কানাডায় ভারতীয়দের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে বসবাসরত ভারতীয়দের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের নতুন হাইকমিশনার দিনেশ কে. পট্টনায়ক। তিনি বলেন, কানাডায় এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যেখানে ভারতীয় নাগরিকরা নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন না।
নিরাপত্তাহীনতার কথা সরাসরি বললেন পট্টনায়ক
সম্প্রতি সিটিভি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দিনেশ কে. পট্টনায়ক বলেন, “কানাডা এই পরিস্থিতিকে ভারতের সমস্যা হিসেবে দেখতে পারে না। এটি কানাডার নিজস্ব সমস্যা, কারণ এই পরিস্থিতি কানাডার নাগরিকদেরই একটি অংশ তৈরি করেছে।”
তিনি আরও বলেন, একজন হাইকমিশনার হিসেবে নিজের নিরাপত্তার প্রয়োজন পড়া অস্বাভাবিক এবং এটি পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরে।
‘সন্ত্রাসী চক্র’ ও আইনের শাসনের প্রশ্ন
প্রো–খালিস্তান চরমপন্থার নাম না করে পট্টনায়ক উল্লেখ করেন, “যখন একটি গোষ্ঠী মানুষকে ভয় দেখিয়ে সম্পর্ককে জিম্মি করে রাখে, তখন প্রশ্ন ওঠে—আমরা কীভাবে তাদের মোকাবিলা করব? আইন–শৃঙ্খলার এই পরিস্থিতিতে সমাধান কীভাবে সম্ভব?”
কানাডায় ভারতীয়দের বহিষ্কার রেকর্ড পর্যায়ে
কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি (CBSA)–এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মোট ১, ৯৯৭ জন ভারতীয়কে দেশ থেকে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হয়—যা ২০১৯ সালের ৬২৫ জনের তুলনায় তিনগুণেরও বেশি।
চলতি বছর ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ইতিমধ্যে ১, ৮৯১ জন ভারতীয়কে ফেরত পাঠানো হয়েছে, যা ইঙ্গিত করছে যে বছরের শেষে এই সংখ্যা ২০২৪ সালের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
কড়াকড়ি নীতিতে এগোচ্ছে কানাডা
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি সম্প্রতি জানিয়েছেন, বিদেশি অপরাধীদের দ্রুত বহিষ্কারের প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত করা হবে।
তিনি বলেন, “সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো—হ্যাঁ, আমরা এই প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও আরও কার্যকর করতে চাই। এটি আমাদের বৃহত্তর অভিবাসন সংস্কারের অংশ।”
বর্তমানে চলমান ‘রিমুভাল ইন প্রগ্রেস’ তালিকায় ভারতীয়রাই শীর্ষে রয়েছেন—৬, ৮৩৭টি মামলার মধ্যে ভারতীয়দের পরেই রয়েছে ৫, ১৭০ জন মেক্সিকান ও ১, ৭৩৪ জন মার্কিন নাগরিক। এছাড়া আশ্রয়প্রার্থী হিসেবেও ভারতীয়রাই সবচেয়ে বড় গোষ্ঠী।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে স্বাভাবিকতার ইঙ্গিত
দিনেশ কে. পট্টনায়ক বলেন, কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। “দুই বড় দেশকে দীর্ঘ সময় আলাদা রাখা যায় না। তাই সম্পর্ক পুনরুদ্ধার অবশ্যম্ভাবী,” মন্তব্য করেন তিনি।
অতীতের টানাপোড়েন ও নতুন অধ্যায়
২০২৩ সালে খালিস্তানি নেতা হারদীপ নিজ্জারের হত্যাকাণ্ডে ভারতের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সেই অভিযোগের পর ভারত–কানাডা সম্পর্ক প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে।
তবে পট্টনায়ক বলেন, “কোনও এক ব্যক্তির কারণে সম্পর্ক ধ্বংস হয় না; এর পেছনে একটি সমগ্র প্রক্রিয়া কাজ করে।”
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে ২০২৫ সালের আগস্টে ভারত ও কানাডা উভয় দেশেই নতুন হাইকমিশনার হিসেবে দিনেশ কে. পট্টনায়ক ও ক্রিস্টোফার কুটারকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের এই ইস্যুটি এখন ভারত–কানাডা সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পট্টনায়কের বক্তব্য শুধু উদ্বেগ নয়, বরং দুই দেশের জন্যই একটি সতর্ক সংকেত—যেখানে মানবিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য খোঁজা, এখন সময়ের দাবি।
#ভারত–কানাডা_সম্পর্ক #দিনেশ_কে_#পট্টনায়ক #কানাডায়_#ভারতীয় #অভিবাসন_নীতি #জোরপূর্বক_বহিষ্কার #মার্ক_কার্নি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















