবে। অংশীদারদের আস্থা, সহযোগিতা ও অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে সামনে এগিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিকল্প লেনদেন বোর্ড (এটিবি) সম্পর্কে সচেতনতা
ডিএসই তাদের বিকল্প লেনদেন বোর্ড (এটিবি) সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতেও কাজ করবে, যাতে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানিগুলো স্বচ্ছ ও দক্ষ পদ্ধতিতে শেয়ার হস্তান্তর ও লেনদেন করতে পারে।
এ এমওইউর মাধ্যমে এসএমই তালিকাভুক্তি, বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ, নতুন আর্থিক পণ্য, প্রযুক্তিগত সমন্বয় এবং বাজারের গভীরতা—সবকিছুতেই সমন্বিত অগ্রগতি আনার একটি রূপরেখা নির্ধারিত হলো। লক্ষ্য একটাই: টেকসই, প্রাণবন্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পুঁজিবাজার গড়ে তোলা, যা বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধিকে শক্ত ভিত্তি দেবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















