ভর্তি প্রতিযোগিতার নতুন বাস্তবতা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে হাইস্কুলে ভর্তি এখন এক ভয়াবহ প্রতিযোগিতায় পরিণত হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ বাড়লেও আবেদন প্রক্রিয়া এতটাই জটিল যে অনেক পরিবার এখন পেশাদার পরামর্শকের সহায়তা নিচ্ছে। কেউ কেউ একবারের সেবার জন্য ঘণ্টায় ২০০ ডলার পর্যন্ত দিচ্ছে, আবার কেউ পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য ৫,০০০ থেকে ১৫,০০০ ডলার পর্যন্ত ব্যয় করছে।
স্কুলে ভর্তির জন্য “চুক্তি” মনোভাব
লস অ্যাঞ্জেলেসের স্কুল পরামর্শক স্যান্ডি আইগেস বলেন, অনেক অভিভাবক ভর্তির আগে জানতে চান কত টাকা দান করলে আসন নিশ্চিত হবে, বা কোনো প্রভাবশালী বন্ধুর মাধ্যমে সুপারিশ করলে লাভ হবে কি না। কেউ কেউ এমন আচরণ করেন যে, পরামর্শকেরা এখন ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কাজের চুক্তিতে অশালীন ভাষা ব্যবহারে সম্পর্ক বাতিলের ধারা যোগ করেছেন।
“আমি কথা ঘুরিয়ে বলি না,” বলেন আইগেস। “ওরাই আমাকে এজন্য টাকা দেয়—যাতে তারা সফলভাবে এই প্রক্রিয়া পার হতে পারে।”
টিউশন ফি’র সঙ্গে বাড়তি খরচ
আইগেস জানান, লস অ্যাঞ্জেলেসে স্কুল পরামর্শকরা সাধারণত ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ ডলার পর্যন্ত নেন, যা ২৫,০০০ থেকে ৫০,০০০ ডলারের বার্ষিক টিউশন ফি ছাড়াও আলাদা খরচ।

নিউইয়র্ক শহরে প্রতিযোগিতা সবচেয়ে বেশি। শিক্ষার্থীদের ভর্তি নির্ধারণে সেখানে লটারির পাশাপাশি চার ধরনের স্কুল—লটারি, চার্টার, টেস্টভিত্তিক স্পেশাল স্কুল ও অডিশনভিত্তিক আর্টস স্কুল—ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এর বাইরে বেসরকারি স্কুলগুলো আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক।
পরামর্শকদের বিশাল বাজার
‘অ্যাডমিট এনওয়াই’ নামের প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হুইটনি শাশো বলেন, “হাইস্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়াটি এখন কলেজের মতোই জটিল মনে হয়।” তাঁর প্রতিষ্ঠানে প্যাকেজের দাম কয়েক হাজার থেকে শুরু করে মাঝারি দশ হাজার ডলার পর্যন্ত হয়।
বেসরকারি স্কুলে ভর্তি চাওয়া পরিবারগুলোকে শিশুর বার্ষিক টিউশন ফি’র ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত খরচের প্রস্তুতি নিতে হয়।
এক ঘণ্টায় সমাধান পাওয়া পরিবার
ব্রুকলিনের পরামর্শক জয়েস সুফলিটার সহায়তায় লরি ও স্টিফেন ম্যাকার্থি তাঁদের ছেলে টমাসের স্কুল বাছাই করেন। লরি বলেন, “আমরা নিজেরা ছয় মাস ব্যয় করলেও এত তথ্য পেতাম না। মাত্র দুই ঘণ্টার অনলাইন সেশনে তিনি আমাদের ১৫-২০টি সম্ভাব্য স্কুলের নাম জানান।” তাঁরা ৫৬০ ডলার পরিশোধ করেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁদের ছেলে রেজিস হাইস্কুলে ভর্তি হয়।
পরীক্ষার প্রস্তুতিতেও নতুন প্রযুক্তি

নিউইয়র্কের টেস্ট-প্রস্তুতি প্রতিষ্ঠান কার্ভব্রেকার্সের প্রতিষ্ঠাতা নিকোলাস লাপোমা বলেন, “২০১১ সালে আমি যখন টিউটরিং শুরু করি, বিষয়টা সহজ ছিল। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অনলাইন প্র্যাকটিস টেস্টের ফল বিশ্লেষণ মিনিটেই পাওয়া যায়।”
ক্লিভল্যান্ডের এ্যামি সিলির প্রতিষ্ঠান কোভিড-পরবর্তী সময়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য কোর্স বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, “কোভিড অনেক অভিভাবককে চোখ খুলে দিয়েছে। স্বাধীন স্কুলগুলোতে আগ্রহ বেড়েছে।” ২০২০ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠানে ১০০ শিক্ষার্থী থাকলেও এখন সংখ্যা প্রায় ৪০০।
শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন ও পরিসংখ্যান
শিক্ষা নীতি সংস্থা এডচয়েসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ভাউচার ব্যবহারের হার যুক্তরাষ্ট্রে ২৫ শতাংশ বেড়েছে। বেসরকারি স্কুলের প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণও বেড়েছে—২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের তুলনায় ৮.৬ শতাংশ বৃদ্ধি।
পরিবারের মানসিক শান্তির জন্য পরামর্শ
ওয়াশিংটন রাজ্যের টিনা সিংহ বলেন, “আমার ভারতীয়-মায়ের মানসিকতা র্যাংকিং আর মর্যাদার দিকে টানে, কিন্তু আমার মেয়ে শুধু পড়াশোনায় মনোযোগী পরিবেশ চেয়েছিল।” তিনি ৩,০০০ ডলার দিয়ে স্থানীয় পরামর্শক ক্রিস্টি হেভেনকে নিয়োগ দেন।
হেভেন বলেন, “অভিভাবকরা কীভাবে সন্তানের গুণাবলি সঠিকভাবে উপস্থাপন করবেন, সেটিই মূল বিষয়। স্কুলগুলো যদি মনে করে আপনি নিজের সন্তানকেই চেনেন না, তাহলে তারা আপনাকে বিশ্বাস করবে না।”
ব্র্যান্ড নয়, উপযুক্ত শিক্ষার পথে
পরামর্শকরা বলেন, সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো অভিভাবকদের বোঝানো যে ‘বিখ্যাত’ স্কুলেই সন্তানের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে না। হুইটনি শাশো বলেন, “এখন অনেক অভিভাবক মনে করেন হাইস্কুলই সন্তানের ভবিষ্যতের পথ নির্ধারণ করে দেবে—স্কুলের জন্যও, জীবনের জন্যও।”
#হাইস্কুল_ভর্তি #আমেরিকান_শিক্ষা #শিক্ষা_পরামর্শক #টিউশন #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















