ব্যথাহীন কিন্তু ভয়ংকর বিপদ
চোখে হঠাৎ দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন টের পেলে অবিলম্বে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের, উচ্চ মায়োপিয়া (দূরদৃষ্টি দুর্বলতা) আছে এমন ব্যক্তিদের, কিংবা যাদের পারিবারিকভাবে চোখের সমস্যার ইতিহাস রয়েছে—তাদের ক্ষেত্রে ‘রেটিনাল ডিটাচমেন্ট’ বা রেটিনা আলাদা হয়ে যাওয়া ঝুঁকি অনেক বেশি।
রেটিনা হচ্ছে চোখের পেছনের পাতলা টিস্যু স্তর, যা আলোর সংকেত গ্রহণ করে মস্তিষ্কে পাঠায়। যখন এটি নিজের স্বাভাবিক অবস্থান থেকে আলাদা হয়ে যায়, তখনই ঘটে এই রোগ। এটি কোনো ব্যথা দেয় না, কিন্তু চিকিৎসা না নিলে স্থায়ী অন্ধত্বের ঝুঁকি তৈরি করে।
সতর্কবার্তা: ভাসমান ছায়া ও আলোর ঝলকানি
এই অবস্থার প্রথম সতর্ক লক্ষণ হলো চোখে ভাসমান ছোট ছোট দাগ, জালের মতো ছায়া বা মশার মতো দাগ দেখা দেওয়া। সানওয়ে মেডিকেল সেন্টারের চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও ভিট্রিওরেটিনাল সার্জন ডা. পেহ খাইক কি জানান, যদি হঠাৎ এসব ভাসমান দাগ বা আলোর ঝলকানি বাড়তে থাকে, বিশেষ করে দৃষ্টির প্রান্তে, তাহলে তা বিপদের ইঙ্গিত।

আরেকটি বড় সতর্ক সংকেত হলো দৃষ্টির এক পাশে ‘পর্দা’ নামার মতো ছায়া পড়া—যা রেটিনা আলাদা হতে শুরু করার ইঙ্গিত দেয়।
ডা. পেহ বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত ম্যাকুলা (রেটিনার কেন্দ্রীয় অংশ) অক্ষত থাকে, রোগী প্রায় স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ধরে রাখতে পারেন। কিন্তু একবার ম্যাকুলা আলাদা হয়ে গেলে সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।”
কারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে
সানওয়ে মেডিকেল সেন্টারের পরামর্শক চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও ভিট্রিওরেটিনাল সার্জন ডা. সেলভা রাজা ভেঙ্গাদাসালাম বলেন, “রেটিনাল ডিটাচমেন্ট অনেকের ধারণার চেয়ে বেশি সাধারণ—প্রতি এক লাখে প্রায় চার থেকে সাতজনের ক্ষেত্রে দেখা যায়। এটি খাদ্যাভ্যাস বা জীবনযাত্রার কারণে নয়, বরং চোখের গঠনতান্ত্রিক কারণে হয়ে থাকে।”
সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন ৪০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিরা, উচ্চ মায়োপিয়া আছে এমন রোগীরা, যাদের পরিবারের কারো রেটিনার সমস্যা রয়েছে, বা যাদের চোখে আঘাত বা পূর্বে অস্ত্রোপচার হয়েছে। ডা. সেলভার পর্যবেক্ষণে, পুরুষদের মধ্যে এ রোগ কিছুটা বেশি দেখা যায় এবং চীনা জনগোষ্ঠীর মধ্যে মায়োপিয়ার হার বেশি হওয়ায় তাদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে বেশি।
দ্রুত শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা জরুরি
ফ্লোটার ও ফ্ল্যাশের মতো লক্ষণ অনেক সময় স্বাভাবিক হলেও মাত্র পাঁচ থেকে দশ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রকৃত রেটিনাল ছিদ্র থাকে। তাই নিশ্চিত হতে ‘রেটিনা বিশেষজ্ঞ’ দ্বারা ডাইলেটেড চোখ পরীক্ষা করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডা. সেলভা পরামর্শ দেন, প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর অন্তত দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত নিয়মিত ফলোআপ করা উচিত। প্রথম পরীক্ষায় হয়তো ছিদ্র ধরা নাও পড়তে পারে, কিন্তু এই সময়টিতেই চোখের ভেতরের তরল পদার্থ রেটিনার ওপর টান সৃষ্টি করে ছিদ্র ঘটাতে পারে।

আধুনিক চিকিৎসা: লেজার ও মাইক্রোসার্জারি
রেটিনার ছিদ্র প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ‘ফোটোকোয়াগুলেশন’ নামের লেজার চিকিৎসায় সহজেই বন্ধ করা সম্ভব। তবে রেটিনা সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেলে অস্ত্রোপচারই একমাত্র উপায়। রোগীর অবস্থার ওপর নির্ভর করে ‘ভিট্রেকটমি’ বা ‘স্ক্লেরাল বাকলিং’ নামে মাইক্রোসার্জারি পদ্ধতিতে রেটিনা পুনরায় স্থাপন করা হয়। আধুনিক প্রযুক্তির কারণে এখন এসব অস্ত্রোপচার আগের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ ও সফল।
প্রতিরোধ নয়, সচেতনতাই রক্ষা
রেটিনাল ডিটাচমেন্ট প্রতিরোধে কোনো ওষুধ বা ভিটামিন কার্যকর নয়। তবে সময়মতো শনাক্ত ও চিকিৎসা করলেই দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করা যায়।
ডা. পেহ বলেন, “যত দ্রুত রেটিনার ছিদ্র বা আলাদা হয়ে যাওয়া শনাক্ত করা যায়, তত বেশি সম্ভাবনা থাকে চোখের দৃষ্টি পুরোপুরি সংরক্ষণের।”
ডা. সেলভা আরও যোগ করেন, “এই অস্ত্রোপচারের লক্ষ্য দৃষ্টি উন্নত করা নয়, বরং দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করা। এটি সময়সীমাবদ্ধ রোগ—তাই দেরি না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি।”
# রেটিনাল_ডিটাচমেন্ট, #চোখের_রোগ,# স্বাস্থ্য_সচেতনতা, #দৃষ্টিশক্তি, #চক্ষু_চিকিৎসা, #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















